ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্য খাতে চলমান দুর্নীতির কারণে মানুষ ক্ষুদ্ধ ॥ ওয়ার্কার্স পার্টি

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ১০ জুলাই ২০২০

স্বাস্থ্য খাতে চলমান দুর্নীতির কারণে মানুষ ক্ষুদ্ধ ॥ ওয়ার্কার্স পার্টি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি বলছে, করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে চলমান দুর্নীতির কারণে মানুষ চরম হতাশ ও ক্ষুদ্ধ। শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় একথা বলা হয়েছে। মূলত দলটির পলিটব্যুরো সভায় করোনা সংকটে স্বাস্থ্যখাতে ঘটে যাওয়া নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এ প্রতিক্রিয়া দেখান নেতারা। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে করোনা ভাইরাসের ‘সংক্রমণ চক্রে’র মধ্যে পতিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টির এক প্রস্তাবে বলা হয়, জুলাই মাসের প্রথম দিনে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার এর প্রমাণ। কেবল তাই নয়, এই সংক্রমণ এখন প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছেছে। জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে কোরবানীর হাট ও ঈদে বাড়ি যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এই সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে উর্ধমুখী বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। দলটির নেতারা বলছেন, এই বাস্তবতাতেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি পরীক্ষার জন্য ফি ধার্য করেছে যা মানুষকে করোনা পরীক্ষার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করবে। অন্যদিকে পরীক্ষার ক্ষেত্রে যে সক্ষমতা রয়েছে তার অর্ধেকেও ব্যবহার করা হচ্ছে না। একই সময়ে গত ৪ জুন ঢাকা মহানগরকে ‘রেড’, ‘ইয়েলো’ ও ‘গ্রীণ’ জোনে-এ ভাগ করে সংক্রমিতদের বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হলেও তাও একমাস ধরে দু’টি এলাকা ছাড়া কোথাও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য দোষারোপ করা হলেও কার্যত কর্তৃপক্ষের মনোভাবই তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি না মানতে উৎসাহিত করছে। অথচ এই বাংলাদেশেই সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে ঢাকার টোলারবাগ, মাদারীপুরের শিবচরের মানুষ ‘লকডাউন’ সফল করতে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করেনি কেবল, নিজেরাই তা কার্যকর করতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছে। বস্তুত করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি করেনিকেবল, তাদের ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। আর এই অবস্থায় এন-৯৫ মাস্ক, পিপিই ও আরটি-পিসিআর ক্রয় নিয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল তার নিরসন না হয়ে সরকারি অনুমোদনহীন রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে অনুমোদন, বিনা পয়সার পরীক্ষায় অর্থ আদায় ও সর্বোপরি ছয় হাজারের উপর মিথ্যা সনদ দান মানুষের হতাশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আর এর ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশের বিমান পরিবহন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তেমনি দেশে রেমিটেন্স পাঠানো প্রবাসী শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে ফিরতে পারছে না। তাদের ফিরতি বিমানে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে রেমিটেন্স প্রবাহ অক্ষুণœ রাখতে প্রবাসী শ্রমিকদের চাকুরি বহাল রাখতে বিশ্বের দেশগুলোর সহায়তা চেয়েছেন, সেখানে এধরনের ঘটনাবলী বাংলাদেশের শ্রমিকদের সম্পর্কেই বিদেশে অবিশ্বাস ও সন্দেহ সৃষ্টি করছে। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে বলা হয়, করোনা সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও করোনা সংক্রমণের কারণে ও আতংকে দেশের মানুষের জীবনই যদি অচল হয়ে পরে তা’হলে তার কোন কার্যকারিতা থাকবে না, বরং তা কিছু লুটেরা মালিকেরই স্বার্থসিদ্ধি করবে। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে বলা হয়, কেবল স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা কাজ করছে না, এবার যে বাজেট দেয়া হয়েছে তাতেও কোভিড-১৯-কে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গীত গাওয়া হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে এই করোনাকালের সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা আর এক অমানবিক কাজ। এ বিষয়ে আগামী ১৮ জুলাই শনিবার অনুষ্ঠিতব্য ভার্চুয়াল সেমিনারে তার পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য তুলে ধরবে দলটি। সেমিনারে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, পাট গবেষক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পলিটব্যুরোর সভায় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা যুক্ত হন। বক্তব্য রাখেন, আনিসুর রহমান মল্লিক, ড. সুশান্ত দাস, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, কামরূল আহসান, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী, আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান, নজরুল হক নিলু প্রমুখ।
×