ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী হাসপাতালের চাপ কমিয়েছে ১০ ফিল্ড হসপিটাল ও আইসোলেশন সেন্টার

চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু ২শ’ ছাড়াল, নতুন আক্রান্ত ২৯৫

প্রকাশিত: ২৩:২০, ৯ জুলাই ২০২০

চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু ২শ’ ছাড়াল, নতুন আক্রান্ত ২৯৫

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় সরকারী হাসপাতালের ওপর চাপ কমেছে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারগুলো। এতে উপকৃত হচ্ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে ভোগান্তিতে থাকা রোগীরা। এদিকে, চট্টগ্রামে নতুন করে আরও ২৯৫ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সংক্রমিতের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৭২। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০০। তবে আক্রান্তের হার এখন স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চট্টগ্রামে সরকারী পর্যায়ে করোনার চিকিৎসা চলছে ৪টি হাসপাতালে। এগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল। এর মধ্যে রেলওয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা তুলনামূলকভাবে সীমিত। সরকারী হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছিল। তবে পর্যায়ক্রমে বেশকটি ফিল্ড হাসপাতাল এবং আইসোলেশন সেন্টার গড়ে ওঠায় রোগীদের সরকারী হাসপাতাল নির্ভরতা কমেছে। এছাড়া আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালসহ বেসরকারী হাসপাতালগুলোও এখন চিকিৎসা দিতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা এখন ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ১০টি সেন্টার রয়েছে, যেখানে আইসোলেশন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে রয়েছে ফৌজদারহাটে ডাঃ বিদ্যুত বড়ুয়ার উদ্যোগে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সিটি কনভেনশন হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত আইসোলেশন সেন্টার, সীতাকু-ে আবুল খায়ের গ্রুপ পরিচালিত আইসোলেশন সেন্টার, বিজিএমইএ পরিচালিত হসপিটাল, পতেঙ্গায় সিএমপি-বিদ্যানন্দ ফিল্ড হসপিটাল, হালিশহরে আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল, বাকলিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরী পরিচালিত হাসপাতাল, কুইন্স কমিউনিটি সেন্টার হসপিটাল এবং বাঁশখালীতে স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পরিচালিত একটি হাসপাতাল। এছাড়া সম্পূর্ণ মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে গড়ে উঠছে আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল এবং আইসোলেশন সেন্টার। এ সকল চিকিৎসা কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় রোগীরা আস্থাও রাখছেন এই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর ওপর। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বি জানান, ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠন পর্যায়ে ফিল্ড হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র ও আইসোলেশন সেন্টার গড়ে ওঠায় সরকারী হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমেছে। তিনি এ ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, দুর্যোগকালে এভাবেই এগিয়ে আসার নজির বাংলাদেশে রয়েছে। এ করোনাকালেও তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি চিকিৎসা কেন্দ্রই সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রাখায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সহায়ক হয়েছে। সরকারী হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ শয্যা রয়েছে, ব্যক্তি উদ্যোগের হাসপাতালগুলোর শয্যাসংখ্যা তার চেয়ে বেশি। চট্টগ্রামের ১২ বেসরকারী হসপিটালকে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করার পর সেখানকার চিকিৎসার চিত্র প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, এখন সকল হাসপাতালেই কোভিড, নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা চলছে। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের বড় ধরনের ইউনিট রয়েছে করোনা চিকিৎসায়। এছাড়া অন্য বেসরকারী হাসপাতালগুলোতেও কমবেশি করোনা রোগী চিকিৎসা পাচ্ছে। মঙ্গলবার বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে ৯১ জন কোভিড রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এছাড়া করোনা সন্ধিগ্ন রোগী রয়েছে ২৮৬ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ৪৭ রোগী। হাইফ্লো নেজাল অক্সিজেন সেবায় রয়েছেন ৩৯ রোগী। তিনি বলেন, প্রতিদিনের পরীক্ষায় নতুন করোনা রোগী যেমন শনাক্ত হচ্ছে, তেমনিভাবে চিকিৎসা প্রদানের সক্ষমতাও বাড়ছে। বুধবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ৪৭১টি, যার মধ্যে পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ২৯৫। আক্রান্তের হার ২০ দশমিক ০৫ শতাংশ। গত প্রায় সপ্তাহখানেকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আক্রান্তের হার স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে, যা ১৯ থেকে ২১ শতাংশের মধ্যে। ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে মারা গেছেন ৬ করোনা রোগী। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ২০৪ জনে, যার মধ্যে ১৪৫ জন মহানগর এলাকার এবং ৫৯ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। মঙ্গলবার ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডিতে ২৭৭ নমুনা পরীক্ষায় ১৩, সিভাসুতে ২০৩ নমুনা পরীক্ষায় ২৮, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ৫৩৪ নমুনা পরীক্ষায় ১১৫, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ল্যাবে ১৮৩ নমুনা পরীক্ষায় ৫৬ এবং বেসরকারী ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে ১৯০ নমুনা পরীক্ষায় ৩৯ ও শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবটেরিতে ৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এদিন আক্রান্ত শনাক্ত ২৯৫ জনের মধ্যে ২১৬ জন মহানগর এলাকার এবং ৭৯ জন বিভিন্ন উপজেলার। মহানগরের বাইরে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী পাওয়া গেছে হাটহাজারী উপজেলায়। এদিন হাটহাজারী উপজেলায় ২৭, রাউজানে ১০, চন্দনাইশ ও ফটিকছড়ি উপজেলায় ৮ জন করে, পটিয়ায় ৬ জন, রাঙ্গুনীয়ায় ৫ জন, মীরসরাই ও সীতাকু-ে ৪ জন করে, লোহাগাড়া ও সন্দ্বীপে ২ জন করে এবং সাতকানিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালিতে ১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
×