ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির পশু

ডিএনসিসির ডিজিটাল হাট উদ্বোধন করলেন তাজুল

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১২ জুলাই ২০২০

ডিএনসিসির ডিজিটাল হাট উদ্বোধন করলেন তাজুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় কোরবানির পশু বেচাকেনায় করোনা প্রতিরোধে বৃহৎ পরিসরে ও লোক সমাগম কমিয়ে হাট আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। একই সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পশু কেনাবেচার জন্য সাধারণ মানুষের আস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শনিবার রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রির প্ল্যাটফর্ম ডিএনসিসি ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। আইসিটি ডিভিশন, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম এ্যাসোসিয়েশন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, ডিজিটাল হাট থেকে প্রথম কোরবানির পশু ক্রয় করে অনলাইনে পশু কেনা বেচারও উদ্বোধন করেন। এ সময় অনলাইনে আরও দুই মন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক লাখ টাকার গরু কেনেন। জানা গেছে, প্রায় দুই হাজার পশু কোরবানি এবং মাংস প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকায় হোম ডেলিভারি দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে ‘ডিজিটাল হাট’। প্রচলিত হাটে পশু কেনায় হাসিল দিতে হলেও এখানে কোন হাসিল দিতে হবে না ক্রেতাদের। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনলাইনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। এছাড়াও যুক্ত ছিলেন সিপিডির সিনিয়র গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে তাজুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল বাজারে এবার কোরবানির পশু ক্রয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সরাসরি হাটে না গিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে এ ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। কষ্ট করে যে হাটে যাই, এটা আর করতে হবে না এটা নির্ভরশীল জায়গা হবে। আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণে ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষির ব্যবস্থা থাকা উচিত। এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, এক্ষেত্রে হটস্পট চিহ্নিত করে দিলে সুবিধা হবে। যেসব জায়গায় সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে তা পরিহার করতে হবে। এছাড়া গ্রামে এক জায়গায় হাট না করে বিভিন্ন জায়গায় পশুর হাট করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, শহর অঞ্চল ছাড়াও গ্রামগঞ্জে একটি বা দুইটি জায়গায় কোরবানির পশু বেচাকেনা করা জন্য নির্ধারণ না করে একটি ওয়ার্ডে বা ইউনিয়নে বিস্তৃত স্থানে আয়োজন করলে করোনা সংক্রমণের বিস্তাররোধে ভূমিকা রাখবে। এতে করে একদিকে যেমন পশু কেনাবেচার ওপর কোন প্রভাব পড়বে না অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, কোরবানির পশুর বেচাকেনার জন্য যেখানেই হাট বসানো হোক না কেন সেখানে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্বসহ সরকারের অন্যান্য নির্দেশনা মেনেই বসাতে হবে এবং এ লক্ষ্যে তার মন্ত্রণালয় একটি প্রাথমিক বৈঠক করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আজকের ডিল অনলাইন হাট থেকে লাল রংয়ের এক লাখ টাকা দামের গরু পছন্দ করে কিনেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কোরবানির গরু কেনায় মুরব্বিকে ক্রস করতে চাই না (স্থানীয় সরকার মন্ত্রী) মুরব্বির নিচেই থাকতে চাই। প্রধান অতিথিকে ক্রস করতে চাই না, ‘গুরু মারার বিদ্যায়’ আমি নেই। মন্ত্রী কোরবানির গরুর মাংসের তিন ভাগের একভাগ দান ও চামড়া দান করার ইচ্ছা জানান। এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনলাইন হাট ‘ফুড ফর নেশন একশপ’ থেকে লাখ টাকায় সাদাকালো রংয়ের গরু কেনেন। পলক বলেন, ঈদে নিজ এলাকা চলনবিলের সিংড়ায় চলে যাব। এজন্য ঢাকায় কোরবানির গরু দান করে দিতে চাই। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গরু কেনার আগ্রহ দেখালেও যে সাইট থেকে তিনি গরু কিনবেন তা আপডেট না থাকায় আর কিনতে পারেননি। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সবাইকে ঘরে থাকতে হচ্ছে, উপায় নেই। কোরবানি দিতে হবে এই বিবেচনায় এই ব্যবস্থা। আগামী দিনগুলোতে এসব প্ল্যাটফর্মে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। আমিও এভাবে কোরবানি দিতে চেষ্টা করব। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, মহামারীকালে অনলাইনে মানুষের কেনাবেচা বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরে এ খাতে আরও কয়েক লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কোরবানির হাটে না গিয়ে অনলাইনে পশু কেনায় সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করছে। অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আসন্ন ঈদ-উল-আজহায় কোরবানিকে সামনে রেখে রোগগ্রস্ত ও কোরবানির অনুপযুক্ত পশু বিক্রি বন্ধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভ্যাটেরিনারি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য থাকবে যাতে কোনভাবেই রোগগ্রস্ত বা কোরবানির অনুপযুক্ত গবাদিপশু বিক্রি না হয়। আমরা ভ্যাটেরিনারি মেডিক্যাল টিম করে দিচ্ছি। তারা সেটা লক্ষ্য রাখবে। গবাদিপশুর বাজারগুলোতে মেডিক্যাল টিম কাজ করবে, যাতে রুগ্ন পশু বাজারে আসতে না পারে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিমও কাজ করবে। মন্ত্রী আরও বলেন, কোরবানির জন্য যে পরিমাণ গবাদিপশুর সরবরাহ দরকার তা দেশেই রয়েছে। আমরা বিদেশ থেকে একটা পশুও আমদানি করব না। দেশের খামারিরা চমৎকার গবাদিপশু উৎপাদন করছেন। যা বাজারে দরকার তার চেয়ে বেশি উৎপাদন রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে জীবন ও জীবিকা চালিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় আমরা সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘যে পরিমাণ পশু দেশে রয়েছে তা যথেষ্ট বরং আরও বেশি পশু রয়েছে। গতবারও ভারত থেকে দেশে পশু আসেনি। এবারও ভারত থেকে কোন পশু দেশে প্রবেশ করবে না। সকল প্রক্রিয়ায় আমরা সঙ্গে থাকব। অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি ডিজিটাল গরুর হাট থেকে কেবল গরু কেনাই নয়, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাই করে বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে। এটি বিশাল একটি ‘কালেক্টিভ এফার্টের’ ব্যাপার। আমরা এটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করলাম। এতে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক ভুলত্রুটি হতে পারে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই। আমাদের আল্টিমেট গোল হচ্ছে, যত্রতত্র গরু বেচাকেনা এবং কোরবানি না দিয়ে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনা। এর ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশু কেনাবেচা করা যাবে। এছাড়া আধুনিক উপায়ে পশু কোরবানিও দেয়া যাবে। কোরবানিকৃত পশুর রক্ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও সুষ্ঠুভাবে করা যাবে। অনলাইনের মাধ্যমে পশু কেনাবেচা ও কোরবানি দেয়া হলে পশুর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেগুলো আমরা ফেলে দিই, সেগুলো রফতানি করার জন্য সংরক্ষণ করা যাবে। চামড়া সংরক্ষণ করা আগের চেয়ে সহজ হবে। মেয়র বলেন, এটি একটি কম্পোজিট প্রক্রিয়া। মেয়র বলেন, যারা অনলাইন থেকে গরু কিনবেন তাদের হাসিল দিতে হবে না। তিনি বলেন, অনলাইন কোরবানির হাট থেকে কোরবানি দিন ৪০০ গরু, পরের দিন ১ হাজার গরু এবং তার পরের দিন ৬০০ গরু বিক্রয় করা হবে। আতিকুল ইসলাম বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের কোরবানি হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। যারা কোরবানি হাটে যাবেন তাদের তিনি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার পরামর্শ দেন। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, পশুর দামের হাজারে ২৩০ টাকা কোরবানির খরচ। ২৩ শতাংশ যে চার্জ কসাইসহ অন্যান্য খরচ হবে, এখানে সিটি কর্পোরেশন কোন খরচ নেবে না, হোম ডেলিভারিসহ। তাতেও রাজি হয়ে যান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
×