ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আফসারুল আলম মামুন

নিঃশব্দ ক্রন্দন

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ৯ জুলাই ২০২০

নিঃশব্দ ক্রন্দন

মধ্যবিত্ত মানে বিলাসিতাহীন জীবনে নিত্যদিনের টানাপোড়ন। মধ্যবিত্ত মানে আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখা। মধ্যবিত্ত মানে সকল কিছুর উপর চক্ষুলজ্জা স্থির রাখা। তাই এই মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষেরা হাজারো হাহাকারের মাঝে মুখ লুকিয়ে হাসতে জানে। এরা কখনোও মাথা নত করতে জানে না। ধনীর ধন আছে, গরিবের আছে ত্রাণ। মধ্যবিত্তের কিছুই নেই। আছে শুধু প্রাণ। কিন্তু এই প্রাণটাও তুচ্ছ। কারণ এদের কাছে যায় যাক প্রাণ তবু সম্মানটা আগে। এরা জীবন সংগ্রামের গভীর সমুদ্রে হাবুডুবু খাবে তবু পালটা কখনো ছাড়বে না। কারণ এরা বাঁচার মাহাত্ম্য জানে। এরা লড়াই করতে জানে। সৃষ্টিকর্তা যখন সুযোগ দেয় এরা পাঁচতারা হোটেলের খাবার খেতে যেমন পটু, অভাবে দুইবেলা না খেয়ে থাকাতেও এরা দৃঢ়। কারণ এরা জানে যে ক্ষুধামুক্তির স্বাদ পেতে ক্ষুধার জ্বালা সইতে হয়। সকল পরিস্থিতিতে জীবন মানানোর ক্ষমতা যেন সৃষ্টিকর্তা তাদের রন্ধ্রে আটকে রেখে দিয়েছে। যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতেও এই সমাজের মানুষেরা পেটে ক্ষুধা নিয়ে মুখে আন্তরিকতার হাসি হাসতে জানে। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই এরা হাতাশায় নিমজ্জিত। স্বাভাবিক সময়েই দেখা যায় উপার্জিত টাকা দিয়ে মাসটাকে শেষ করা সম্ভব হয় না। প্রতি মাসেই টানাপোড়েন লেগেই থাকে। কিন্তু যখন কোন উপার্জনই থাকে না তখন এই শ্রেণীর মানুষেরা না পারে গরিবের বেশে রাস্তায় নামতে, না পারে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে। জীবিকা বন্ধ থাকলেও কিন্তু গ্যাস বিল দেয়াটা বন্ধ নেই, বন্ধ থাকে না বিদ্যুত বিলের হিসাবটাও। এনজিও কর্মীরা প্রতিদিনই কিস্তির জন্য চাপ দেয়। পরিবারের বড় মেয়েটার জামাটা ছিঁড়ে গেছে। লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ছোট ছেলেটা করোনার কষ্ট বুঝতে পারে না। সে সাধারণ শাকপাতার খাবার খেতে চায় না। মধ্যবিত্ত সমাজে এসব গল্প আজ নিত্যদিনের। কাজ না থাকায়, মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারিয়ে ফেলছে। যার ফলে কর্মস্থল রেখে এখন গ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। গ্রামে যাওয়ার পর দেখা যায় সেখানেও হাতে নেই কাজ আর পকেটে নেই টাকা। জীবিকার কোন ধরনের উৎস না থাকায় জীবন বাঁচানো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। তবু এদের আছে আত্মাসম্মানবোধ। এদের আছে এক বুক সাহস, এদের আছে সম্মান ধরে রাখার নিরন্তর প্রচেষ্টা। এরা হারতে জানে না। এদের ক্ষুধার জ্বালায় কান্না আসলেও এই কান্না কেউ শুনতে পায় না। এরা নীরব কান্নায় না খেয়ে ঘুমাতে পারে। ঘুমানোর সময় আগামীকালের প্রস্তুতি নেয়। ঘুম থেকে উঠে আবার লড়া শুরু। তারপরও হাত পেতে কিছু নেবে না। ১০ কেজি দরের চাল চোররা গরিবের হক মারলেও এমন পরিস্থিতিতে তারা ত্রাণ তুলতেও লজ্জা পায়। তারা ভাবে আমি তো আধপেট খেতে পারি যারা কিছুই পারে না, চালটা তাদের, ত্রাণটা তাদের। যার কারণে পেটে ক্ষুধা রেখেও বীরদর্পে রাস্তায় চলাচল করে। দিনশেষে আবারও তারা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখে। ময়মনসিংহ থেকে
×