ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একই মেশিনে চলছে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীর পরীক্ষা

ময়মনসিংহ মেডিক্যালে চিকিৎসা সেবা বেহাল

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ১৪ জুলাই ২০২০

ময়মনসিংহ মেডিক্যালে চিকিৎসা সেবা বেহাল

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একই ভবনে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা সেবা নিয়ে তৈরি হয়েছে লেজেগোবরে অবস্থা। একই সিটিস্ক্যান মেশিন দিয়ে চলছে কোভিড, নন-কোভিড রোগীর পরীক্ষার কাজ! করোনাসংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এ নিয়ে ক্ষুব্ধ রোগীসহ চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা। জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভায় নন-কোভিড রোগীর সিটিস্ক্যান ও এমআরআইসহ সব ধরনের পরীক্ষা সরকার নির্ধারিত ফিতে বাইরের প্রাইভেট বেসরকারী ল্যাবে করানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে নন-কোভিড রোগীর ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে অথবা বাড়তি ফিতে বাইরের বেসরকারী ল্যাবে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সময় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হলেও নির্বিকার করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি। অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন এবিএম মশিউল আলম জনকণ্ঠকে জানান, সরকার নির্ধারিত ফিতে কেবল সিটিস্ক্যান পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের বাইরের ৩টি বেসরকারী ল্যাবকে নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে এমআরআই ও ডায়ালাইসিসের কী হবে প্রশ্নে জানান, এখনও এটি করা যায়নি। মনিটরিং প্রশ্নে সিভিল সার্জন জানান, এটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিস্ময় প্রকাশ করে জানায়, বাইরের ল্যাবে পরীক্ষার বিষয় করোনা প্রতিরোধ কমিটিই মনিটরিং করার কথা। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত মার্চের প্রথমদিকে চালুর পর থেকে হাসপাতালের নতুন ভবনের ছয়তলা থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত ৩টি ফ্লোরে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। একই ভবনের নিচের ফ্লোরসমূহে দেয়া হচ্ছে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা। পাশাপাশি পুরনো ভবনেও চলছে নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা সেবা। কোভিড রোগীর সেবা চালুর পর থেকে নতুন ভবনের নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিসসহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নিউরো সার্জারি, বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ও ইউরোলজির অপারেশন থিয়েটার। একই সিটিস্ক্যান মেশিনে পালা করে চলছে কোভিড, নন-কোভিড রোগীর পরীক্ষা। এই ভবনেই রয়েছে প্যাথলজি ল্যাব ও অন্যান্য পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ হাসপাতালের বহির্বিভাগ। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই চলছে সবকিছু। নন- কোভিড রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন হাসপাতালের বাইরের প্রাইভেট ল্যাবে যেতে হচ্ছে। অথচ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল নতুন ভবনকে কোভিড করা হলে হাসপাতালে আসা রোগীর সরকার নির্ধারিত ফিতে বাইরের বেসরকারী ল্যাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু এক মাসেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধার নতুন ভবনে কোভিড চিকিৎসা চালু হলেও নেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কেনা দুটি ও অনুদানের একটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে চলছে ১৫০ বেডের কোভিড হাসপাতালে রোগীর সেবা। অথচ জটিল কোভিড রোগীর জন্য এই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা অপরিহার্য। এই সুবিধা না থাকায় মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ চিত্ত রঞ্জন দেবনাথসহ মেডিসিনের এক সহকারী অধ্যাপককে এয়ার এম্বুলেন্সে পাঠাতে হয়েছে ঢাকায়। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ লক্ষী নারায়ণ মজুমদার জনকণ্ঠকে জানান, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার জন্য সিএমএসডিকে পত্র দেয়া হয়েছে। তবে এখনও সরকারীভাবে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা মেলেনি। তবে হাসপাতালের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দুটি ক্যানোলা কিনেছে। এ সময় একজন দানবীর একটি ক্যানোলা অনুদান করেছে হাসপাতালকে। এই ৩টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাই এখন কোভিড রোগীর ভরসা। সোমবার পর্যন্ত এই কোভিড হাসপাতালে ১০ চিকিৎসকসহ ভর্তি রয়েছেন ৪১ কোভিড রোগী। প্রয়োজনীয় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা না থাকায় জটিল কোভিড রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রায়ই ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। এ সময় কোভিড রোগীর ভোগান্তির সীমা থাকছে না। তালতলীতে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল দাবি নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী বরগুনা থেকে জানান, তালতলী উপজেলা পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের কার্যক্রম দাবিতে একযোগে উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানে অন্তত অর্ধ লাখ মানুষ মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচী পালন করেছে। সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ বৃষ্টি উপেক্ষা করে এ মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষরে অংশগ্রহণ করেছেন। জানা গেছে, ২০০৩ সালে তালতলীতে ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তালতলী থানাকে উপজেলায় রূপান্তিত করেন। তালতলী উপজেলায় রূপান্তিত হলেও ১৭ বছরে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপ নেয়নি। হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়নি। সমুদয় পদ খালি রয়েছে। প্রেষণে নিয়োগ দেয়া পাঁচজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতলাটি ২০ শয্যার হলেও এখন পর্যন্ত কোন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এছাড়া ওই হাসপাতালের নামে অর্থনৈতিক কোড নেই। কোড না থাকায় হাসপাতালের নামে কোন বরাদ্দ পাচ্ছে না। বরাদ্দ না পাওয়ায় যন্ত্রাংশ কেনা যাচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রেষণে নিয়োগ দেয়া চিকিৎসকরাও ঠিকমতো হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এছাড়া এখনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নামে ওষুধ বরাদ্দ নেই। তালতলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বরাদ্দকৃত ওষুধ দিয়ে চলছে ২০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম। এ হাসপাতালে চিকিৎসক, চিকিৎসা যন্ত্রাংশ, ওষুধ সামগ্রী, এ্যাম্বুলেন্স না থাকায় ইনডোর ও আউটডোর বন্ধ রয়েছে। এতে উপজেলার দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমিত কোন রোগীকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না।
×