ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবা পৌঁছে যাবে দুর্গম এলাকায়

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ১১ জুলাই ২০২০

উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবা পৌঁছে যাবে দুর্গম এলাকায়

ফিরোজ মান্না ॥ এবার টেলিটক দেশের দুর্গম এলাকায় উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক ইতোমধ্যে তাদের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির কাজ শুরু করেছে। নেটওয়ার্ক নেই এমন এলাকায় ৪শ’ বিটিএস (বেজ স্টেশন) নির্মাণ করবে। এতে সারাদেশ টেলিটক নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। বেসরকারী অপারেটরগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না গিয়ে নেটওয়ার্ক বাড়ালেই মানুষ টেলিটকের প্রতি আগ্রহী হবেন। গ্রাহকরা টেলিটক ব্যবহার করতে এখনও চান। কিন্ত ভাল সেবা না পাওয়ার কারণেই মানুষ টেলিটক থেকে সরে গিয়েছে। সেবার মান ভাল করতে পারলে গ্রাহক আবার টেলিটকে ফিরবে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল বা এসওএফ ফান্ড থেকে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩শ’ ৮০ কোটি টাকা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক নিয়ে যেতে পারলে টেলিটকের প্রতি মানুষ আবার আগ্রহী হয়ে উঠবে। টেলিটকের নেটওয়ার্ক সমস্যা দূর করাটাই হচ্ছে বড় কথা। সারাদেশে অন্য অপারেটরদের যত বিটিএস আছে টেলিটকের তা নেই। এবার মন্ত্রণালয়েল পক্ষ থেকে টেলিটকের নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। টেলিটকের নেটওয়ার্ক বাড়াতে ইতোমধ্যে ২শ’ বিটিএস স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় আরও ২শ’ বিটিএস স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দুর্গম এলাকার সেবা বঞ্চিতরা উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবা পাবেন। তখন তারা যে সব এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে এক ধরনের সুবিধা পাবেন। মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষার প্রসার ও মেধাবী জাতি তৈরিতে ইন্টারনেটকে ব্যয় নয়, এটিকে রাষ্ট্রের বড় বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। বইয়ের মতো শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট বিনামূল্যে দিতে হবে। ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। শিক্ষার প্রসার ও মেধাবী জাতি তৈরিতে ইন্টারনেটকে ব্যয় নয়, এটিকে রাষ্ট্রের বড় বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। ইতোমধ্যে দেশের ৫৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াইফাই জোন চালু করা হয়েছে। ইন্টারনেট সার্ভিস দেশের বাড়ি বাড়ি পৌঁছানোর পর এই খাতটি শিল্প বাণিজ্যে একটি অভাবনীয় খাতে পরিণত হবে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কর্মীরা ডিজিটাল দেশ রূপান্তরে অগ্রণী সৈনিক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। করোনা দুর্যোগকালে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের লক্ষ্য ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যকে গুরুত্ব দেয়া। টেলিটকের এমডি মোঃ সাহাব উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্গম এলাকার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ টেলিটকের উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধার আতায় আসবে। দুর্গম এলাকা নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ৪শ’ টি বিটিএস স্থাপন করা হচ্ছে। কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। তবে দুর্গম এলাকায় বর্ষায় কাজ কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। বর্ষা শেষ হওয়ার পরপরই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ওইসব এলাকার লোকজন উচ্চগতির ইন্টারনেট পাবেন। পার্বত্য এলাকা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী ও কয়েকটি ছিটমহলে ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ হলে টেলিটকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাবে। জনগণের সুবিধায় জন্য টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। দেশের মানুষের কাছে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতেই মূলত টেলিটকের এই উদ্যোগ। দুর্গম এলাকায় বিটিএস স্থাপন কষ্টসাধ্য এবং বিটিএসগুলো চালু রাখতে কমার্শিয়াল, জেনারেটর ও সোলারের মতো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ওইসব এলাকায় নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবাদাতা এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান বা টাওয়ার কোম্পানিগুলো নেই। মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে এক টাওয়ার থেকে অন্য টাওয়ারে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে ৫ জি প্রযুক্তিতে প্রবেশের জন্য পথ-নক্সা তৈরি সম্পন্ন করেছি। তৃতীয় সাবমেরিন কেবল সংযুক্তির জন্য ইতোমধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের কর্মপরিকল্পনাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দেশের হাওড়, বিল, প্রত্যন্ত এলাকা ও দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলের ৭৭৭টি ইউনিয়ন এখনও উচ্চগিতর ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ এসব ইউনিয়নে উচ্চগিতর ইন্টারনেট দেয়া সম্ভব হবে। যাতে তারাও শহরের সব ধরনের সুবিধা পেতে পারেন।
×