ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি

প্রকাশিত: ২২:২৮, ৮ জুলাই ২০২০

উত্তরে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পানি কমতে শুরু করছে উত্তরের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে। তবে বানভাসিদের দুর্ভোগ কমেনি। এখনও পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে উত্তরের সব কটি নদীর পানি কমছে। এখন বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। আগামী কয়েকদিন এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। ইতোমধ্যে পানি কমে স্বাভাবিক উচ্চতায় নেমে আসছে অধিকাংশ নদ-নদীর পানি। ফলে আগামী দু’তিনদিনের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। তবে তিন থেকে চারদিন পর আবারও বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, ঘাঘট, তিস্তা, কুশিয়ারা, সুরমা ও পুরাতন সুরমার পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে কমছে পদ্মা, আত্রাই, ধলেশ্বরীর পানিও। ফলে এসব নদীর অববাহিকায়ও বন্যা পরিস্থিতিও উন্নতির দিকে। দু’তিনদিনের মধ্যে এসব নদ-নদীর পানিও বিপদসীমার নিচে নেমে আসবে। ফলে আরও উন্নতি হবে সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঢাকা, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ এবং শরীয়তপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি। তবে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যা কবলিত মানুষের। নিম্ন চরাঞ্চলের মানুষ এখনও পানিবন্দী রয়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসাসহ গো খাদ্যের সঙ্কট। বন্যায় ক্ষেতের ফসল, গবাদি পশু-পাখি, পুকুরের মাছ হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতিতে পড়েছে এসব মানুষ। বাড়ছে নদী ভাঙ্গন। কুড়িগ্রাম ॥ বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। ধরলা তিস্তা ব্রক্ষপুত্রসহ প্রতিটি নদ নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমে গেলেও বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও অপ্রতুল ত্রাণের কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। ভীষণ চাপে রয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। বগুড়া ॥ সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় যমুনা ও বাঙালীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। তবে উজানী ¯্রােতের তোড় বেড়েছে। যমুনার ভেতরের নিচু এলাকায় দুর্গম ২২টি চরের প্রায় ১৭ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ও বুধবার পানি কমবে তারপর উজানে মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলে অসম ও মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলের ধারায় ফের পানি বাড়তে পারে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র তিস্তা যমুনা অববাহিকার প্রতিটি এলাকায় বড় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বগুড়া সিরাজগঞ্জ গাইবান্ধা কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট নীলফামারী রংপুরের বড় এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়বে। গাইবান্ধা ॥ ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও তিস্তার নদীর পানি কমতে শুরু করলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে এখনও পানিবন্দী মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার কিছুটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া, শ্রীপুর, হরিপুর, গাইবান্ধার সদরের কামারজানি, ফুলছড়ির কাতলামারি, সিংড়িয়া, কামারপাড়া এবং সাঘাটার গোবিন্দি ও হলদিয়ার বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ভাঙনের ফলে গত তিনদিনে সাড়ে ৩শ’ ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। টাঙ্গাইল ॥ বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নদীর পানি কমলেও ভাঙন অব্যাহত আছে। মঙ্গলবার যমুনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ঝিনাই নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নদীর পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাঁদপুর ॥ শহর রক্ষা বাঁধের পুরানবাজার হরিসভা এলাকায় নতুন করে আবারও ফাটল দেখা দিয়েছে। যার ফলে ভাঙ্গন এলাকার দু’টি বাড়ির ৮ পরিবারের লোকজন খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নবোর্ড। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, হরিসভা এলাকার মধু বণিকের বাড়ির পেছনে প্রায় ২৫ মিটার বাঁধের পুরনো ব্লক তলিয়ে গেছে। এরপরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কার্যসহকারী হুমায়ুন কবির জানান, হরিসভা এলাকাটিতে পানির গভীর ও স্রোত বেশি। এছাড়াও বর্তমানে উজানের পানি নামার কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙ্গন মোকাবেলায় আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে।
×