ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাসে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য আসে দেড় লাখ কেজি

যশোরে কম দামের আটা বেশি দামে বিক্রি

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ৯ জুলাই ২০২০

যশোরে কম দামের আটা বেশি দামে বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য মাসে প্রায় দেড় লাখ কেজি আটা স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। যার খোঁজ প্রকৃত দরিদ্র মানুষ জানেন না। ডিলাররা সামান্য পরিমাণে এ আটা বিতরণ করে বাকিটা বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদেরও কোন তদারকি নেই। এ কারণে দরিদ্রদের জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর অর্থনৈতিক সুফল ভোগ করছেন ডিলাররা। সূত্র জানায়, বছরের পর বছর সরকারীভাবে যশোর পৌর এলাকায় স্বল্পমূল্যে আটা বিতরণ কার্যক্রম চলছে। বর্তমান সরকার দরিদ্র মানুষের জন্য এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। যাতে তারা কম দামে আটা কিনতে পারেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গরিব মানুষই এ কর্মসূচীর খোঁজ জানে না। কিছু সংখ্যক মানুষ জানতে পেরে আটা কিনতে ডিলারদের কাছে গেলেও তাদেরকে দেয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি তাদের সঙ্গে অনেক সময় অশোভন আচরণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ প্রতি মাসে খাদ্য বিভাগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ আটা ডিলাররা উত্তোলন করছেন। যা তারা সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি না করে বেশি দামে পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন বলে অনেকে অভিযোগে জানিয়েছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় সরকারীভাবে যশোর শহরের ১১টি পয়েন্টে কম দামে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। যা বছরের পর বছর চলমান রয়েছে। এ কাজের জন্য ১১ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। ডিলাররা হলেন, শহরে ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে সাবেক এমপি আলী রেজা রাজুর বাড়ির মোড়ে রবিউল ইসলাম, পুরাতন কসবা ফাতিমা হাসপাতাল এলাকায় হাসান ইকবাল, ধর্মতলা এলাকায় রোকন ব্যাপারী, বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় আবুল কাশেম, ঝুমঝুমপুর এলাকায় নিতাই চন্দ্র সাহা, বড়বাজার আটাপট্টি এলাকায় শ্যামল কুমার সাহা, রেলগেট এলাকায় বাহাউদ্দীন, চারখাম্বা মোড়ে তোতা মিয়া, বেজপাড়া তালতলা মোড়ে গোলাম মোস্তফা, বকচর এলাকায় সালাউদ্দীন ও মুজিব সড়কে লাইজুজামান। এসব ডিলারের পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। তারাই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের গরিবদের মাঝে ১৮ টাকা কেজি দরে এ আটা বিক্রি করবেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা না করে নামমাত্র সপ্তাহে একদিন আটা বিক্রি করছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। খাদ্য বিভাগ জানায়, শহরের ১১ জন ডিলারের মধ্যে থেকে প্রতিদিন পাঁচজনকে পাঁচ মেট্রিক টন বা পাঁচ হাজার কেজি করে আটা বরাদ্দ দেয়া হয়। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ছয়দিন চলে বিতরণ কার্যক্রম। এ হিসেবে প্রতি মাসের ছাব্বিশ দিনে ডিলাররা পেয়ে থাকেন ১৩০ মেট্রিক টন বা এক লাখ ত্রিশ হাজার কেজি আটা। যা তাদের পৌর এলাকায় গরিবদের মাঝে ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার নিয়ম রয়েছে। অভিযোগকারীরা বলেন, একজন একসঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি আটা একবারে কিনতে পারবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ডিলাররা কোন নিয়ম নীতি মানছেন না। তারা নিজস্ব নিয়মে আটা বিক্রি করে চলেছেন। ১১ জন ডিলারের অধিকাংশই পর্যায়ক্রমে ৯টি ওয়ার্ডে সপ্তাহে একদিন করে এ আটা বিক্রি করছেন। বাকি আটা তারা পাইকারি বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, আটা কিনতে গেলে ডিলাররা তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও খারাপ ভাষা প্রয়োগ করেন। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। তারা সরকারী নিয়ম মেনে আটা বিক্রি করবেন বলে ডিলারশিপ নিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে সরকারী এ সুবিধা ভোগ করবেন দরিদ্র মানুষ। কিন্তু বাস্তবে এ চিত্র উল্টে গেছে। গরিব মানুষ ডিলারদের কাছে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে আটা কিনতে পারছেন না। তাদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ ডিলাররা গরিবের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে পাইকারি বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। শহরের বড়বাজার আটাপট্টিতে এ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে মিল মালিক সিন্ডিকেটও। তবে পুরাতন কসবার ডিলারের প্রশংসা করেছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, সপ্তাহে তারা তিন থেকে পাঁচ দিন আটা কিনতে পারেন। শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোড এলাকার ডিলার রবিউল ইসলাম সপ্তাহে একদিন এ আটা বিক্রি করেন। শনিবার তার নির্ধারিত দিন সকাল ৯টা থেকে বিক্রি শুরু করে দুপুর ১২টায় শেষ করে দেন। কিন্তু তার বরাদ্দকৃত এক মেট্রিক টন বা এক হাজার কেজি আটা তিন ঘণ্টায় কিভাবে শেষ হয় সেটিই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর তিনি কাউকে আটা দেন না। অবশ্য ১২টার পর থেকে তিনি একইস্থানে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি শুরু করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি বেশি দামে কোন আটা বিক্রি করছেন, সেটি মেলানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অভিযোগ রয়েছে, লাইনে দাঁড়ানো মানুষের সঙ্গে তিনি খারাপ আচরণ করতেও দ্বিধা করেন না। যা নিয়ে তার বিরুদ্ধে অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষোভের কথা গরিব মানুষ কোথায় জানাবে সেটিও জানেন না। এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি নিয়ম মেনেই সরকারী কর্মসূচীর আটা বিক্রি করেন। সপ্তাহে একদিন শনিবার তার বরাদ্দের যে টুকু আটা থাকে, সেটাই তিনি ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। চালের বরাদ্দ শেষ হওয়ায় বর্তমানে আটার চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে বিক্রিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একদিনে সবার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এ নিয়ে অভিযোগ আসতে পারে বলে তিনি দাবি করেন। এ বিষয়ে জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক লিয়াকত আলী বলেন, ২০১১-২০১২ অর্থবছর নাগাদ খাদ্যবান্ধব আটা বিতরণ কর্মসূচী শুরু হয়। বর্তমানে যশোর পৌর এলাকার ১১জন ডিলার এ আটা বিক্রি করছেন। প্রতি দিন পাঁচজন ডিলার পাঁচ মেট্রিক টন বরাদ্দ পান। এগুলো ডিলাররা সমন্বয় করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিক্রি করেন। এ নিয়ে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে, তবে তিনি তদারকি কর্মকর্তা পাঠিয়ে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
×