ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সভরেন ওয়েলথ ফান্ড

প্রকাশিত: ২১:১৫, ১৫ জুলাই ২০২০

সভরেন ওয়েলথ ফান্ড

একনেক বৈঠকে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবতে বলেছিলেন সংশ্লিষ্টদের। বলতেই হয় যে, এটি একটি নতুন চিন্তা, নতুন ভাবনা। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ উন্নয়নশীল দেশ হলেও বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনে ঋণ নিতে হয় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে। তবে পদ্মা সেতুতে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রতিশ্রুত ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বাংলাদেশ বিদেশী ঋণ নির্ভরতা কমাতে অনেকাংশে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বউদ্যোগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে আশাব্যঞ্জক সাফল্য অর্জনের পর আস্তে-ধীরে হলেও প্রতিবছর জাতীয় বাজেট ঘোষণাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নেও কমিয়ে আনা হচ্ছে বিদেশী ঋণ নির্ভরতা। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ঋণের সুদহার কম হলেও শেষ পর্যন্ত তা বিদেশী ঋণই এবং নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধসাপেক্ষ। অন্যদিকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে তা সরকারের পরিচালন ব্যয়সহ প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ মেটানো হলে একদিকে যেমন দেশের টাকা দেশেই থেকে যায়, অন্যদিকে লভাংশও থাকে। অনেকটা এই চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব, যা নিয়ে কাজ করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্টরা। আর এই প্রেক্ষাপটেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে সভেরন ওয়েলথ ফান্ড বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের প্রচেষ্টা চলছে। অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি ভাল প্রস্তাব। কেননা, রিজার্ভের অর্থ অলস পড়ে থাকে। এ থেকে তিন-চার মাসের আমদানি ব্যয় রেখে বাকিটা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা ব্যবহার করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে, যাতে অপচয়-দুর্নীতি না হয় এবং অর্জন হয় লভ্যাংশ। মোটকথা, তহবিলের অর্থ ফেরত আসতে হবে অবশ্যই। কেননা এটি জনগণের টাকা। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলা, যা একটি রেকর্ড করোনাকালেও। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রিজার্ভ। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর এই দুঃসময়েও এটি একটি অনন্য অর্জন বৈকি। বর্তমান ক্রান্তিকাল তথা দুঃসময়ে বাংলাদেশের এই রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই স্থান করে দিয়েছে বাংলাদেশকে। তদুপরি এই পরিমাণ রিজার্ভ পাকিস্তানের দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় ধরে এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে অন্তত নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবে রিজার্ভ ধরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাজার থেকে আরও ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়াতে হবে, যাতে করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তা কাজে লাগানো যায়। তাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। সতর্ক থাকতে হবে মুদ্রার মান সম্পর্কেও। গ্রামীণ অর্থনীতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতি যাতে শক্তিশালী হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রফতানি বৃদ্ধিসহ রেমিটেন্স প্রবাহ যাতে অব্যাহত থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কর্মসংস্থানের ওপর।
×