ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শেয়ারবাজার

প্রকাশিত: ২১:২৭, ১০ জুলাই ২০২০

স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শেয়ারবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনার আতঙ্ক দূরে ঠেলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে চেষ্টা করছে। টানা ছুটির আমেজ কাটিয়ে ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে শেয়ারবাজার। গত দুইদিন ধরে স্বাভাবিক সময়ে লেনদেন শুরুর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। ফলে দেখা মিলছে বড় উত্থানের। সেই সঙ্গে গতি বাড়ছে লেনদেনেও। দিনটিতে ডিএসইতে মোট ২৯ শতাংশ কোম্পানির লেনদেন বেড়েছে। জানা গেছে, করোনা মোকাবেলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও অফিস, দোকান, শপিংমল, রেস্তরাঁ সবকিছুই খুলছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষেরও বাহিরে বের হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছে ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে প্রায় সাড়ে তিন মাস পর বুধবার স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরেই মূল্য সূচকের বড় উত্থানের দেখা মিলে। সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনও। বুধবারের উত্থানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে বৃহস্পতিবারও। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন। আগের দিনের ধারাবাহিকতায় ডিএসইতে লেনদেনের শুরুটাই ছিল ইতিবাচক। সকাল দেখেই যেমন বোঝা যায় বাকিটা সময় কেমন যাবে? ঠিক দিনের লেনদেনের শেষদিকে সূচকের উর্ধমুখী প্রবণতা বাড়ে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ ১০ পয়েন্ট বেড়ে ৯৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর এক সদস্য বলেন, টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। তবে যে হারে লেনদেন হচ্ছিল তা খুবই হতাশাজনক। অবশ্য বুধবার থেকে বাজারে স্বাভাবিক লেনদেন চালুর পর দুইদিন তুলনামূলক ভাল লেনদেন হয়েছে। আশাকরি আস্তে আস্তে বাজারে গতি ফিরে আসবে। তিনি বলেন, করোনার প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই সব ধরনের অফিস খুলছে। কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে। যদিও আগের অবস্থা নেই এরপরও অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলছে। এর ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাছাড়া অনেক ভাল ভাল কোম্পানির শেয়ার দাম অনেকদিন ধরেই ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক। বিনিয়োগকারী আক্কাস আলী বলেন, অনেকদিন পর শেয়ারবাজারে পর পর দুইদিন মোটামুটি বড় উত্থান দেখলাম। এতে কিছুটা ভাল লাগছে। কিন্তু প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়। মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে বাহিরে বের হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অনিশ্চয়তা কাটছে না। সে কারণে দুই দিনের উত্থানেই শেয়ারবাজার নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সময় এখনও আসেনি। সূচকের বড় উত্থান হলেও এদিনও লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অবশ্য ডিএসইতে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে তার থেকে দ্বিগুণের বেশি প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেয়া ১০৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। এর মাধ্যমে পর পর দুই দিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ল। শতাধিক প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার দিনে দরপতন হয়েছে ৪৫টির। আর ২০১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৩১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এ হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৬ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্রামীণফোনের ২৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ১৫ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮৭ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ১৯৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৯টির, কমেছে ২৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১৮টির।
×