ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

আখাউড়া-সিলেট রুটে ডুয়েলগেজ লাইন স্থাপন অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ১২ জুলাই ২০২০

আখাউড়া-সিলেট রুটে ডুয়েলগেজ লাইন স্থাপন অনিশ্চিত

মশিউর রহমান খান ॥ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া টু সিলেট সেকশনের মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। চার বছর আগে উদ্যোগ নেয়া প্রকল্পটি অজ্ঞাত কারণে এখনও বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখছে না। গত চার বছরে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, ডিপিপি, চীনা কোম্পানি এবং বাংলাদেশ রেলেওয়ের ফিন্যান্সিয়াল কমিটির দীর্ঘ সমঝোতা, প্রি-একনেক, প্রজেক্ট ইভালুয়েশন রিপোর্ট যাচাই-বাছাই এবং একনেক বৈঠকে পাস হওয়ার পর এখন প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বৈঠকের বরাত দিয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ১১টি কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দেয়ায় প্রকল্প কাজ আটকে রেখেছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নের এই চূড়ান্ত সময়ে নতুন করে চিঠি দিয়ে প্রকল্পের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া আনওয়ান্টেড। এটি আমরা আশা করিনি। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক একনেকের মাধ্যমে প্রকল্পটি সম্পর্কে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তের পর বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা যেন এক নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর আগে একনেকে পাস হওয়ার পর কোন প্রকল্পের কাজ শুরু করতে নতুন করে প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা না গেলেও এ প্রকল্পটি নিয়ে বেশ সমস্যায় পরছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলসূত্র জানায়, বর্তমানে আখাউড়া-সিলেট সেকশনের বর্তমান মিটারগেজ লাইনটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি এক ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পর রেল মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটি এই লাইনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে রিপোর্ট প্রদান করেছে। রিপোর্টে বিশেষ করে এ লাইনটিতে থাকা অসংখ্য মেয়াদোত্তীর্ণ ব্রিজ ও কালভার্ট মিটারগেজ লাইনটিকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। তাই এ লাইনটি নির্মাণ করা অতি জরুরী হয়ে পরেছে। গুরুত্ব বিবেচনায় চীনের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে স্বাক্ষরিত বেশ কিছু প্রকল্পের মধ্যে এ প্রকল্প একটি। জি টু জি পদ্ধতিতে এটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে খেসারত দিতে হবে সাধারণ জনগণকে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক বৈঠকের বরাত দিয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালককে পাঠানো এক পত্রে এই প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কি কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে জানতে চেয়ে দেয়া চিঠিতে এগারোটি প্রশ্নের অবিলম্বে জবাব পাঠাতে বলা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষও এসব প্রশ্নের জবাব তৈরিতে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট রেল বিভাগের কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হলে প্রকল্পের কাজে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নও অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। জানা গেছে, চিঠিতে মোট এগারোটি প্রশ্নের জবাব জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, এই প্রকল্পের যৌক্তিকতা কি? প্রকল্প অনুমোদনের সর্বোচ্চ পর্যায় একনেকে পাসের পর এ ধরনের প্রশ্ন কি কারণে উঠেছে তা নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছে রেল মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, যে কোন প্রকল্পের সমস্যা থাকলে তা জানতে চিঠি না দিয়ে প্রকল্পটি নিয়ে জানার কিছু থাকলে রেল মন্ত্রণালয় বা রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা যেত। কি কারণে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে, কিভাবে নানা পর্যায় অতিক্রম করে একনেকে পাস হয়েছে তার ব্যাখ্যা পাওয়া তেমন কঠিন কোন কাজ নয়। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়, বাইপাস লাইন স্থাপন করে লাইন মেরামত কতটা যৌক্তিক। বাইপাস স্থাপন করতে কত অর্থের প্রয়োজন হবে, বাইপাসে রেল চলাচল করলে যাত্রী সেবায় সমস্যা সৃষ্টি হবে কিনা, বর্তমান মিটারগেজের পাশাপাশি আরেকটি ডুয়েলগেজ স্থাপনে সমস্যা কোথায়, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ জামালপুর ডুয়েলগেজ স্থাপনের চেয়ে এই প্রকল্পের খরচ দ্বিগুণ হওয়ার কারণ কি, মিটারগেজ কবে স্থাপন হয়েছে এবং লাইফটাইম কত, ডুয়েলগেজ করতে কত সময় লাগবে এবং ডবল লাইন করতে কত সময়ের প্রয়োজন, চায়না-ভারত ও বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনে খরচ কত ইত্যাদি। রেলসূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে ১৭০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাাপনে দুই শ’টি ছোট বড় ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করা হবে এবং রেল চালু রাখার জন্য বাইপাস নির্মাণ করা হবে তাই প্রকল্পের খরচ অন্য প্রকল্পের তুলনায় বেশি। জানা গেছে, রেলেওয়ের যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে ছোট বড় ব্রিজ থাকলে সে প্রকল্পের ব্যয় অন্য সাধারণ প্রকল্পের তুলনায় অনেক বেশি হয়। তবে যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির পরই এসব প্রশ্নের উদ্রেক হয়। সকল সমস্যার সমাধানের পরই কেবল একটি প্রকল্প সর্বশেষ স্থান হিসেবে একনেকে বৈঠকে উঠানো হয়। একনেক বৈঠকে যাচাই-বাছাই শেষেই চূড়ান্তভাবে পাস হয়। তাই এসব প্রশ্নের উত্তর একনেকে পাস হওয়ার আগে উঠলেই অনেকটা যৌক্তিকতা থাকে। তবে রেল সূত্র জানায়, এর আগেও বিভিন্ন পর্যায়ে চিঠিতে দেয়া প্রশ্ন সম্পর্কে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এইসব তথ্য জানানো হয়েছে। এই চিঠির জবাবেও এসব তথ্য জানানো হবে। জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জনকণ্ঠকে বলেন, যে কোন প্রকল্প একনেক বৈঠকে পাস হওয়ার আগেই কয়েক দফা নানাভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। আখাউড়া-সিলেট রুটে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চূড়ান্তকরণের আগেও এই প্রকল্প সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় এবং জবাব দেয়া হয়েছে। বৈদেশিক অর্থায়নের এই প্রকল্প কাজ শুরুর জন্য অর্থ প্রদান করতেও রাজি হয়েছে চীনা সরকার। এমন পর্যায়ে নতুন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের যৌক্তকিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা আনওয়ান্ডেট বটে। যৌক্তিকতা নির্ধারণ করেই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। নতুন করে দেয়া সকল প্রশ্নের জবাব দিতে রেল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে। অতিদ্রুত এসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির কাজ আমরা শুরু করতে চাই।
×