ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদকের সঙ্গে জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১২ জুলাই ২০২০

মাদকের সঙ্গে জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ থামছে না মাদকের আগ্রাসন। চলছে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান। মাদকবিরোধী অভিযানে গড়িমসিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তরফ থেকে। শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে মাদকের সঙ্গে জড়িত তিন শ’ জন। যার মধ্যে শুধু রাজধানী থেকেই গ্রেফতার হয়েছে ৫৯ জন। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার পিস ইয়াবা। এছাড়াও অন্যান্য মাদক আছে। ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর গাড়ি থেকে শুরু করে পণ্যবাহী যানবাহনে করে মাদক আনা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মাদক মজুদ করা হচ্ছে বস্তি, অভিজাত এলাকা ও উর্দুভাষী অবাঙালীদের বিহারি ক্যাম্পগুলোতে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। মাদকের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান তীব্র করার নিদের্শনা জারি করেছেন। অভিযানের ক্ষেত্রে গড়িমসি করার সঙ্গে জড়িতদের হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বস্তির মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে বস্তি নিয়ন্ত্রকারীদের একটি বড় অংশ। আর বিহারি ক্যাম্পে মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে বহুল আলোচিত ইশতিয়াক। তিনি বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে বর্তমানে মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বর্তমানে ক্যাম্পে বসবাস করেন না। তার নেতৃত্বে ঢাকার সব বিহারি ক্যাম্পগুলোতে চলছে মাদকের কারবার। সবচেয়ে বেশি মাদক বিশেষ করে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য এখন মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পগুলোতে। পাকিস্তানী রাজু ও গাঁজা শাকিলের নেতৃত্বে পারভেজ ও মৃত বিহারি জিয়ার ছেলে পাগলা মনু মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে ইয়াবা ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের সঙ্গে রয়েছে নারী সিন্ডিকেট। মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, মেসেঞ্জার ও ইমুতে কথা বলার পর ইয়াবা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এদের নানাভাবে সহায়তা করার অভিযোগ ওঠেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক পদের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জানান, সারাদেশের মতো ঢাকায় চলছে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান। শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চালানো অভিযানে মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ৫৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছে পাওয়া গেছে প্রায় দেড় হাজার পিস ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক। প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাদকের কারবার চলায় মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম কাজল জানান, শুক্রবার বিকেলে তারা অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন। র‌্যাব-২ এর মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি জাহিদ আহসান জানান, মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে শনিবার ঢাকার আদাবর থেকে ১১ হাজার পিস ইয়াবাসহ হৃদয় হোসেন ও আনাস নামের দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের কারণে সব ধরনের মাদকের দাম বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইয়াবার দাম। কারণ এই মাদকটির চাহিদা বেশি। আকারে ছোট ও সহজে বহনযোগ্য। সেবন করার পর মুখে কোন ধরনের দুর্গন্ধ হয় না। মূলত এ কারণেই ইয়াবার চাহিদা বেশি। হালে প্রযুক্তির মাধ্যমে চলছে মাদক ব্যবসা। এজন্য বিষয়টি দিন দিন জটিল হয়ে পড়ছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেমও এমনটাই জানান। তিনি জানান, মোবাইলের মাধ্যমে মাদক বিক্রি হচ্ছে। আর মোবাইল নম্বরগুলোর নম্বর বা সিমকার্ড অধিকাংশই বেনামে বা অন্যের নামে কেনা। দেখা যায় যার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে মাদকের ব্যবসা হচ্ছে, তিনি নিজেও জানেন না। করোনা পরিস্থিতি আর ঈদের সুযোগ নিয়ে মাদক কারবারিরা চালকদের ম্যানেজ করে কোরবানির পশুবাহী যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনসহ নানাভাবে মাদকের চালান আনার পরিকল্পনা করছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। এসব মাদক মজুদ করা হচ্ছে, বস্তি, বিহারি ক্যাম্প থেকে শুরু করে ঢাকার অভিজাত এলাকায়ও। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, মাদকের সঙ্গে সে পুলিশ হউক আর যেই হউক ছাড় দেয়া হবে না। আমরা গোয়েন্দা লাগিয়ে জড়িতদের সর্ম্পকে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি। তথ্য প্রমাণ পাওয়া মাত্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশনস) পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মাসুম রাব্বানী জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও দেশে মাদক ঢুকছে। আর ঈদকে কাজে লাগিয়ে মাদক কারবারিরা কোরবানির পশুবাহী যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে নতুন নতুন কৌশলে মাদক আনার পরিকল্পনা করছে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে। এজন্য দেশের যেসব জায়গা থেকে অধিকহারে কোরবানির পশু আসে, সেখানে সোর্স নিয়োগের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব গোয়েন্দাদের কাজে লাগানো হচ্ছে।
×