ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চলে গেলেন দেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন

প্রকাশিত: ০১:২৭, ১০ জুলাই ২০২০

চলে গেলেন দেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। মৃত্যুকালে এই প্রবীণ রাজনীতিকের বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা ১৮ আসনের এই সংসদ সদস্য বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২৫ মিনিটে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মারা যান। তিনি কিডনি ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন। তার ব্যক্তিগত সহকারী মুজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অসুস্থ সাহারা খাতুনকে গত ৬ জুলাই এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে থাইল্যান্ডে নেয়া হয়। জ্বর, এ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে অসুস্থ অবস্থায় গত ২ জুন সাহারা খাতুন ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার অবস্থার অবনতি হলে গত ১৯ জুন সকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এর পর অবস্থার উন্নতি হলে তাকে গত ২২ জুন দুপুরে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। ২৬ জুন সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবারও তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন তৃতীয় মেয়াদ জাতীয় সংসদে ঢাকা-১৮ আসনের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। শেখ হাসিনার ২০০৯-১৩ সরকারে প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন তিনি। সাহারা খাতুনের রাজনৈতিক জীবন ॥ বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন সফল রাজনৈতিক সংগঠকের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ ঢাকার কুর্মিটোলা গ্রামে বাবার বাড়িতে তার জন্ম। সাহারা খাতুনের বাবার নাম মরহুম আবদুল আজিজ ও মায়ের নাম তুরজান নেছা। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাইস্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ইস্ট পাকিস্তান বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। সিটি নাইট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তারপর জগন্নাথ কলেজে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। পরে করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণীতে বিএ (ডিগ্রী) অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হলেও তিনি কোর্স শেষ করেননি। ১৯৭৫ পরবর্তী সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন সাহারা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ছাত্রদের মধ্যে একটি নির্বাচনে তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। সেটি ছিল তার জীবনের প্রথম নির্বাচন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা যখন গঠিত হয়, তাতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিনেও তিনি সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ১৯৮১ সাল থেকে আইন পেশা শুরু করেন সাহারা খাতুন। প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। তিনি ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসনে প্রথমবার অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে হেরে যান। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি হন। ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে দেয়া হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ঢাকা-১৮ আসন থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি জয়ী হন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি প্রথমে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মহিলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক এবং একই সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-আইন সম্পাদক, পরে আইন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া স্বাধীনতার পরেই সাহারা খাতুন মহিলা সমিতির সদস্য মনোনীত হন। তখন ড. নীলিমা ইব্রাহিম সভানেত্রী ও আইভী রহমান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, গাজীপুর আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার এ্যাসোসিয়েশনেরও আজীবন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতিরও সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যশানাল এ্যালায়েন্স অব ওমেন্সের ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। রাষ্ট্রপতির শোক ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। শোক বার্তায় তিনি বলেন, সাহারা খাতুন ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত নেতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে তিনি গণতন্ত্রের বিকাশসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অপরিসীম অবদান রেখেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিককে হারাল। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে সাহারা খাতুন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আজীবন কাজ করে গেছেন। দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সকল সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেছেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন দক্ষ নারীনেত্রী এবং সৎ জননেতাকে হারাল। আমি হারালাম এক পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
×