ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেরানীগঞ্জে মন ভেঙ্গে গেছে খামারিদের

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ১২ জুলাই ২০২০

কেরানীগঞ্জে মন ভেঙ্গে গেছে খামারিদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ১১ জুলাই ॥ আতঙ্কে রয়েছে কেরানীগঞ্জ উপজেলার গরুর খামারিরা। করোনা পরিস্থিতিতে বছরব্যাপী গরু লালন-পালনকারী খামারিরা অনিশ্চয়তায় আছেন গরু বেচাকেনা নিয়ে। এখানকার খামারিরা কোরবানির ৫-৬ মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। কোরবানি ঈদের আরও এক মাস বাকি থাকলেও করোনা মহামারীর এই সঙ্কটের কারণে ভেঙ্গে গেছে খামারিদের মন। মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিবছর খামারিরা যে পরিমাণ কোরবানির গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে এ বছর তার অর্ধেক গরু মোটাতাজাকরণের প্রস্তুতি চলছে প্রতিটি খামারে। তারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে এই কাজে ভাটা পড়েছে। কোরবানির গরুর বাজার নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এবার ব্যবসা হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন খামারের মালিকরা। খামার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু সংগ্রহ করে কেরানীগঞ্জের খামারগুলোতে নিয়ে আসেন তারা। এখানে বছরব্যাপী গরুগুলো যতœ সহকারে লালন-পালন করে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা হয়। এরপর ঈদ উপলক্ষে কেরানীগঞ্জসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরুগুলো বিক্রি করা হয়। আর এটিই তাদের একমাত্র পেশা। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। কোরবানি ঈদের আরও ২২/২৩ দিন বাকি থাকলেও করোনা মহামারীর এই সঙ্কটে ভেঙ্গে গেছে খামারিদের মন। তাছাড়া গরুর খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর প্রতিটি গরুর পেছনে খরচও হয়েছে দ্বিগুণ। মানিকগঞ্জ থেকে কোরবানির গরু কিনতে আসা হাসমত আলী প্রতি বছরই গরু কিনেন কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন খামার থেকে। তিনি জানান, হাটে গিয়ে গরু কেনার চেয়ে খামারে এসে গরু কিনলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে হাটে গরু কিনতে গেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যাবে না। তাই এবারও আমি খামার থেকেই গরু কিনব। মোঃ আসলাম কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা গদাবাগ এলাকায় আপেল এগ্রোতে গরু কিনতে এসেছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এবারের করোনা পরিস্থিতিতে হাটে গিয়ে গরু কেনাটা কতটা নিরাপদ হবে তা জানি না। তাই ঈদের কিছু দিন আগেই খামারে গরু দেখতে এসেছি। কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ জহির উদ্দীন জানান, এবারের কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কেরানীগঞ্জে ৭৪৭টি খামারে ১২ হাজার ৫শ’ ৬০টি গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটা তাজা করেছে। এছাড়া গবাদিপশুলোকে বিভিন্ন রোগের প্রতিশেধকের টিটা প্রদান নিশ্চিত করেছে আমাদের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক অফিস খোলা রেখেছি এবং সব সময় গবাদিপশু খামারিদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করেছি। এই করোনা পরিস্থিতিতে গরুর খামারিরা একটু চিন্তিত রয়েছে গরু বিক্রি নিয়ে। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি তারা যাতে হাটে নিয়ে গরু বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে গরু বিক্রির ব্যবস্থা করে থাকে এবং তারা তা করছে আর এর সুফলও পাচ্ছে। চাটমোহরে নজর কাড়ছে পালোয়ান নিজস্ব সংবাদদাতা পাবনা থেকে জানান, নাম তার পালোয়ান। খাওয়া, চলাফেরা আর গর্জন সবকিছুতেই যেন তারই ছাপ। এমনিতে শান্ত স্বভাবের হলেও অপরিচিত মানুষ দেখলেই গর্জন শুরু করে বলে তার নাম ‘পালোয়ান’ রেখেছেন খামার মালিক। পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের মহেলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মাসুদ তার খামারে লালন-পালন করছেন এই পালোয়ানকে। ৩০ মণ ওজনের পালোয়ানের দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। পুরো শরীর চকচকে কালো রঙের। পেটের দিকে, লেজের গোছা ও পেছনের দুই পায়ের ক্ষুর সাদা রঙের। ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে পালোয়ান গরু। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পালোয়ানকে দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেছেন খামারি মাসুদ। খামার মালিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জানান, দুই বছর আগে উপজেলার বোঁথড় গ্রামের একটি খামার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় গরুটি কেনেন তিনি। তারপর থেকে গত দুই বছর ধরে গরুটি লালন-পালন ও দেশীয় খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করেন। খামারি মাসুদের দাবি, বর্তমানে চার বছর বয়সী গরুটির ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ মণ। কোরবানি উপলক্ষে গরুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে ব্যাপারীরা পালোয়ানকে দেখে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কিছু লাভ হবে বলে জানান মাসুদ। খামারি মাসুদ আরও জানান, প্রতিদিন দুই বেলা প্রায় ১২ কেজি খাবার খায় তার পালোয়ান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পর্যাপ্ত পশু স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, বিভিন্ন খামারে প্রাকৃতিকভাবে কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণের কাজে ব্যস্ত রয়েছে খামারিরা। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত প্রায় লক্ষাধিক গবাধিপশু। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার খামারি দিন রাত প্রাকৃতিক উপায়ে পশু হৃষ্টপুষ্টকরণে কাজ করছে। প্রতিটি খামারে ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের কোরবানির পশু রয়েছে। খামারে থাকা পশু দিয়েই মিটবে জেলার ৯৫ ভাগ চাহিদা এমনটা মনে করছেন অনেকে। চলতি পরিস্থিতিতে কোরবানির পশু ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিয়ে খামারিদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, খামারিদের লাভের কথা মাথায় রেখে অনলাইনে কেনাবেচার পাশাপাশি কম খরচে পশু মোটাতাজাকরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। খামার মালিক হোসাইন মিয়া ও তসলিম উদ্দিনের বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে অনেক খামারের আকার ছোট করা হয়েছে। তাছাড়া পশু খাদ্যের দাম বিগত বছর থেকে এবার বেড়েছে। এতে খামারের খরচ বেড়েছে। আমরা লাভের আশায় দিন-রাত কাজ করলেও গত ২/৩ বছরের তুলনায় এবার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। চট্টগ্রামে হাটে জমেনি বেচাকেনা স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, চট্টগ্রামে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু বেচাকেনা এখনও জমে উঠেনি। উত্তরবঙ্গ থেকে বেপারিরা ইতোমধ্যে গরু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। নগরীর সাগরিকা ও বিবিরহাট সবচেয়ে বড় পশুরহাটে কোরবানিতে বিক্রির জন্য গরু-ছাগল জমায়েত করা হচ্ছে। এদিকে, নগরীতে কোরবানিদাতারাও এবার দোটানায় রয়েছেন। গরু বাজার থেকে নেবেন নাকি ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ থেকে নেবেন তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। যারা বাজারে গিয়ে গরু কিনতে অনিচ্ছুক তারা ঝুঁকছেন ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের দিকে। চট্টগ্রামে নির্দিষ্ট পশুরহাটগুলো এবার সক্রিয় থাকবে কি, বন্ধ থাকবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বন্ধ রাখার সুপারিশ রাখা হয়েছে। যদি তাই হয়, তাতে ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপগুলোতে বিক্রি বেড়ে যাবে। মহানগরীর সাগরিকা, বিবিরহাট এবং নগর সংলগ্ন মইজ্যারটেক বাজারে কিছু ক্রেতা সমাগম ঘটতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিক্রয় তেমন হচ্ছে না। এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৪শ’ গরুর খামার রয়েছে। এরমধ্যে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা, পটিয়া ও আনোয়ারা এলাকায় রয়েছে খামারের আধিক্য। শুধু শিকলবাহায় রয়েছে প্রায় ৫শ’ খামার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ৭ লাখ ২০ হাজার ৭৮৯টি পশু জবাই হয়েছে কোরবানিতে। রংপুরে অনলাইন পশুর হাট চালু নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর থেকে জানান, করোনো পরিস্থিতিতে হাটে না গিয়ে পশু বেচাকেনার সুবিধার জন্য রংপুর জেলায় আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে অনলাইনে ৯টি পশুর হাট চালু করা হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ‘পশুরহাট’ নামে একটি অনলাইন পেজ খুলে এই হাট চালু করেছে। এই অনলাইন পেজে গরু-মহিষ-ছাগল পালনকারীদের পশুর ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতর আশাবাদী এই অনলাইন গরুর হাটে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাবে। জানা গেছে, রংপুরের ৮ উপজেলায় ৮টি এবং জেলায় একটি অনলাইন পশুর হাট করা হয়েছে। ‘পশুরহাট’ নামক এই অনলাইন পেজের মাধ্যমে ক্রেতারা সহজেই গবাদি প্রাণী ক্রয় করতে পারবেন। এই হাট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। রংপুরসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও গবাদিপ্রাণী পৌঁছে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে রেল বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
×