ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ বিকাল নাগাদ উজান থেকে তিস্তায় বড় ঢল ধেয়ে আসছে

প্রকাশিত: ১৪:১০, ১২ জুলাই ২০২০

আজ বিকাল নাগাদ উজান থেকে তিস্তায় বড় ঢল ধেয়ে আসছে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ৮৮/৯৬ সালের বন্যায় ন্যায় তিস্তায় উজান হতে একটি বড় ঢল ধেয়ে আসছে। আজ রবিবার বিকালের মধ্যে নীলফামারীর ডালিয়াস্থ্য পানি উন্নয়ন বোডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সুত্র ধারণা করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রেড এ্যালার্টের মাধ্যমে তিস্তা অববাহিকার মানুষজনকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। সুত্র মতে আজ রবিবার সকাল ১১টায় ভারতের তিস্তা নদীর দো-মহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা (৮৫.৯৫ মিটার) ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে। পাশাপাশি সেখানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ভারতের এই পয়েন্টে গতকাল শনিবার বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপার দিয়ে তিস্তার পানি ধেয়ে আসায় রাত ১২ টায় বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার (৫২.৬০ মিটার) সর্ব্বোচ ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এরপর ভারতে পানি কমে এলে আজ রবিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও তা দুপুর ১২টায় আরও ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুত্র মতে হু হু করে প্রচন্ড গতিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে তিস্তায়। সুত্র মতে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্ট হতে উজানে ভারতে তিস্তার দো-মহনীর দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার ও ভারতের গজরডোবার দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। সুত্র মতে ভারতের পাহাড়ে ও সমতলের প্রচুর বৃষ্টিপাত ও গজলডোবার জলকপাট খুলে দেয়ায় সেখান থেকে প্রায় দুই লাখ কিউসেক পানি তিস্তা দিয়ে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশে। নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা ও পাশ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার তিস্তা অববাহিকায় বসবাসকৃত পরিবারগুলোকে রেড এ্যালার্টের মাধ্যমে নিরাপদে সরে যেতে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোড মাইকে প্রচারণা করেছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে। এদিকে গত কয়েকদিনের বন্যার ধকল সামলে ওঠার আগেই আবারও বড় বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে তিস্তা অববাহিকার পচর ও দ্বীপচরের লাখো বাসিন্দা। আবারও বন্যার আশঙ্কায় চরম উদ্বিগ্নতায় দিন কাটছে তাদের। পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়ায় খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় পরিবার ও গবাদি পশু নিয়ে অনিশ্চয়তার দিন কাটছে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা এসব চরবাসীর। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। মানুষের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি শিশু ও গবাদি পশুর জন্য খাদ্য সহায়তা দিতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় সরকারী ভাবে ৬০ মেট্রিক চাল, নগদ ১ লাখ টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার প্রস্তত রাখা হয়েছে বলে জানালেন ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায়। এদিকে আজ রবিবার বিকাল নাগাদ তিস্তায় বড় ধরনের ঢল ধেয়ে আসার সংবাদে তিস্তার পরিবার গুলো ও গবাদি পশু নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। লাল সংকেত দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ( ফ্লাডবাইপাস) এলাকাটি কর্মকর্তারা নজরদারী করছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ এলাকার উজান ও ভাটি এলাকায় বসবাসকৃত পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে গত তিনদিনের বন্যায় উজানের ঢলে তিস্তায় চতুর্থ দফায় ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা অববাহিকায় এমনিতেই ৫ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে রয়েছে। তারপর বড় ঢলের বন্যা আসছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন, পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী ও ঝুনাগাছচাঁপানীর ইউপি চেয়ারম্যান গন জানায় তিস্তায় ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃস্টি করছে। ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর , চরখড়িবাড়ি,পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিমখড়িবাড়ি, তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল, বাক্সপোটরা নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। অপরদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার ২ হাজার পরিবার বন্যাকালিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুই উপজেলার অসংখ্য ফসলী জমির আমন বীজতলা, রোপিত আমনের রোপা তলিয়ে গেছে। বসতঘরগুলোতে প্রকারভেদে হাটু ও কোমড় সমান পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাছের খামারগুলোর পুকুরগুলো উপচে পড়ায় প্রচুর মাছ ভেসে গেছে।
×