ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন

জবাবদিহিতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৩ জুলাই ২০২০

জবাবদিহিতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত পর্যায়ে সারাদেশে যানবাহন চলাচল করলেও দুর্ঘটনা যে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। জুন মাসে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৫৮টি দুর্ঘটনায় ৩৬৮ জন নিহত ও ৫১৮ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ২০টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৭টি দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত ও ৬০ জন আহত এবং ১০ জন নিখোঁজ সংবাদ পাওয়া গেছে। রবিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৬২ চালক, ১২৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১৩ পথচারী, ৬২ নারী, ৫৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের মধ্যে ২১ জন বিজিবি, ১৮ জন আনসার, ১৩ পুলিশ ও ৫ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ২৮ শিশু, ২৩ শিক্ষার্থী, ১১ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৭ শিক্ষক, একজন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন প্রকৌশলীর পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ১১৬ চালক, ৯৮ পথচারী, ৪৯ নারী, ৪৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ২১ শিশু, ১৯ ছাত্রছাত্রী, আটজন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাতজন শিক্ষক ও একজন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন প্রকৌশলী, পাঁচজন পুলিশ ও দুইজন বিজিবি সদস্য। সংঘটিত দুর্ঘটনায় ৩৪.৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২৪.১৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২.১ শতাংশ বাস, ৯.২৪ শতাংশ নছিমন-করিমন, ৮.১১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৭.১৫ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৪.৩৪ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ৮ জুন এদিনে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ২৫ জন আহত হন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ১০ জুন ৮টি দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ১৪ জন আহত হন। মোট দুর্ঘটনার ৫১.১২ শতাংশ গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা, ২৪.৫৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.০৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ৭.৫৪ শতাংশ বিবিধ কারণে, ১.১২ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ এবং শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরিসংখ্যানে দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪৮.৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩১.৫৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৩.৯৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২.৭৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৯৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১.১২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়। মে মাসের তুলনায় জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ৫৬.১৪ শতাংশ, নিহত ৫৭.৩৪ শতাংশ ও আহতের হার ৪৩.৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির পাশাপাশি ৩০ মে পর্যন্ত গণপরিবহনও লকডাউন থাকে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার কথা বলে ৩১ মে থেকে সাধুরণ ছুটি তুলে নেয়ার পাশাপাশি গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।
×