ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেদেশের সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য

পাপুল কুয়েতের নাগরিকত্ব পাননি

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১০ জুলাই ২০২০

পাপুল কুয়েতের নাগরিকত্ব পাননি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতের কারাগারে আটক বাংলাদেশের সংসদ সদস্য-এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতের নাগরিকত্ব পাননি বলে জানিয়েছে উপসাগরীয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফরেইনার্স রেসিডেন্টশিপ আইনে তিনি সেখানে বসবাস করছেন এবং একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তাকে পাবলিক প্রসিকিউশনের হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রেফতার ওই বাংলাদেশী কুয়েতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কথা আসছে, তা ‘সঠিক নয়’। বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, পাপুল কুয়েতের নাগরিকত্ব নিয়ে থাকলে লক্ষ্মীপুর- ২ আসনে তার সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। সংসদে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলার পরদিন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছে কুয়েত সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও এর আগে মঙ্গলবার বলেছিলেন, এমপি পাপুল কুয়েতের ‘লোকাল রেসিডেন্ট’। তবে নাগরিক কি-না, সে সময়ে তিনি তখন স্পষ্ট করেননি। বৃহস্পতিবার কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম এমপি পাপুলের নাগরিত্বের বিষয়ে বলেছেন, কুয়েতের নাগরিকত্ব আইন অনেক কড়া। আমার জানা মতে, উনার নাগরিকত্ব নেই। গত কয়েকবছরে এশিয়ার কেউ নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। দীর্ঘদিন ধরে উনি (পাপুল) এখানে রেসিডেন্সি পারমিট নিয়ে থাকেন। এ পারমিট কয়েক বছর পরপর নবায়ন করা লাগে। সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন পাপুল। ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনতে সক্ষম হন। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশীর অভিযোগের ভিত্তিতে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেও বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে পাপুলের। কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে ওই ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশেও তার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। বুধবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় পাপুল প্রসঙ্গ এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে কুয়েতের নাগরিক কি না সেটা কিন্তু কুয়েতের সঙ্গে আমরা কথা বলছি, সেটা দেখব। আর যদি এটা হয়, তাহলে তার ওই সিট হয়ত খালি করিয়ে দিতে হবে। কারণ যেটা আইনে আছে সেটা হবে। তার বিরুদ্ধে আমরা এখানেও তদন্ত করছি। তার ওই বক্তব্য নিয়ে কুয়েতের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোচনার খবর দিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এ বিষয়ে কুয়েত সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানতে চান দেশটির একজন পার্লামেন্ট সদস্য। কুয়েত জাতীয় পরিষদের সদস্য ওসামা আল-শাহীনকে উদ্ধৃত করে এরেম নিউজে বলা হয়, ঘটনার গভীরতা ও নাগরিকত্বের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া উচিত। বাংলাদেশের সংসদে যে আলোচনা হয়েছে, তা সত্য কি-না স্পষ্ট করা দরকার। কুয়েতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার খবরে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল-সালেহকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বড় রকমের দুর্নীতির প্রকাশ ঘটিয়েছে এ (পাপুলকা-) ঘটনা এবং বিষয়টি এখন পাবলিক প্রসিকিউশনের অধীনে রয়েছে। তারা যাদের বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ করবে, যাদের নাম প্রকাশ করতে চাইবে এবং যাদের বিচারের আওতায় আনতে চাইবে, তা করা হবে। সবকিছুর এখতিয়ার পাবলিক প্রসিকিউশনের রয়েছে। দুর্নীতিতে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।
×