ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নীলফামারীতে বন্যার পানি রাস্তা ঘরবাড়ি ফসলি জমির উপর দিয়ে প্রবাহিত

প্রকাশিত: ২১:২৫, ১১ জুলাই ২০২০

নীলফামারীতে বন্যার পানি রাস্তা ঘরবাড়ি ফসলি জমির উপর দিয়ে প্রবাহিত

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ তিস্তা এবার প্রচন্ডভাবে রূদ্রমুর্তি ধারন করেছে। নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে রাস্তাঘাট ফসলি জমি ও গ্রামের পর গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ শনিবার তিস্তার গর্জন ও শো শোঁ শব্দ তিস্তাপাড়ের নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার চর,চরগ্রাম ও লোকালোক কাঁপিয়ে দিয়ে ভাটির দিকে ধাপিত হচ্ছে। দুই উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। তাদের মাঝে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ল্যাট্রিনের সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি জলকপাট খুলে রেখেও উজারে ঢলের চাপ নিয়ন্ত্রন করা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তিস্তাপাড়ের জরুরী অবস্থা ঘোষনা দিয়ে লালসংকেট জারী করেছেন। পাশাপাশি মাইকিং করে তিস্তাপাড়ের পরিবারগুলোকে নিরপদে আশ্রয় নিতে বলা হয়। আজ শনিবার বিকাল ৬টায় তিস্তার নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২.৬০) ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ(ফ্লাডবাইপাস) এলাকাটি আমরা নজরদারী করছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ এলাকার উজান ও ভাটি এলাকায় বসবাসকৃত পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান উজান থেকে ভয়াবহ ঢল অব্যাহতভাবে ধেয়ে আসছে। এলাকায় লালসংকেত ঘোষনা করা হয়েছে। এলাকাবাসীরা জানায় উজানের ঢল এবার প্রচন্ড। ভারতের গজলডোবার স্লুইগেট খুলে দেয়ার কারনে নীলফামারী জেলার তিস্তা অববাহিকার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবারের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাট, বসতঘর ও ফসলি জমির উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন, পূবছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী ও ঝুনাগাছচাঁপানীর ইউপি চেয়ারম্যান গন জানায় তিস্তায় ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃস্টি করছে। ডিমলার কিছামত ছাতনাই,ঝাড়শিঙ্গেশ্বর,চরখড়িবাড়ি,পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিমখড়িবাড়ি, তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল, বাক্সপোটরা নিয়ে নিরাপদে সরে গেছে। অপরদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি,গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার ২ হাজার পরিবার বন্যাকালিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুই উপজেলার অসংখ্য ফসলী জমির আমন বীজতলা, রোপিত আমনের রোপা তলিয়ে গেছে। বসতঘরগুলোতে প্রকারভেদে হাটু ও কোমড় সমান পানির স্রোতে বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাছের খামারগুলোর পুকুরগুলো উপচে পড়ায় প্রচুর মাছ ভেসে গেছে। বানভাসীরা জানায় ঘরে খাদ্য থাকলেও রান্নার করার মতো অবস্থা নেই। তাদের এখন শুকনা খাবার ,বিশুদ্ধ খাবার পানির প্রচন্ড সংকট দেখা দিয়েছে। ডিমলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান, আমরা প্রতিটি এলাকার মনিটরিং করছি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তিস্তা অববাহিকার চর ও চর গ্রামের পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। আমরা শুকনা খাবার পৌছানোর চেস্টা করছি।
×