ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষার সাজে সেজেছে ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ১২ জুলাই ২০২০

বর্ষার সাজে সেজেছে ক্যাম্পাস

প্রাকৃতির নিয়মে বছর ঘুরে বর্ষা এসেছে বাংলায়, বর্ষা এসেছে প্রাণের ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু এই বছরটা আর আগের মতো নেই। প্রিয় ক্যাম্পাস থেকে দূরে ঘরবন্দী বর্ষা আমাদের। বর্ষা মানেই তো প্রিয় ক্যাম্পাসের মেঘলা আকাশ আর অবিরাম বৃষ্টির ফোঁটায় সবুজ পাতার লুটোপুটি খাওয়া। নৈসর্গিক সুন্দর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আষাঢ়ে বৃষ্টি আসে হিজল তলায়, জারুল বনে, সোনালি ফুলের হলুদ আভায়। সবুজ পাতায় বৃষ্টির ফোটা পড়ে সবুজ ঠিকরে বেড়িয়ে আসে। আর নিচের উঁচুনিচু সর্পিল রাস্তায় স্নিগ্ধ সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয় হাজার হাজার সোনালি ফুলের পাপড়ি। এক রাশ ঝিরিঝিরি শব্দের ঠাণ্ডা বাতাস দূর করে সারা বছরের জমে থাকা ক্লান্তি। কিন্তু এই সৌন্দর্য যে এবার দেখার মানুষ নেই রসিক বর্ষাও সম্ভবত তা বুঝে না। ফাঁকা ক্যাম্পাসে এবার বৃষ্টি নামে অনেকটা নীরবে। না থাকুক উপভোগের কেউ কিন্তু বাদল বৃষ্টি তার রূপ বিলিয়ে দিয়েছে প্রিয় ক্যাম্পাসের আঙিনায়। চুপিসারে আসা বর্ষায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস সেজেছে নতুন রূপে। অভ্যাসবশত ক্যাম্পাসের প্রতিটি গাছের বৃষ্টির ফোঁটায় সিক্ত সবুজ পাতার ফাঁকে কখনও সূর্য উঁকি দিচ্ছে আবার মুহূর্তেই কালো মেঘেরা খেলায় মেতেছে। বর্ষায় অনিন্দ্যসুন্দর ক্যাম্পাসের কোন এক অংশ সেজেছে সোনালির হলুদ আভায় আবার কোথাও বেগুনি জারুলের রূপে। সকাল বেলা হিজল গাছের নিচে লাল লাল ফুলের চাদরে বৃষ্টির সতেজ ফোঁটা, সে এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। বর্ষা কাল আসবে আর কদম ফুটবে না তা কি হয়। ক্যাম্পাসের সর্বত্র রয়েছে বেশ কিছু কদম গাছ। এবারের কোলাহল মুক্ত ক্যাম্পাসেও বর্ষার আগমনী গান গেয়েছে কদম ফুল। কিন্তু বন্ধ ক্যাম্পাসের বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় কদম হাতে নেই কোন কাদম্বরী। আষাঢ়-শ্রাবণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কদম, হিজল, জারুলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে আরও একটি ফুল নাম তার বোগেনভিলিয়া। বারোমাসি এই ফুলটি বর্ষায় তার সব রূপ ঢেলে দেয়। কালো মেঘে আকাশ ঢেকে গেলে রূপ তার লাল রক্তিম আবার মেঘের ফাকে সূর্য হেসে উঠলেই রং পাল্টে প্রকৃতিতে নিয়ে আসে গোলাপি আভা। বোগেনভিলিয়া ফাঁকা ক্যাম্পাসে এবারও তার মোহ ছড়িয়ে দিতে কার্পণ্য করেনি। লাল গোলাপি আভায় সেও গেয়েছে বর্ষার আগমনী গান। খেলার মাঠে হল থেকে হৈ-হুল্লোড় করে বেরিয়ে পড়া একঝাঁক তরুণকে সম্ভবত অনুভব করে ফাঁকা ক্যাম্পাসের মেঘ বৃষ্টি। ডুব সাঁতারে লেকে ঝাঁপিয়ে পড়া উদ্দাম তারুণ্য এ বছর নেই। নেই টুপটাপ বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে টঙের দোকানে চা বিলাশ। নির্বাক দৃষ্টি মেলে প্রাণ ভরে প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকনের মানুষের সংখ্যা কম হলেও থেমে নেই বর্ষার রূপ। ক্যাম্পাসজুড়ে বর্ষায় প্রকৃতির এতো রূপের প্রতিযোগিতা হয়ত এবার বিফলেই যাবে। নীরবে আসা এই আষাঢ়ে বৃষ্টি তার সৌন্দর্যে কোন ঘাটতি রাখেনি সত্য কিন্তু এই রূপসাগরে যারা ডুব দিয়ে টঙের দোকানে বসে ধোয়া উড়া চায়ের কাপে বুদ হয়ে গল্প আড্ডায় মেতে উঠে সেই শিক্ষার্থীরা নেই। অপেক্ষায় বুক বেঁধে আছি মহামারীর দুঃসময় কাটিয়ে উঠে প্রাণে-প্রাণে আবার মুখরিত করব হিজল জারুলের বৃষ্টি ভেজা সাত শ একরের বটতলা, টারজান, ট্রান্সপোর্ট ও মুন্নী সরনী।
×