ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

করোনাকালে সঙ্কটে সৃজনশীল প্রকাশনা

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১২ জুলাই ২০২০

করোনাকালে সঙ্কটে সৃজনশীল প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় দেড় মাস আগেই শেষ হয়েছে অঘোষিত লকডাউন বা সাধারণ ছুটি। খুলে গেছে সরকারী- বেসরকারী অফিস থেকে বিপণিবিতান। তাই বলে সবকিছু এখনও হয়নি স্বাভাবিক। তেমন অনেক কিছুর মতোই মহামারীতে ধুঁকছে সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্প। করোনাকবলিত দুর্যোগের শুরু থেকেই সৃজনশীল বইয়ের ব্যবসায় চলছে খরা। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর শো-রুম থেকে বইয়ের বিপণিবিতানগুলো খুলে গেলেও থেমে গেছে গল্প-কবিতা, উপন্যাসসহ সৃজনশীল বইয়ের বিক্রি। করোনাকালে জীবন ও জীবিকা যখন হুমকির মুখে তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে বই কেনায় আগ্রহী পাঠকের দেখা নেই। সীমাবদ্ধ জীবনে সীমিত কেনাকেটার তালিকায় থাকছে না বই। বড় প্রকাশকরা কোন মতে টিকে থাকলেও মাঝারি ও ছোট প্রকাশকরা পড়েছেন দারুণ সঙ্কটে। সব মিলিয়ে সৃজনশীল প্রকাশনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই শতাধিক প্রকাশক অপেক্ষায় আছেন সুদিনের। সেই সঙ্গে সরকারী সহায়তার বদলে সহযোগিতার প্রত্যাশা করছেন। এ বিষয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি এবং সময় প্রকাশের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি শেষ হলেও বইয়ের দোকানগুলো খুলেছে জুন মাসে। একই সময়ে প্রকাশকরাও তাদের অফিস খুলছে। তবে অফিস কিংবা দোকান খুললেও থমকে আছে বইয়ের বিক্রি। ভাল তো দূরের কথা, ব্যবসার গতি বলে কিছু নেই। অনুমান করা যাচ্ছে, আরও কয়েক মাস এমন পরিস্থিতি চলবে। মহামারীর কারণে সবাই সীমিতভাবে ব্যয় করছে। এই অবস্থায় খুব কম লোকের ক্রয় তালিকায় বই থাকছে। তাই সৃজনশীল বইয়ের ব্যবসায় বইছে আর্থিক মন্দা। সেই সূত্রে সৃজনশীল প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত দুই শতাধিক প্রকাশক ভাল নেই। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে আমাদের প্রচ- ক্ষতি হয়েছে। কারণ ফেব্রুয়ারির বইমেলা শেষ হলে মার্চ মাস থেকে সারাদেশে নতুন আসা বইয়ের বিপণন শুরু হয়। এপ্রিল ও মে মাস পর্যন্ত বই বিপণনের পাশাপাশি চলে বিক্রিত অর্থের লেনদেন। করোনার কারণে প্রকাশকরা এবার সেই ব্যবসা বঞ্চিত হয়েছে। আর এই ধাক্কাটা সামলানোর জন্য যে স্বভাবিক অবস্থার প্রয়োজন সেটা এখনও হয়নি। ঢাকায় স্বল্প পরিমাণ বই বিক্রি হলেও ঢাকার বাইরে একেবারেই বিক্রি নেই। আগামী কয়েক মাস এই খারাপ সময় যাবে। বড় প্রকাশকরা কোনভাবে টিকে থাকলেও মাঝারি ও ছোট প্রকাশকরা ভীষণ দুঃসময় পার করছেন। ইতোমধ্যে এই শিল্পে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ পরিস্থিতিটা আরও বেশি স্পষ্ট হবে। অন্যদিকে চাইলেও এই ব্যবসা বন্ধ করা যায় না। এ অবস্থায় আমরা সরকারের সহায়তার পরিবর্তে সহযোগিতা চাই। সরকারের বই ক্রয়ের খাতের বরাদ্দ বাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সাধারণত অর্থবছরের শেষের দিকে বই কেনে। এটা যেন শেষের পরিবর্তে মাঝামাঝি হয়। তাহলে সৃজনশীল অস্তিত্বকে ধরে রাখতে পারবে। এর বাইরে ঘুরে দাঁড়াতে আগামী বইমেলার প্রত্যাশায় রয়েছি। অন্যদিকে সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পকে রক্ষায় সরকারী প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহামারীর কারণে সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পে প্রচ- ক্ষতি হয়েছে। কমপক্ষে চার শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক সময় আসলেও সহজে এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না প্রকাশকদের। এ অবস্থায় এই শিল্পে সরকারের প্রণোদনা প্রয়োজন।
×