ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার খামারিরা বিপাকে

প্রকাশিত: ০০:২৯, ১০ জুলাই ২০২০

বগুড়ার খামারিরা বিপাকে

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়া জেলায় এবারের কোরবানির পশুর হাটের জন্য ৪ লাখের বেশি পশু প্রস্তুত আছে। যার বেশিরভাগই গরু। তবে করোনার প্রভাবে পশু বিক্রি পুরোটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। মহাবিপাকে পড়েছে খামারিরা। তারা বলছেন প্রতি বছর ঈদ উল আজহার অন্তত দেড় মাস আগে গরুর ব্যাপারীরা গ্রামে খামারিদের কাছে ধর্ণা দিয়ে গরু সংগ্রহের বায়না করে যেত। এবার ব্যাপারীদের আনাগোনা ৮০ শতাংশই কমে গিয়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন এসে দাম দর করে যায়। সেই দামও গত বছরের চেয়ে অনেক কম। এদিকে স্থানীয় হাট বাজারে গোশত বিক্রির গরু বেচাকেনা কমেছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাবে বগুড়ায় ছোট বড় খামারির সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। করোনার আগে খামারিদের মধ্যে দেশী গরুর পাশাপশি ও বিদেশী গরু পালনের প্রবণতা বেড়েছিল। করোনার প্রভাবে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যে গরু পালন করা হয়েছে তা বিক্রির লাভ লোকসান নিয়েই চিন্তায় পড়েছে খামারিরা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসেবে বগুড়ার ডেইরি ফার্মগুলোতে গরুর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার। মহিষ ২ হাজার ২শ’। ছাগল দেড় লাখের বেশি। ভেড়া প্রায় ২৭ হাজার। এর বাইরে গ্রামের গৃহস্থ ও কৃষকের ঘরে গৃহপালিত বেশ কিছু গরু ছাগল আছে। যা তারা লালন পালন করে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির অপেক্ষায় থাকে। তারাও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বগুড়ার কোরবানির পশুর বড় হাটগুলোর মধ্যে আছে মহাস্থান হাট, ঘোড়াধাপ. সাবগ্রাম, নামুজা, রনবাঘা, ওমরপুর, বনানী, সুলতানগঞ্জ কালিতলা। এর বাইরে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে অন্তত ৮০টি হাট বসে। ঈদের অন্তত এক মাস আগে এইসব হাটের ইজারাদাররা প্রস্তুতি নেয়। এবার জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেও কেবল ২০টি হাটের প্রস্তুতির খবর পাওয়া গেছে। ঘোড়াধাপ হাটের প্রবীণ ইজারাদার বললেন জীবনে এই প্রথম দেখছেন কোরবানির পশুর হাটের কোন নড়াচড়া নেই। ব্যাপারীদের গরু বেচাকেনা ধীরগতি। প্রতি বছর বগুড়া অঞ্চল থেকে উল্লেখযোগ্য গরু ঢাকার দিকে যায়। ঢাকার ব্যাপারীরা এসে ট্রাক ভাড়াসহ সকল বিষয়ে পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে যায়। এবার এখনও ঢাকার ব্যাপারী দূরে থাক স্থানীয় বড় ব্যাপারীদের খবর নেই। ঠাকুরগাঁওয়ে ভিড় বাড়ছে নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জেলার পশুর হাটবাজারগুলোয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় বাড়ায় তা জমে উঠতে শুরু করেছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। কারণ মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ছাড়া এবং স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মেনেই চলছে পশু ক্রয়-বিক্রয়। আবার ল্যাম্পি স্কিন নামক গবাদি পশুর নতুন একটি ভাইরাস অন্যান্য জেলার ন্যায় এ জেলাতেও মহামারী আকারে ছড়িয়েছে। এর পরেও হাটবাজারগুলোতে পশুর কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই চলছে ক্রয়-বিক্রয়। বাজারগুলোতে নেই কোন পশু রোগ নির্ণয় করার ব্যবস্থা, নেই প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পশু ডাক্তার বা পর্যবেক্ষণ টিম। এমন অবস্থা চলছে সদর উপজেলার গড়েয়া ও বড়খোচাবাড়িহাট, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী হাট, রাণীশংকৈল উপজেলার নেকরদনহাট, হরিপুর উপজেলার জাদুরানীহাট, পীরগঞ্জের জাবরহাটসহ জেলার বিভিন্ন পশুর হাটগুলোয়। জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২২৭ জন, সুস্থ হয়েছে ১৬০ জন ও করোনায় মৃত্যু হয়েছে দুজনের। অন্যদিকে জেলায় ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসে আড়াই হাজার গবাদিপশু আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে প্রায় ৪০টি গরু। পশুর হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, গরুগুলো কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাজারে প্রবেশ করা হচ্ছে। মাস্ক বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত বলেও মনে করেন তারা। কিন্তু তাও নানা অজুহাত দেখিয়ে মানছেন না কেউ কোন স্বাস্থ্যবিধি। করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতা কম হওয়ায় ও গরুর ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসের কারণে গরুর দাম অনেক কমে গেছে। গত বছর যে গরু বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ হাজার টাকায় সে গরু এবার বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ হাজার টাকায় তাও আবার ক্রেতার সংখ্যা কম। এর ফলে গরু ব্যবসায়ীরা তাদের সংসার কিভাবে চালাবে তা নিয়ে হতাশাব্যক্ত করেছেন। গরুর খামারিরা বলছেন, মানুষের আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য ক্ষুদ্র খামারিদের টিকিয়ে রাখার জন্য গবাদি পশুর খাদ্যের দাম কমিয়ে স্থিতিশীল রেখে ও খামারিদের সাবসিডি এবং প্রণোদনা দিয়ে টিকিয়ে রাখার দরকার বলে মনে করেন তারা। তাই এদিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ করেন তারা। এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন বলেন, কোরবানি ঈদের ১৫ দিন আগ থেকে পশুর হাটগুলোতে তাদের মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। ইতোমধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতারা উভয়েই যাতে উপকৃত হয় তার জন্য সর্বক্ষণিক তদারকি করা হবে। এবার কোরবানির জন্য জেলায় ৮০ হাজার ৫শ’ গবাদি পশু রিষ্ট-পুষ্ট করা হয়েছে। এগুলো জেলার মানুষের চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাবে বলে উল্লেখ করেন। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জেলায় তাদের পর্যাপ্তসংখ্যক ভেটেনারি সার্জন বা চিকিৎসক না থাকায় তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু লালন-পালনকারী বা কৃষকের গরুর সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, ফোন কলের মাধ্যমে তারা সেবা প্রদান করছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না স্বীকার করে বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল ও মানুষের আয় রোজগার ঠিক রাখার জন্য এই হাটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। হাট মানেই জনসমাগম। তারপরেও যতটা সম্ভব সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়াও তিনি সকলকে কোরবানির গরু অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় করার অনুরোধ করেন। অনলাইলে গরু ক্রয়-বিক্রয় করলে হাটে মানুষের সমাগম কম হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সহজ হবে বলে উল্লেখ্য করেন। গাইবান্ধায় জমজমাট পশুর হাট নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে সদর উপজেলার দারিয়াপুরে স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করে জমজমাট কোরবানির পশুর হাট বসেছে। হাটে কোরবানির পশু আমদানি বেশি হলেও ক্রেতার সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম থাকায় বেচাকেনা কম হচ্ছে। ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় বাজারে আসা কোরবানির গরুগুলোর দাম অনেক কম হওয়ায় খামারিরা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে বিক্রেতারা এখনই গরু বিক্রি করতে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে অধিকাংশ গরু আবার পরবর্তী হাটে তোলার জন্য ফেরত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদিকে এই গরুর হাটকে কেন্দ্র করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে আশপাশের গ্রামবাসী ও হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ছড়িতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সদর উপজেলার দারিয়াপুরের পশুর হাট সপ্তাহে শুক্রবার ও মঙ্গলবার বসে। হাটের দিন দুপুর থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক ভর্তি হয়ে হাটে বেচাকেনার জন্য পশু নিয়ে আসা হয় এবং ক্রয় করে তা বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেইসঙ্গে পাইকার, খামারিসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের ব্যাপক সমাগম ঘটে। বেলা যত বাড়তে থাকে পশুর হাটে মানুষের ভিড় ততই বাড়তে থাকে। অথচ হাটে পশু কেনাবেচার ক্ষেত্রে কোন স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
×