ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা প্রকোপকালে প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা ও দাম দুটোই বেড়েছে

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১৩ জুলাই ২০২০

করোনা প্রকোপকালে প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা ও দাম দুটোই বেড়েছে

ফিরোজ মান্না ॥ করোনা মহামারী কালে শিক্ষা ব্যবস্থা অনলাইন কেন্দ্রিক হওয়ায় বাজারে প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। মোবাইল, ট্যাব ও ল্যাপটপের দামও লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যাল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের প্রযুক্তি পণ্যের প্রয়োজন হচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি আগের মতোই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এ জন্য অনেকের মোবাইল, ট্যাব ও ল্যাপটপের প্রয়োজন রয়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় সাধারণ ছুটির জন্য দোকান পাট বন্ধ ছিল। ফলে অনেকের মোবাইল, ট্যাব ও ল্যাপটপ কেনার প্রয়োজন থাকলেও কিনতে পারেননি। এখন দোকানপাট খোলার পর মানুষ এসব পণ্য কিনছেন। ঈদের কেনা কাটার বাজেট কমিয়ে ডিভাইস প্রতি ঝুকেছেন। এসব ডিভাইস ছাড়া ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করা অসম্ভব বলেও জানিয়েছেন অনেক ক্রেতা। এসব পণ্যের বাজার মনিটর করার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) বিটিআরসিকে অনুরোধ জানিয়েছে। শুক্রবার বসুন্ধরা ও মালিবাগ ফরচুন মার্কেটের প্রযুক্তি পণ্যের বাজার ঘুরে এ অবস্থা দেখা গেছে। নগরীর গ্রীন রোডের বাসিন্দা তানভীর আহমেদ মোবাইল কেনার জন্য বসুন্ধরা শপিংমলে স্যামসংয়ের শো রুমে যান। তার সঙ্গে কথা হলে বলেন, তার দুই ছেলে নামকরা একটি স্কুল এ্যান্ড কলেজে পড়ে। তাদের অনলাইনে ক্লাস করতে হয়। আমাদের দুটি ফোন। একটি আমি ব্যবহার করি অন্যটি আমার স্ত্রী। অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে আমাদের ফোন তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু প্রায় সময় মোবাইলে কল আসলে ক্লাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারে না। এ কারণে দুই ছেলের জন্য মোবাইল কিংবা ট্যাব কিনতে এসেছি। আগে যে মোবাইল বা ট্যাপের দাম ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা সেই মোবাইল ও ট্যাপের দাম এখন ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার সুযোগ নিয়ে প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীরা রাতারাতি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনাকেও এক ধরনের পুজি করেছেন তারা। এখন আমি যে বাজেট নিয়ে মার্কেটে এসেছি তার চেয়ে অনেক টাকা বেশি লাগছে। কিন্তু লাগলে কি আর করা ছেলেদের তো লেখা পড়া বন্ধ করা যাবে না। তাদের হাতে তো ডিভাইস তুলে দিতে হবে। তানভীর বলেন, ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার বাইরে সরকার করোনা মোকাবেলায় তিন মাসের মতো সাধারণ ছুটি দিয়েছিল। ওই সময়ে অনেকের মোবাইল নষ্ট হয়েছে। কিন্ত দোকানপাট বন্ধ থাকায় নতুন করে কিনতে পারেননি। এখন তারাও ফোন কিনছেন। অন্য দোকানের চেয়ে মোবাইল,ট্যাব ও ল্যাপটপের দোকানে ক্রেতার ভিড় অনেক বেশি। এসব দোকানে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই। যার যেটা পচ্ছন্দ হচ্ছে যে দামই হোক কিনে নিচ্ছেন। যে কোন মহামারীতে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা না করে বরং ন্যয্য মূল্য রাখেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাই হয়। একমাত্র আমাদের দেশে মহামারী বা দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম দ্বিগুণ তিনগুণ নিচ্ছে। বাজার মনিটরের ব্যবস্থা যদি কঠোর হতো তাহলে এই দুর্যোগে ব্যবসায়ীরা এমন অনৈতিক কাজ করতে পারতেন না। তানভীরে মতো আরও অনেক গ্রাহক একই কথা বললেন। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ কেন্দ্রিক প্রযুক্তি বাজারে একটা পরিবর্তন ঘটে। ঈদের সময় অন্যান্য কেনা কাটার মধ্যে প্রযুক্তি পণ্যও রাখেন। এবার অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। ঈদে শুধু নতুন পোশাক নয়, পাশাপাশি চাই নতুন প্রযুক্তির ডিভাইস । ফলে এবারও প্রযুক্তিবাজার রমরমা। এবার প্রযুক্তি পণ্য বিক্রির শীর্ষে রয়েছে ট্যাব, কম দামের ডিজিটাল ক্যামেরা, মাঝারি ও উচ্চমূল্যের মোবাইল। ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রযুক্তি পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু একটি অসাধু চক্র নকল পণ্য বেশি মূল্যে অবাধে বিক্রি করে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও আসছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। সিন্ধান্ত ছিল বাজার মনিটর করা হবে। কিন্তু সরকারীভাবে এখন পর্যন্ত বাজার মনিটর করার কোন খবর আমরা পাইনি। আমরা চাই করোনা পরিস্থিতিতে গ্রাহক যাতে ন্যয্য মূলে তাদের পচ্ছন্দের পণ্য কিনতে পারেন। কিন্তু সেই সুবিধা গ্রাহকরা পাচ্ছেন না। বাজারে কমদামের চাইনিজ মোবাইল সেট এবং নামী-দামী ব্র্যান্ডের নকল মোবাইল সেটগুলো নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)। তারা এখন পর্যন্ত প্রযুক্তি পণ্যের বাজার মনিটর করতে কোন মার্কেটেই যাননি। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিয়েছি কোন পণ্যের বেশি দাম নেয়া যাবে না। এ বিষয়ে বিটিআরসির কারা কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
×