ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ের ঘটবর কেঁচো সারের গ্রাম ॥ নারীরা স্বাবলম্বী

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ৯ জুলাই ২০২০

পঞ্চগড়ের ঘটবর কেঁচো সারের গ্রাম ॥ নারীরা স্বাবলম্বী

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ে পঞ্চগড়ের গ্রামের নারীরা ভার্মি কম্পোজড বা কেঁচো সার উৎপাদন করে একদিকে তাদের ক্ষেত-খামারে ব্যবহার করার পাশাপাশি এর বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে স্বচ্ছলভাবে সংসার চালাচ্ছেন। গ্রামের প্রত্যেক নারীই এই পেশার সংগে জড়িত থেকে পুরো গ্রামের চিত্রই পাল্টে দিয়েছেন। করোনাকালীন এই দুর্যোগে গ্রামের একশ‘টি পরিবার এখন বেশ স্বাবলম্বী। প্রত্যেকের বাড়ির উঠানে সিমেন্টের রিংয়ে সারিবদ্ধভাবে ভার্মি কম্পোজড বা কোঁচো সারের ছোট ছোট খামার। এই খামারে নারীরা নিজেরাই সার উৎপাদন এবং বাজারজাত করছেন। কেঁচো সারের বাজারে ব্যাপক চাহিদা ব্যাপক চাহিদা থাকায় খুব সহজেই বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অনেকে ওই গ্রাম থেকেই সার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সংসারের স্বচ্ছলতা যেমন ফিরে আসছে তেমনি গ্রামের প্রত্যেকের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতিও ঘটেছে । গ্রামের নারীরা শুধু কেঁচো সার উৎপাদন করে বাজারে বিক্রিই করছেন না বিষমুক্ত ফল-ফসল ও সবজি চাষেও এই সার প্রয়োগ করছেন। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত ফসল চাষে গ্রামের প্রত্যেকেই ফল-ফসলে ব্যবহার করছেন ভার্মি কম্পোজড ও জৈব বালাইনাশক। চারদিকে যখন ফল-ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ছড়াছড়ি, তখন আশার আলো জুগিয়েছে সদর উপজেলার ঘটবর গ্রামটি । গোটা গ্রামের প্রত্যেকে পরিবারেই এখন বিষমুক্ত ফল-ফসল ও শাক-সবজি উৎপাদন করছেন। এই পদ্ধতিতে ফসল চাষ করে বেশ সাড়াও পেয়েছেন গ্রামের কৃষক। এতে ফসল উৎপাদনে যেমন কম খরচ হচ্ছে তেমনি বাজারেও ফল, ফসলের ভালো দামও তারা পাচ্ছেন। তেমনি ক্রেতারাও পাচ্ছেন বিষমুক্ত ফল-ফসলাদি। গ্রামের কেঁচো সার উৎপাদনকারী নাজমা বেগম জানান, করোনার সময় মাঠে কাজ না থাকায় তার স্বামী এক প্রকার বেকার হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় কেঁচো সার বাজারে বিক্রি করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে বলে তিনি জানান। ওই গ্রামেরই সাবানা বেগম বলেন, স্বামীর আশায় বসে না থেকে নিজেরাই আমরা ভার্মি কম্পোজড উৎপাদন করছি। নিজের জমিতে এই সার ব্যবহার করে বিষমুক্ত ফল-ফসলাদি উৎপাদনের পাশাপাশি ভার্মি কম্পোজড বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচও যোগান দিচ্ছি। মিলা রানী জানান, আমরা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের নারীরা কেঁচো সার উৎপাদন করে প্রতিকেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। জেলার অনেক কৃষকই আমাদের বাড়িতে এসে কেঁচো সার ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন এনজিও ও এগ্রোবেজ কোম্পানিগুলোও কেঁচো সার ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান। জেলা কৃষি বিভাগের কারিগরি সহযোগিতায় এবং ঘটবর সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নারীরা কেঁচো কম্পোজড উৎপাদন করছেন এবং সমিতির মাধ্যমে খুব সহজেই দরিদ্র এসব পরিবারের নারীরা উৎপাদনকৃত কেঁচো কম্পোজড বাজারজাত করতে পারছেন বলে ঘটবর সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি রাজু আহম্মেদ জনকণ্ঠকে জানান। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ১ হাজার পরিবার ভার্মি কম্পোজড উৎপাদন করছে। শুধু সদর উপজেলায় ৪শ‘ পরিবার ভার্মি কম্পোজড করে কৃষকদের জৈব বালাইনাশক পদ্ধতিতে (বিষমুক্ত) কৃষি পণ্য উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছেন। .
×