ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সগিরা মোর্শেদ হত্যা ॥ জামিন পাননি আসামি মারুফ

প্রকাশিত: ১৬:১১, ১৪ জুলাই ২০২০

সগিরা মোর্শেদ হত্যা ॥ জামিন পাননি আসামি মারুফ

অনলাইন রিপোর্টার ॥ তিন দশক আগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যাকাণ্ড মামলার আসমি মারুফ রেজাকে জামিন দেয়নি হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তিতে মঙ্গলবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন না দিয়ে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছে। জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আরিফুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা আদালতে জামিনের আপত্তি জানিয়ে বলেছি, এই হত্যকাণ্ডের বিষয়ে মারুফ রেজাসহ বাকি চার আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে। এই মারুফ রেজাই সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাছাড়া মারুফ রেজাসহ অন্যান্য আসামিদের প্রভাবেই প্রায় ৩০ বছর মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল। পরে আদালত জামিন না দিয়ে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে উপস্থাপনের জন্য আদেশ দেন। তিন দশক আগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যাকাণ্ডে তার ভাসুর ও জাসহ চারজনকে আসামি করে গত ১৬ জানুয়ারি অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রটি ওইদিনই আদালতে জমা দেওয়া হয়। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছিলেন। আসামিরা হলেন- সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও মারুফ রেজা (৫৯)। আসামিরা সবাই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে রিকশায় করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে যাওয়া সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার পর হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলার কথা বলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ রেজা। আবাসন ব্যবসায়ী ও বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে। ওই সময়ই তিনি গ্রেফতার হলেও তার নাম বাদ দিয়ে মন্টু নামে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। এরপর বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্যে মারুফ রেজার প্রসঙ্গ উঠে আসায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। কিন্তু উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলা আটকে যায়। মারুফের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। পরের বছর ২৭ আগস্ট জারি করা ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারকাজ স্থগিত করে আরেকটি আদেশ দেয় হাইকোর্ট। ২৮ বছর আগের মারুফের ওই আবেদন গত বছর ২৬ জুন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমে মামলার বাদী সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পিবিআই। অনেক চেষ্টার পর বের করা হয় সগিরাকে বহনকারী সেদিনের যুবক রিকশাচালককে। তার মাধ্যমে হত্যাকারীদের একজন ডা. হাসানের শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ানকে শনাক্তের পর গত বছর ১০ নবেম্বর রামপুরা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাকি তিনজনকেও গ্রেফতার করা হয়। পিবিআই গত বছরের ১৭ জুলাই মামলাটি তদন্ত শুরু করে। মামলার কিছু সবল দিক ও কিছু দুর্বল দিক পাওয়া গেছে। এক হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে ৫৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। গত ৯ মার্চ অভিযোগপত্র আম‌লে নি‌য়ে একই আদালত অভিযোগ গঠন শুনা‌নির জন‌্য ১৫ মার্চ দিন ঠিক ক‌রে‌ছি‌ল। কিন্তু ওইদিন আসা‌মিপক্ষ সময় আবেদন করায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কা‌য়েশ ১৬ এপ্রিল শুনা‌নির তারিখ রেখেছিলেন। এর মধ্যে করোনা ভাইরাস মাহামারির কারণে আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর শুনানি হয়নি।
×