ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে দাঁড়াক বিশ্ব

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১১ জুলাই ২০২০

ঘুরে দাঁড়াক বিশ্ব

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্ব স্বীকৃতির কথা আমরা জানি। আমেরিকার ফোর্বস ম্যাগাজিনে তার সম্পর্কে প্রশংসাবাণী উচ্চারিত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালককে লেখা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে বিপর্যয় রোধে বৈশ্বিক সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই আহ্বান ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং দূরদর্শী বিশ্বনেতাসুলভ সংবেদনশীলতারই প্রকাশ। প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে যে কোন বিশ্ব বিপর্যয় কার্যকরভাবে মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের মতো স্বাস্থ্য বিষয়গুলোতে আরও নীতি ও আর্থিক গুরুত্ব প্রদানে বিশ্বব্যাপী সমন্বয়ের আহ্বান হিসেবে সবাইকে এই সঙ্কটকে সতর্কতা হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।’ বিশ্ব মহামারীর সময় ক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থ চিন্তার বদলে গোটা বিশ্ব মানবতার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ভাবনা ভাবতে পারেন কেবল বিশ্ব পর্যায়ের নেতারাই। নিজের দেশের নাগরিকদের সুরক্ষাদানের বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচ্য, কিন্তু প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য কল্যাণ চিন্তা অনেক বড় বিষয়। বুধবার আইএলও আয়োজিত ‘গ্লোবাল লিডার্স ডে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে একজন আন্তর্জাতিক নেতার উদ্বেগ ও দুঃসহকাল অতিক্রমের পথরেখা প্রদর্শনের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যই প্রতিফলিত হয়েছে। জোরালো বৈশ্বিক সক্রিয়তার তাগিদ থেকে তিনি যথার্থই বলেছেন যে, করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় এখনই সব দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণে একটি জোরালো, সুসমন্বিত বৈশ্বিক সাড়া প্রয়োজন। যেখানে জি-৭, জি-২০, ওইসিডি ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় এ মহাসঙ্কট উত্তরণে সব ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। করোনাভাইরাস প্রথমত স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হলেও পরে এটি হয়ে উঠেছে সামাজিক ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট। ফলে বাংলাদেশ হারিয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ। ক্ষুদ্র শিল্পসমূহ সম্পদ ও বাজার হারিয়ে পঙ্গুদশা। সর্বোপরি সরবরাহ চেন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় কৃষিরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। অভিবাসী শ্রমিক চাকরি হারানোয় উদ্ভূত রেমিটেন্স ঘাটতিতে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সঙ্কট দেখা দেবে নিশ্চিতরূপে। কিন্তু মানুষ কি স্বপ্ন ও মনোবল হারিয়ে হবে পর্যুদস্ত? নিশ্চয়ই নয়। আমাদের বসতি সব সময়েই আশায় ও সংগ্রামে। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক সমস্যা থেকে উত্তরণে সুনির্দিষ্টভাবে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। অভিবাসী শ্রমিকদের চাকরি বহাল রাখার কথা বলেছেন তিনি। আর যদি অব্যাহতি দিতেই হয় তাহলে শ্রমিকদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধাসহ ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য অব্যাহতি-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মহামারীর পরে এই কর্মীদেরই পুনরায় নিযোগ দিতে হবে। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার বিষয়ক এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে বিশ্বনেতাসুলভ ভূমিকা রাখেন। তিনি বর্তমান সঙ্কটে দায়িত্বশীলতা এবং অংশীদারিত্বমূলক মনোভাবের ওপর গুরুত্বারোপ করে ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে মহামারী মোকাবেলায় এক সঙ্গে লড়াই করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানান। সুনির্দিষ্ট পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করতে গিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, প্রতিটি সমাজ থেকে সমন্বিত দায়িত্বশীলতা এবং অংশীদারিত্বমূলক মনোভাব প্রয়োজন। শ্রমিকবান্ধব বিশ্বনেতা শেখ হাসিনার সুচিন্তিত অভিমত ও প্রস্তাবনা আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সঙ্কট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন সেটিই প্রত্যাশিত। তাহলেই বিশ্বকে বদলে দেয়ার লক্ষ্যে আইএলও-র শতবার্র্ষিকীর ঘোষণাটি অর্থবহ হয়ে উঠবে।
×