ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সব রাজনৈতিক দলকে সোচ্চার হতে হবে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ১০ জুলাই ২০২০

সব রাজনৈতিক দলকে সোচ্চার হতে হবে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগকে বার বার ক্ষমতায় আনতে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন সংশোধন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির কমিউনিকেশন সেল আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, জনগণের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে আজকে একটা জায়গায় আসতে হবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুদ্ধ করে আনার জন্যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। এবং আরেকটি নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে চলে যেতে হবে। আর এই দাবি আদায়ে সকল রাজনৈতিক দলকে সোচ্চার হতে হবে। ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, ওয়ান-ইলেভেন থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, সারাবিশ্ব এখন করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত। মানবিক দুর্যোগ চলছে। মানুষ বাসা থেকে বের হতে পারছে না। এ অবস্থায় ইসি উপনির্বাচন করতে চাইছে। তবে আমরা উপনির্বাচন এখন না করার আহ্বান জানিয়েছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের অপকর্ম সরকারের মদদেই হয়েছে। একটা হাসপাতাল কি করে করোনা টেস্টের মিথ্যা সার্টিফিকেট দিতে পারে। টেলিভিশনে দেখলাম, আমাদের মন্ত্রীরা রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মোঃ সাহেদের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, কাজ করছেন, সে ছবিও দেখা গেছে। অর্থাৎ পুরোপুরি সরকারের মদদ নিয়ে এই অপকর্মটা তারা করেছে। ফখরুল বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সরকারের যে ভূমিকা, সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সবাই তা দেখছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনতে হয় মৃত্যুর খবর, আবার রাতে শোয়ার আগেও শুনতে হয় মৃত্যুর খবর। এভাবে মহামারীতে মৃত্যু হবে কিন্তু কোন রকমের প্রতিরোধ গড়ে উঠবে না এবং চরম উদাসীনতার মধ্য দিয়ে, অবহেলার মধ্য দিয়ে সরকার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে, এটা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। আমাদের জনগণেনর মতামতকে যদি সত্যিকার অর্থেই গুরুত্ব দিতে হয়, সত্যিকার অর্থেই যদি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা তৈরি করতে চাই, সত্যিকার অর্থেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে চাই, তা হলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। সেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে। ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তারা তাদের প্রভুদের ক্ষমতায় রাখার জন্য আইন তৈরি করছে। আসুন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করি। জনগণের কাছে আমাদের যে কমিটমেন্ট আছে সেই কমিটমেন্ট নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং এই সরকারকে চলে যেতে বাধ্য করি। এর পর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করি। আর সংবিধান থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা এবং তাদেরকে ক্ষমতায় রাখার প্রক্রিয়াটি ২০০৭ সালের এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার শুরু করে। বিরাজনীতিকরণের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোকে একেবারে অকার্যকর করতে চেয়েছিল তারা। এখনও পরিকল্পিতভাবে, সচেতনভাবে সেই কাজ চলছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন একইভাবে হয়েছে। এই তিনটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করেছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে এখন বড় ক্রাইসিস হচ্ছেÑএক কোটির বেশি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে, প্রতিদিন অনেক লোক ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে; এদের কিভাবে রক্ষা করা হবে সে বিষয়ে সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই। সরকার টাকার জন্য কি করছে? প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, দেখেন তো ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ থেকে নেয়া যায় কিনা। ‘ক্যান ইউ ইমাজিন’ দেশ কত বড় ক্রাইসিসে পড়লে ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভে হাত দিতে চায়। বিএনপি নেতা জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় নিজ নিজ বাসা থেকে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব আবদুর রশিদ সরকার।
×