ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উস্কানি সহ্য করা হবে না

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৮ জুলাই ২০২০

উস্কানি সহ্য করা হবে না

হংকং নিয়ে নাক না গলাতে ব্রিটেনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে চীন। বেজিং হংকং বিষয়ক নতুন আইন চালুর পর যুক্তরাজ্য হংকংয়ের ৩০ লাখ লোককে নাগরিকত্বের প্রস্তাব দিয়েছিল। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সোমবার ব্রিটেনে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ শিয়াওমিং বলেন, নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালুর পর যুক্তরাজ্য প্রতিনিয়ত নাক গলাচ্ছে। এ বিষয়ে চীন কোন উস্কানি সহ্য করবে না। তিনি বলেন, হংকং দ্বীপের ৩০ লাখ বাসিন্দাকে যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে নাগরিকত্বের যে প্রস্তাব দিয়েছে তা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘বড় ধরনের হস্তক্ষেপের’ শামিল। চীনের নতুন নিরাপত্তা আইনে হংকংয়ের ‘স্বাধীনতা’ ক্ষুণœ হয়েছে অভিযোগ করে এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের যুক্তরাজ্যের সাবেক উপনিবেশটি ছাড়ার সুযোগ দেয়া হবে বলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ঘোষণা করেন। এদিকে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী তরুণ নেতা জসুয়া ওং বিশ্বকে হংকংবাসীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। চীন আধা স্বায়ত্তশাসিত এই নগরে জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করার প্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক এ্যাক্টিভিস্ট জসুয়া ওং সোমবার এ কথা বলেন। গণতন্ত্রের পক্ষে প্রচার অব্যাহত রাখারও অঙ্গীকার করেন তিনি। হংকংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই তরুণ সোমবার আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। গত বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িত থাকার দায়ে আদালতে ওংসহ কয়েকজনের বিচার চলছে। চীন গত সপ্তাহে অশান্ত হংকংয়ে নিরাপত্তা আইন কার্যকর করে। এ আইনে নাশকতা, সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশী শক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু অনমনীয় ওং (২৩) বলেন, আমাদের বিশ্ববাসীকে জানানোর রয়েছে যে হংকংয়ের পাশে দাঁড়ানোর এখনই সময়। তিনি আরও বলেন, তারা হংকংবাসীর কণ্ঠ উপেক্ষা এবং নিস্তব্ধ করতে পারবে না। আমরা স্বাধীনতার লড়াই থামাব না। বেজিংয়ের কাছে আত্মসমর্পণও করব না। সজাগ থাকার এবং স্থানীয় সরকারসমূহের কাছ থেকে সর্বশেষ তথ্য জেনে নেয়ার জন্যও আহ্বান জানান তিনি। ব্রিটেনের প্রস্তাব অনুযায়ী, হংকংয়ে যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার বাসিন্দাসহ আরও ২৬ লাখ ‘উপযুক্ত’ বাসিন্দা যুক্তরাজ্যে গিয়ে পাঁচ বছর বাস করতে পারবেন। এর এক বছর পর তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদনও করতে পারবেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ বলেন, ‘চীন কখনও যুক্তরাজ্যসহ অন্য কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। যুক্তরাজ্যও সে নীতি মেনে চলবে বলে আমরা আশা করি।’ তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ভাল করেই জানে যে হংকং আর ঔপনিবেশিক শাসনে নেই। হংকংকে চীনের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এটি এখন চীনের অংশ। হংকং হস্তান্তর হয়ে যাওয়ার পর সেখানে যুক্তরাজ্যের আর কোন সার্বভৌমত্ব নেই এবং কোন প্রভাব খাটানো বা তদারকির অধিকারও নেই। ফলে যুক্তরাজ্য হংকংবাসীদের যে প্রস্তাব দিয়েছে তা আরেকবার ভেবে দেখবে এমনটিই আশা করেন বলে জানান লিউ। ‘হংকং নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার কাণ্ডজ্ঞানহীন সব মন্তব্য করছে’ বলেও লিউ সাংবাদিকদের কাছে দোষারোপ করেন। চীনের পার্লামেন্ট গত সপ্তাহে নতুন হংকং নিরাপত্তা আইন পাস করে। এ আইনের আওতায় হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ, কর্তৃপক্ষকে অবমাননা, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশী বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান করা হয়েছে। কিন্তু আইনটিকে হংকংয়ের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীনতার জন্য হুমকি এবং বৃহত্তর গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন ও ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন সমালোচকরা। এ আইন পাসের সমালোচনা করেছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো।
×