ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল ঘি বাজারজাত

নিউ বাঘাবাড়িকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ২৩:২১, ১২ জুলাই ২০২০

নিউ বাঘাবাড়িকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জালিয়াতির মাধ্যমে ভেজাল ঘি বাজারজাত করার অভিযোগে রাজধানীর মালিবাগে নামকরা নিউ বাঘাবাড়ি নামে একটি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার দুপুরে ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান শেষে নিরাপদ খাদ্য আইন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। অভিযানে র‌্যাব-৩’র টিম সহযোগিতা করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংগৃহীত ঘি অননুমোদিতভাবে নিজের ব্র্যান্ডের বলে প্রচার, চটকদার বিজ্ঞাপন ব্যবহার এবং জাতীয় পতাকার সিল ব্যবহার করে অনুমোদন ছাড়া ঘি রফতানির অভিযোগে নিউ বাঘাবাড়ির মালিক সমির ঘোষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, প্রতিষ্ঠানটির নাম নিউ বাঘাবাড়ির মালিক সমির ঘোষ। প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে প্যাকেজিং ও সরবরাহকারী হিসেবে। কিন্তু বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ঘি প্যাকেট ও সরবরাহ করে পণ্যের গায়ে লিখছেন তিনি নিজেই উৎপাদনকারী। আইনে এটার কোন সুযোগ নেই। তিনি মূলত সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে আসেন, যা নিজের উৎপাদিত বলে চালিয়েছেন। এটা প্রতারণা। দ্বিতীয়ত নিজের ঘিয়ের প্যাকেটের গায়ে কিছু পুষ্টিগুণের কথা উল্লেখ করেছেন, যা তিনি করতে পারেন না। কারণ তার ব্র্যান্ডের ঘি পুষ্টিগুণের ল্যাব টেস্ট বা ল্যাব সার্টিফায়েড নেই। এমনকি তিনি ঘিয়ের মতো একটি রুচিশীল পণ্যের প্যাকেজিংটা করেন/ করছিলেন অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে। ম্যাজিস্ট্রেট জানান, নিরাপদ খাদ্য আইনে স্পষ্ট বলা আছেÑ কোন প্রোডাক্টের কাঁচামাল যেখান থেকে কিনে আসবেন সেখানকার চালান সংরক্ষণ করতে হবে। তার গোডাউনে প্রচুর কাঁচামাল রয়েছে। কিন্তু তিনি একটিমাত্র চালানের কপি দেখাতে পেরেছেন। এছাড়া তার অফিস থেকে বেশ কিছু স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে লেখা, তিনি সিডনিতে ঘি রফতানি করেন। অথচ তার এক্সপোর্ট লাইসেন্স নেই। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে ঘি রফতানি করলে ল্যাব টেস্ট সার্টিফায়েড হতে হবে, কাস্টমসের ছাড়পত্র লাগবে। অননুমোদিত ঘি রফতানি করলে দেশের বদনাম হবে। যদিও তিনি সেটা করে আসছিলেন। অপরদিকে তিনি তার ঘির কৌটায় বাংলাদেশের পতাকার সিল ব্যবহার করেছেন। ইতোপূর্বে এমন প্রতারণা কখনও দেখা যায়নি। ঘি ব্যবহারের পর ওই কৌটা মানুষ ফেলে দিতে পারে। এতে পতাকার অবমাননা হয়। এভাবে অনুমোদন ছাড়া পতাকার ছবি বা সিল ব্যবহার পতাকা আইনে অপরাধ। অপরদিকে মালিকের ঘির ব্র্যান্ডের নাম সমির ঘোষ। কিন্তু তিনি এর সঙ্গে ‘সমির ঘোষের স্পেশাল গাওয়া ঘি’ লিখেছেন। এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের ব্যবহার মানুষকে প্রতারণা করার শামিল। কারণ, তার এটার অনুমোদন নেই। গাওয়া ঘি কিন্তু আরও ইমপ্রুভড ও অধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ হয়। পলাশ কুমার বসু জানান, এসব অভিযোগের কোনটারই সদুত্তর দিতে পারেননি সমির ঘোষ। যে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইনের বিভিন্ন ধারায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। তিনি ১০ লাখ টাকা জরিমানা পরিশোধ করেছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, জব্দ করা ৫ রকমের ঘিতে কোন কেমিক্যাল রয়েছে কি-না, যা খালি চোখে দেখা যায় না। তা পরীক্ষার জন্য বিএসটিআই ল্যাবে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি পরীক্ষায় অস্বাস্থ্যকর ও কেমিক্যাল জাতীয় কিছু মেলে তাহলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।
×