ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ করোনায় মানুষের পাশে ‘হাসিমুখ’

প্রকাশিত: ০০:৪১, ১২ জুলাই ২০২০

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ করোনায় মানুষের পাশে ‘হাসিমুখ’

চারদিকে করোনার ভয়াবহতা। স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। করোনার কারণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এক প্রকার অবসরেই কাটছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দিন। কিন্তু এ অবসর সময়েও কেউ কেউ কাজ করছে অসহায়, গরিব-দুঃখী মানুষের সাহায্যার্থে। বিবেকের তাগিদে, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও তারা বাসায় বসে না থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এমনই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হাসিমুখ’ ও এর সদস্যরা। ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অসহায় ও বঞ্চিতদের তরে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর দ্বারা পরিচালিত এ সংগঠনটি। সংগঠটিতে বর্তমানে মোট ১৮০ সদস্য স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। করোনাকালের শুরু থেকেই অসহায় হয়ে পড়া মানুষের সাহায্যার্থে কাজ করে আসছে সংগঠনটির সদস্যরা। করোনার শুরুতে লকডাউনের কারণে দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল, ঠিক সেই সময়ই তারা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ৩০ মার্চ ‘করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় অসহায় মানুষের পাশে হাসিমুখ’ নামক ফেসবুকে একটি ইভেন্ট চালু করে তারা। ফেসবুকে প্রচারের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তারা ঢাকা, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও কুষ্টিয়ায় মোট ১৫০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে। এছাড়া সে সময় তারা বাকৃবির ৯ গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে অর্থ সহায়তা প্রদান করে। এখানেই থেমে ছিল না তারা। পরবর্তীতে রমজান মাসে করোনার প্রভাবে যখন গরিব-দুঃখী মানুষের অভাব-অনটন বেড়ে যায় তখন তারা নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করে। সেই সঙ্গে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী টিউশনি করে সংসারের খরচ যোগাত তাদের কথা মাথায় রেখে কিছু করার তাড়না অনুভব করে সংগঠনের সদস্যরা। মাত্র ২০ দিন আগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শেষ করার পর একই রকম আরেকটি কার্যক্রম হাতে নিয়ে কতটুকু তারা সফল হবে, এ নিয়ে ছিল সংশয়। শেষ পর্যন্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তীব্র আকাক্সক্ষা নিয়ে অনেকটা সাহস করে গত ১ মে আবারও নতুন কার্যক্রম হাতে নেয় সংগঠনটি। যার শিরোনাম ছিল ‘পবিত্র রমজানে করোনায় বিপর্যস্ত মানুষের পাশে হাসিমুখ’। আগেরবারের মতো এবারও ফেসবুকে ইভেন্ট খোলার মাধ্যমে চালানো হয় প্রচার। সংগঠনের সদস্যরা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে অর্থ সংগ্রহের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। অতীতের মতো এ যাত্রায়ও ‘হাসিমুখ’ মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পেতে থাকে। বাকৃবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী সাধ্যমতো নিজেদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এ টাকার পুরোটা ব্যয় করা হয় করোনায় অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে। এ সময় তারা দেশের ১৬ জেলার ১৩০টি অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী, নগদ অর্থ, ঈদের নতুন পোশাক বিতরণের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে। এছাড়া এ সময় সংগঠনটি বাকৃবির ১৫ মেধাবী ও গরিব শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ায়, যারা কিনা টিউশনি করে পরিবারের খরচ যোগাত। এ অর্থের কিছু অংশ তারা ব্যয় করে ময়মনসিংহের একটি এতিমখানায় এক মাসের জন্য খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে। পাশাপাশি বাকৃবিতে কর্মরত ৩ কর্মচারীসহ মোট ৯ অসহায় মানুষকে অর্থ সহায়তা প্রদান করে সংগঠনটি। সংগঠটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, এ রকম উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে হাসিমুখের একঝাঁক পরিশ্রমী সদস্য। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। এত অল্প সময়েই মানুষের বিশ্বাস ও ভালবাসা অর্জন সংগঠনটির জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। প্রয়োজনের তুলনায় এ সাহায্য হয়ত বড়ই নগণ্য।
×