ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘গ্লোবাল লিডার্স ডে’ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

করোনা সঙ্কট উত্তরণে এখনই জোরালো বৈশ্বিক সাড়া দরকার

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৯ জুলাই ২০২০

করোনা সঙ্কট উত্তরণে এখনই জোরালো বৈশ্বিক সাড়া দরকার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কোভিড-১৯ মহামারীর সঙ্কট মোকাবেলায় এখনই সব দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংস্থা ও বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণে একটি জোরালো, সুসমন্বিত এবং বৈশ্বিক সাড়া প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আইএলও আয়োজিত ‘গ্লোবাল লিডার্স ডে’ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। খবর বাংলানিউজের। প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সঙ্কট উত্তরণের জন্য তিনটি প্রস্তাবও দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় এখনই সব দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংস্থা ও বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণে সারাবিশ্বে একটি জোরালো ও সুসমন্বিত সাড়া প্রয়োজন। যেখানে জি-৭, জি-২০, ওইসিডি ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় এ সঙ্কট উত্তরণে সব ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। স্বতন্ত্রভাবে সবার জন্য উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত কঠিন কিন্তু আমরা সবাই একত্রে এটি করতে পারি। কোভিড-১৯ মহামারীর থাবায় ক্ষতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই বৈশ্বিক দুর্যোগ বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা আমাদের বিশ্বায়ন ও কানেকটিভিটিকে হুমকিতে ফেলেছে। কোভিড-১৯ মহামারী এখন কেবল স্বাস্থ্য সমস্যা নয় বরং এটি এখন পূর্ণাঙ্গ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কটে রূপ নিয়েছে। এই মহামারীতে আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সরবরাহ চেন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ হারিয়েছি, আমাদের অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, লাখ লাখ শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছে। আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পগুলো তার বেশিরভাগ সম্পদ ও বাজার হারিয়েছে এবং সর্বোপরি সরবরাহ চেন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় আমাদের কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোনরকম বৈষম্যমূলক আচরণ না করেই কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। তবে এর বিরূপ প্রভাবগুলো দুর্বল, অভিবাসী ও নারী শ্রমিকদের ওপর বেশি পড়ছে, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। চলমান করোনা সঙ্কটে শ্রমিক সমস্যাগুলো উত্তরণে তিনটি প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১. এই সঙ্কটের সময় বিদেশের বাজারে অভিবাসী শ্রমিকদের চাকরি বহাল রাখতে হবে। ২. যদি অব্যাহতি দিতেই হয় তবে শ্রমিকদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধাসহ ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য বরখাস্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. মহামারীর পরে অর্থনীতিকে সক্রিয় করতে এই কর্মীদের পুনরায় নিয়োগ দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী বিভিন্ন দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, বিশেষ করে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রমিকরা। উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে এবং যার ফলে রেমিট্যান্সে ঘাটতি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রেমিট্যান্স আমাদের মূল উপাদান। বর্তমানে বিপুলসংখ্যক বেকার অভিবাসী শ্রমিকের প্রত্যাবর্তন একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রমাণিত। বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যত বাণী করেছে, আমরা ২০ শতাংশের বেশি রেমিট্যান্স আয় হারাব। শতবর্ষ উপলক্ষে আইএলওর ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে আমরা সবাই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, জনসংখ্যার পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বায়নের মাধ্যমে বিশ্বকে বদলে দেয়ার কথা বলেছিলাম। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের আশ্রয়ে থাকা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা মহামারী সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী সঙ্কট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রণোদনা হিসেবে অর্থনৈতিক ও সমাজের বিভিন্ন সেক্টরের মানুষকে সহযোগিতা করতে ১২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের ( এক হাজার দুই শ’ দশ কোটি মার্কিন ডলার) সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করি। এই সহায়তা প্যাকেজ আমাদের জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশের সমান। রফতানিশিল্পের শ্রমিকদের মজুরি দিতে এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীতে বেকার হওয়া পাঁচ কোটির বেশি মানুষকে সরাসরি নগদ এবং অন্যান্য সুবিধা দেয়া হয়েছে। বিশ্ব নেতাদের মধ্যে জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান প্রায়ুথ চান-ওচা, সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফবেন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তা দেন।
×