ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বান্দরবানে ৬ হত্যাকা-, এক লাশ পরিবারে হস্তান্তর

পাহাড়জুড়ে শঙ্কা, যে কোন সময় প্রতিশোধ!

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৯ জুলাই ২০২০

পাহাড়জুড়ে শঙ্কা, যে কোন সময় প্রতিশোধ!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ও নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান ॥ খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটির পর শেষ পর্যন্ত বান্দরবানেও বিস্তৃত হলো জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বিরোধীয় দু’গ্রুপের আধিপত্যের লড়াই। মূলত এ কারণেই মঙ্গলবার বান্দরবানে জেএসএসের এমএন লারমা গ্রুপের ৬ নেতাকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকা-ের নেপথ্যে রয়েছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি গ্রুপ। বুধবার বিষয়টি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার বিপরীতে পাল্টা একটি বড় ধরনের প্রতিশোধ নেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। এদের পরবর্তী অবস্থান রাঙ্গামাটিতে। বান্দরবানে এ গ্রুপের জেলা সমন্বয়ক রতন তঞ্চঙ্গার নেতৃত্বে তাদের কার্যকলাপ বিস্তৃত করার তৎপরতা ছিল। কিন্তু বিষয়টি জেএসএস সন্তু গ্রুপ মোটেই ভালভাবে নেয়নি। কিছুদিন আগে নিহত রতন তঞ্চঙ্গার বাড়িতে গুলি করে জানান দেয়া হয় যে, তারা যেন তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি না ঘটায়। কিন্তু এমএন লারমা গ্রুপ তাদের কর্মকা- বিস্তৃত করার চেষ্টায় তৎপর ছিল। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবারের এ হত্যাকা- ঘটল। এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য তিন জেলায় ৫ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই বিদ্যমান। সন্তু লারমা অনুসারীদের ব্রাশফায়ারে লারমা গ্রুপের ৬ শীর্ষ নেতার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয়দের মনে নতুন রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কা সৃৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবারের ঘটনার পর বান্দরবান থেকে জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক উবামু মার্মা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে গত তিন বছরে তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৮৭ জন। এর মধ্যে গত দুই বছরে বান্দরবানে শুধু মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাহাড়ী আঞ্চলিক দল নিজেদের আধিপত্য বিস্তৃত করার চেষ্টায় মরিয়া। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে এদের একেক গ্রুপের একেক স্থানে যেভাবে আধিপত্য রয়েছে বান্দরবানে তা তুলনামূলকভাবে কম। এ প্রক্রিয়ায় রতন তঞ্চঙ্গাকে জেএসএস লারমা গ্রুপের জেলা সমন্বয়ক করে গ্রুপের তৎপরতা বিস্তৃত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। তার সঙ্গে মঙ্গলবার অপর যে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছে তারা এসেছিল খাগড়াছড়ি থেকে। ৬ জনই লারমা গ্রুপের শীর্ষ নেতা। এক লাশ পরিবারে হস্তান্তর ॥ এদিকে বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার বাগমারা এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে ছয়জন নিহতের মধ্যে একজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় জেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলার ৬ নং নোয়াপতং ইউনিয়নের মেম্বার মিচি মার্মা বলেন, ঘটনার পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ৬ নিহতের ময়নাতদন্ত শেষ হলে গুলিতে নিহত জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের বান্দরবান জেলা সমন্বয়ক রতন তংচঙ্গ্যার (৫০) লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। অন্যদিকে সংগঠনটির খাগড়াছড়ি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য চিং থোয়াইঅং মারমা ডেভিড (৫৬), পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির খাগড়াছড়ির সদস্য রবীন্দ্র চাকমা মিলন (৫০), পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির খাগড়াছড়ির সদস্য রিপন ত্রিপুরা জয় (৩৫) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির খাগড়াছড়ির সদস্য জ্ঞান ত্রিপুরার (দিপেন) (৩২) লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ৬ হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। অপরাধীদের ধরতে কাজ করছে যৌথবাহিনী।
×