ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪ দফা দাবি

ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সমাবেশ মানববন্ধন

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ১২ জুলাই ২০২০

ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সমাবেশ মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাকালে ব্যর্থতার দায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদের অপসারণের দাবি উঠেছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আয়োজিত এক প্রতিবাদী কর্মসূচী থেকে। শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ডিজির অপসারণে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটামসহ ৪ দফা দাবি তোলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুনের সঞ্চালনায় প্রতিবাদী এ কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যসহ প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সদ্য প্রয়াত সাহারা খাতুন এমপির স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। মোঃ আল মামুন বলেন, গত ২৬ মার্চ লকডাউন শুরু হওয়ার পর ‘আর্তমানবতার সেবায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সমগ্র দেশে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ১০ হাজার মানুষকে টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মেডিক্যাল টীম। করোনা সঙ্কট মোকাবেলার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সঙ্কট মোকাবেলার জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে সামনের সারির করোনা যোদ্ধাদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। তিনি বলেন, করোনা সঙ্কট মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি বর্তমানের সরকারের সফল অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। তিনি বলেন,‘পিপিই-মাস্ক কেলেঙ্কারি, আরটি পিসিআর মেশিন কেলেঙ্কারি, হিসাবরক্ষকের টেন্ডার কেলেঙ্কারি, জেকেজি কেলেঙ্কারি ইত্যাদি ঘটনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে। সর্বশেষ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিই প্রমাণ করে স্বাস্থ্যখাত এখন মাফিয়াদের দখলে। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারীতেও এনাদের অপকর্ম থেমে নেই। স্বাস্থ্যখাতে পরিকল্পিতভাবে এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সফল অর্জনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা হচ্ছে। আল মামুন আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু ব্যক্তির এহেন গভীর ষড়যন্ত্র কখনোই বরদাশত করবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোন দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবে না। সঠিক নজরদারির অভাবে একের পর এক এসব কেলেঙ্কারি স্বাস্থ্য খাতকে বিতর্কের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দায়িত্বশীল পদে থাকার পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির দায়িত্বহীন বক্তব্য মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। নিজেদের ব্যর্থতা লুকানোর চেষ্টা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। কারণ যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সাধারণ জনগণের বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ নেই। দেশে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া তাদের মৌলিক অধিকার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের সকল জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার প্রকৃত পরিবেশ কতটা নিম্নমানের তা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন মন্তব্য করে মামুন বলেন, যথাসময় চিকিৎসক না পাওয়া, সরকারী ওষুধ বাইরে বিক্রি, বাইরে রমরমা ক্লিনিক ব্যবসা, বিভিন্ন টেস্টের নামে রোগীর পকেট কাটা, হাসপাতালগুলোর পরিবেশ অপরিষ্কার ও নোংরা ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্তারা। হুঁশিয়ারি দিয়ে মুক্তিমঞ্চের এ নেতা বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে অবিলম্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির অপসারণ দাবি করছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। জনস্বার্থে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের অপসারণ না করলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দেশব্যাপী সকল শহীদ মিনারের পাদদেশে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী পালন শুরু করবে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের চার দফা ॥ ব্যর্থতার দায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ইউনিট স্থাপন করে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সকল জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে চিকিৎসার মানসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নতমানের আইসিইউ বেড স্থাপন করতে হবে।
×