ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জনকণ্ঠের সঙ্গে মোস্তাফা জব্বার

করোনাপরবর্তী বিশ্বে টিকে থাকাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:২২, ১৪ জুলাই ২০২০

করোনাপরবর্তী বিশ্বে টিকে থাকাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা পরবর্তী বিশ্বে অনিবার্য পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে থাকাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হাতিয়ার হচ্ছে মেধা। যে জাতি যত বেশি মেধাসম্পদ কাজে লাগাতে পারবে চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবে তারা ততটা সফল হবে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম অত্যন্ত মেধাবী। দেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগ তরুণ জনগোষ্ঠী। তারাই আমাদের বড় সম্পদ। এ সম্পদকে ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জনকণ্ঠকে এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, মেধাকে সত্যিকারভাবে কাজে লাগাতে পারলে আগামী দিনে বাংলাদেশের জন্য কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে না। বিদ্যমান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট (জনমিতি) অনুযায়ী ২০৩১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বড় শক্তি। তাদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে সুযোগ কাজে লাগাতে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর অপরিহার্য। স্বাধীনতা অর্জনের ৪৯ বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছর এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছর দেশ তার অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে অভাবনীয় সফলতার মধ্যে এগিয়ে যাবে। বাকি সময়টা জাতি অতিক্রম করেছে পশ্চাৎপদ আর ষড়যন্ত্রের অন্ধকারের মধ্য দিয়ে। করোনা পরিস্থিতিতে পৃথিবীর সকল দেশের মানুষের একই অবস্থা বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত বিশ্ব বিশেষ করে-আমেরিকার নাগরিকরা ঘরে বসে যে ডিজিটাল সুযোগ গ্রহণ করছে আমরাও একই সুবিধা পাচ্ছি। আমাদের এই অর্জন গত এগারো বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সফলতা। বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখছে। পৃথিবীতে ধীরে ধীরে কায়িক শ্রমের অস্তিত্ব থাকবে না। কায়িক শ্রম মেধা নির্ভর শ্রমে পরিণত হবে। কায়িক শ্রমে নিযুক্ত দেশে ও দেশের বাইরে বিশাল শ্রমশক্তির জন্য এটি হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটা মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ এখনই করতে হবে। মেধা তৈরির জন্য প্রথম দরকার ইন্টারনেট। এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির তিন মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮শ’ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড)। যা গত মার্চে ছিল এক হাজার ৪শ’ জিবিপিএস। গত তিন মাসে ৪শ’ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বেড়ে গেছে। এত বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডউইথ বেরে যাওয়ার কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, সরকারের সব দফতর বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ চলছে। জুমের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে মিটিং হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ক্লাশ নিচ্ছে, কোভিট-১৯ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। এছাড়া ঘরবন্দী বেশির ভাগ মানুষ ইন্টারনেট নির্ভর হয়েছেন। সচিবালয়ে শতকরা ২৫ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বশরীরে উপস্থিত থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি কর্মকর্তারা বাসায় বসে অফিসের কাজ করছেন। ফাইল পর্যন্ত সই করছেন। এতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। বরং আগের তুলনায় অফিসগুলোর কাজের গতি বেড়েছে। সি-মি-উই-৫ কেবলের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। ২ হাজার এক শ’ জিবিপিএস ইন্টারনেট প্রয়োজন হবে বলে একটা হিসাব করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সি-মি-উই-৫ কেবলের ‘ক্যাফাসিটি’ বাড়ানোর জন্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। সি-মি-উই-৪ থেকে বর্তমানে ৪শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এক কোটির ওপর ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে। জানুয়ারি মাস শেষে দেশে মোবাইল ফোন, ব্রডব্যান্ড ও অন্যান্য মাধ্যমভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৯ কোটি ৯২ লাখ ৪৬ হাজার। এই সংখ্যা মার্চের শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজারে। বর্তমানে ইন্টটারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কেরোনাভাইরাস ঠেকাতে দেয়া সাধারণ ছুটির মধ্যে মানুষ ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করছে। আবার এই সময়ে অনেক নতুন গ্রাহকও তৈরি হয়েছে। মানুষ ফোনে কল করে কথা বলা কমিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওভার দ্য টপ (ওটিটি) ভিত্তিক মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলছে। এর মধ্যে রয়েছে হোয়াটসএ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো, ফেসবুক মেসেঞ্জারসহ আরও নানা মাধ্যম ব্যবহার করছেন। এখন ইন্টারনেট মানুষের নিত্যদিনের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক অধিকার। জীবনযাপনের লাইফলাইন হচ্ছে ইন্টারনেট। অফিস করতে হচ্ছে ইন্টারনেটে। ব্যবসা ইন্টারনেটে। বিচারকাজও ইন্টারনেটে শুরু হয়েছে। সমাজের সব ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে। আমরা ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তার মধ্যেই বসবাস করছি। এখন করোনার কারণে ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে। করোনা শেষেও ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়বেই। যারা একবার ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেছে তারা আর ইন্টারনেট ছাড়া থাকতে পারবেন না। মানুষ এখন আর মোবাইলে কথা বলতে খুব বেশি আগ্রহী নন। মানুষের দরকার ডেটা। এই নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। দিন দিন ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়বেই। অন্যদিকে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমবে। আমরা এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮শ’ ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড কানেকশন পৌঁছে দিয়েছি। বাকি ৭৭৭টি দুর্গম ইউনিয়নে স্যাটেলাই বা অন্য কোন উপায়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দেব এ বছরের মধ্যে। ৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াই-ফাই কানেকশন দেয়া হয়েছে। সারাদেশে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। দেশে বর্তমানে ১৬ কোটি ৫৩ লাখ মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছে। গত মার্চে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৬৫ লাখ। এর মধ্যে তিন লাখ মোবাইল ফোন গ্রাহক কমে গিয়ে তারা ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়েছেন।
×