ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শনাক্ত বিবেচনায় করোনায় সুস্থতার হার ৫২.৬১ শতাংশ

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৪ জুলাই ২০২০

শনাক্ত বিবেচনায় করোনায় সুস্থতার হার ৫২.৬১ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৩৯ জনের মৃত্যু এবং শনাক্ত হয়েছেন নতুন ৩০৯৯ করোনা রোগী। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৩৯১ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৪ জনে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া ৪৭০৩ সহ এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ৯৮ হাজার ৩১৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৪২৩টিসহ এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৭। পরীক্ষা বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫২ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত মোট আইসিইউ শয্যার ৫০ শতাংশ খালি রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুুুুুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা এক লাখের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যানে ঢাকা বিভাগ প্রথম ও ময়মনসিংহ বিভাগ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। সারাদেশে করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত মোট সাধারণ শয্যার ১১ হাজার শয্যাই খালি পড়ে আছে, রোগী নেই। ঢাকা শহরেই খালি রয়েছে চার হাজারের বেশি শয্যা। সোমবার দুপুরে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৯ জনের মধ্যে ৩০ পুরুষ এবং ৯ নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৮৯০ এবং নারী ৫০১ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৯ জনের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে একজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন এবং ০ থেকে ১০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে একজন, রংপুর বিভাগে ২ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন, খুলনা বিভাগে ৭ জন এবং বরিশাল বিভাগে ৩ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৪ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৬৫ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৭ হাজার ৩৭১ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৭১৩ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ১৯ হাজার ৮৯৯ জন। আইসোলেশন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ২৭০ জনকে। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইন মিলে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ২ হাজার ৪০১ জনকে। এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৯৬ হাজার ২৫৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ২৭৩ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬২ হাজার ২১১ জন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, সারাদেশে করোনা রোগীর জন্য সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৬৪টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৬৭ জন এবং খালি ১০ হাজার ৭৯৭টি শয্যা। এছাড়া ঢাকা শহরের হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি। সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগী ২ হাজার ৫১ জন। শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ২৫৪টি। নাসিমা সুলতানা জানান, ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা ১৪২টি, ভর্তি আছেন ৮৭ জন, খালি আছে ৫৫টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা ৩৯টি, ভর্তি আছেন ১৯ জন, খালি আছে ২০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা ৬৫৭টি, ভর্তি আছেন ৩১১ জন, খালি আছে ৩৪৬টি বেড। তিনি আরও জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে দেশের অন্যান্য জেলার হাসপাতালে শয্যা আছে ৭ হাজার ৭০২টি। এখানে রোগী ভর্তি আছেন এক হাজার ৮০৫ জন, খালি আছে ৫ হাজার ৮৯৭টি বেড। আইসিইউ আছে ১৯৩টি, রোগী ভর্তি আছেন ৮০ জন এবং খালি আছে ১১৩টি শয্যা। অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, লিঙ্গভেদে শনাক্তের হার পুরুষ ৭১ শতাংশ এবং নারী ২৯ শতাংশ। বয়স বিবেচনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৭ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের ২৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের ৭ শতাংশ এবং ১ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৩ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে বলে স্বীকার করে ব্যাখ্যা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সোমবার হেলথ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা বলেন, আমরা তথ্য বিশ্লেষণে দেখছি, আমাদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এর কারণ হিসেবে অনেক ব্যাখ্যা দেয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, একজনের দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার দরকার হচ্ছে না। সুস্থতা ঘোষণার জন্যও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার দরকার হচ্ছে না। এ জন্য পরীক্ষার সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তাছাড়া মন্ত্রণালয় পরীক্ষা করার জন্য একটি ফি নির্ধারণ করেছে। সে কারণেও কিছুটা কমতে পারে। তাছাড়া মানুষের মধ্যে আতঙ্ক অনেকটাই কমে গেছে। মানুষ অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছে বলা যায়। তারা স্বস্তিতে আছে এবং পরীক্ষা করার বিষয়ে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের যেসব বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেখানে আগে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় নির্দিষ্ট এবং ৩টার পরও অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন নমুনা দেয়ার জন্য। এখন দুপুর ১টার পরই বুথগুলো শূন্য হয়ে যায়। নমুনা পরীক্ষার জন্য কেউ আসে না। নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে মানুষের আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। সে কারণে পরীক্ষাগারে নমুনা আসছে না এবং নমুনা সংগ্রহ কমে গেছে। যাদের নমুনা পরীক্ষা করা দরকার অবশ্যই তাদের বুথে যাওয়া, নমুনা দেয়া এবং পরীক্ষারও আহ্বান জানিয়েছেন নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, দরিদ্রদের জন্য এখনও নমুনা পরীক্ষা ফ্রি। যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নমুনার জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে উল্লেখ আছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নমুনা সংগ্রহ ফ্রি। কাজেই আপনারা সরকারের এই সুবিধা অবশ্যই গ্রহণ করতে পারেন। যাদের দরকার অবশ্যই নমুনা পরীক্ষা করাবেন। করোনা প্রতিরোধের জন্য সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, রোগ প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই সঠিকভাবে সবাই মাস্ক ব্যবহার করবেন, বারবার সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন, সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখবেন এবং জনসমাবেশ এড়িয়ে চলবেন। অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা আরও জানান, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। ১৩ জুলাই পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৯১ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৮৯০ এবং নারী ৫০১ জন। তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের ২৮ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ৭৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ১৬৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৩৪৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৭১৪ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী এক হাজার ৪২ জন। তিনি আরও বলেন, বিভাগীয় মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনুসারে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে এক হাজার ১৯৫ জনের। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২৩ জন, খুলনা বিভাগে ১২৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ১২১ জন, বরিশাল বিভাগে ৮৮ জন, সিলেট বিভাগে ১০৫ জন, রংপুর বিভাগে ৭৫ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়।
×