ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় গরুর ক্রেতা নেই ॥ বিপাকে খামারি

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ১৪ জুলাই ২০২০

নওগাঁয় গরুর ক্রেতা নেই ॥ বিপাকে খামারি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ১৩ জুলাই ॥ সদর উপজেলার দুবলহাটি গ্রামের বাসিন্দা বেনজির আহমেদ একজন কৃষক। পাশাপাশি তিনি গরু মোটাতাজাকরণের সঙ্গে জড়িত। গতবছর কোরবানি ঈদে ১৫টি গরু বিক্রি করে ৩ লাখের অধিক টাকা লাভ করেছিলেন। এ বছর ২৫টি গরু মোটাতাজা করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে না পারায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে খামারি বেনজিরের কপালে। শুধু বেনজির নয়, দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নওগাঁর প্রায় ৩১ হাজার খামারি তাঁদের খামার ও পরিবারে পোষা গরু নিয়ে। গত তিন/চার বছর ধরে ভারতীয় গরু না আসায় কোরবানির হাটগুলোতে দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। তাতে গরু বিক্রি করে নওগাঁর খামারিরা বেশ লাভবান হয়েছিলেন। আগে কোরবানির এক/দেড় মাস আগেই জেলার বিভিন্ন হাটে ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরু কিনতেন ব্যাপারীরা। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদের (ঈদ-উল আজহা) আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি থাকলেও এখনও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় বাজারের ব্যাপারীদের তেমন আনা-গোনা নেই। এতে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। খামারিরা বলেন, গত বছর এই সময়ে ব্যাপারীরা খামারে এসে গরুর দর-দাম করত। দুই-একটা করে বিক্রিও হতো। কিন্তু এবার এখনও তাঁদের দেখা নেই। দুই/তিনজন ব্যাপারীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার শেষ মুহূর্তে গরুর বাজার কেমন থাকবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন তাঁরা। লোকসান ঠেকাতে বাজার দেখেশুনে শেষ মুহূর্তে গরু কিনতে চান তাঁরা। তবে এবার আগের বছরগুলোর তুলনায় গরুর দাম কম থাকবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। খামারিরা ধরে নিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির হাটে এবার গরুর আশানুরূপ দাম পাওয়া যাবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশিরভাগ খামারি লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন কেনা দাম ও লালনপালনের খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ছোট-বড় ৩১ হাজার ৭৮০টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে ২ লাখ ৭২ হাজার গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে জেলাতে গরু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার। কোরবানিযোগ্য বাকি গরু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হবে। নওগাঁ শহরের বিসিক শিল্প এলাকায় ‘নওগাঁ স্পেশাল এ্যাগ্রো-ইকোনমিকস জোন লিমিটেড’-এর পরিচালক মনিন্দ্র কুমার মজুমদার তাঁর খামারে ৪৩টি ষাঁড় গরু লালন-পালন করেন। ভেবেছিলেন কোরবানির হাটে গরুগুলো বিক্রি করে ভাল আয় করবেন। কিন্তু কয়েক হাট ঘুরেও আশানুরূপ দামে গরু বিক্রি করতে পারেননি তিনি। মনি মজুমদার বলেন, এবার গরুর দাম অস্বাভাবিক কম। আশা করেছিলাম, ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভে প্রতিটি গরু এবার ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু মনে হচ্ছে, উল্টো ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করতে হবে। গত সোমবার নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া হাট ও বৃহস্পতিবার সাপাহার উপজেলার দিঘিরহাট ঘুরে দেখা যায়, হাটগুলোতে প্রচুর গরু উঠেছে। কিন্তু ক্রেতা কম। হাটের ইজারাদার ও ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটে যে পরিমাণ গরুর সরবরাহ সে তুলনায় ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনা হচ্ছে কম। ক্রেতাও দাম বলছেন কম। এতে খামারি ও গেরস্থকে লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে। ছাতড়া হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম অনেক কম। ক্রেতার অভাবে গরুর তেমন বেচাকেনা হচ্ছে না। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ী এখনও গরু কিনতে আসেনি। স্থানীয় ক্রেতারা গরু কেনার জন্য হাটে এলেও দামদর করলেও গরু তেমন একটা কিনছেন না। নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান বলেন, হাটগুলোতে গরুর আমদানির তুলনায় ক্রেতা কম। প্রতিদিন খামারিরা ফোন করে ক্রেতা নেই বলে জানাচ্ছেন। সম্ভবত করোনা পরিস্থিতির কারণে গরু কিনে লোকসান হতে পারে এমন আশঙ্কায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় বাজারের ব্যবসায়ী গরু কিনতে চাচ্ছেন না। আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে ব্যবসায়ীদের গরু কেনার প্রবণতা বাড়বে এবং গরুর দামও কিছুটা বাড়তে পারে। ঝিনাইদহে যুবরাজের দাম উঠেছে ১৯ লাখ নিজস্ব সংবাদদাতা ঝিনাইদহ জানান, প্রায় ৫০ মণ ওজনের ষাঁড়। নাম যুবরাজ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে এই যুবরাজকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছে শতশত উৎসুক জনতা। জেলা ও জেলার বাইরে থেকেও প্রতিদিন যুবরাজকে দেখতে আসছে শতশত মানুষ। চলছে তার সঙ্গে সেলফি ওঠানোর হিড়িক। অনেকে আবার এই যুবরাজের সঙ্গে তোলা ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসব কারণে যুবরাজ নামে বৃহদাকারের ষাঁড়টি এখন আলোচিত হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, যুবরাজের মালিক শাহ আলম মিয়া। তার পৈত্রিক বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায়। স্কুল ও কলেজ জীবন শিবচরেই কেটেছে তার। প্রায় ৮ বছর পূর্বে এক বন্ধুর হাত ধরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে চলে আসে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। এরপর অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি সিঙ্গাপুরসহ ৪১টি দেশে গিয়েছেন। পরে ঝিনাইদহে ফিরে এসে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় করে বাড়ি ও বাড়ির সঙ্গে একটি খামার করেন। খামারের নাম দিয়েছেন আব্দুল্লাহ এ্যাগ্রো এ্যান্ড ডেইরি ফার্ম। ৭ বছর হলো এই খামারেই তিনি গরু লালন-পালন করেন। বর্তমানে তিনি এই খামারেই সময় দেন। এগুলো লালন-পালন করে অর্থ উপার্জন করছেন। ফার্ম মালিক শাহ আলম মিয়া জানান, আমার এই ফার্মের নাম আব্দুল্লাহ এ্যাগ্রো এ্যান্ড ডেইরি ফার্ম। যুবরাজ নামে ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টি স্থানীয় বাজার থেকে ৬ মাস বয়সে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় কিনে আনা হয়। এখন তার বয়স ৪ বছর ৬ মাস।
×