ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে শোক-শ্রদ্ধায় শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলায় নিহতদের স্মরণ

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ৭ জুলাই ২০২০

কিশোরগঞ্জে শোক-শ্রদ্ধায় শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলায় নিহতদের স্মরণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ ॥ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের দিনে জঙ্গী হামলার চার বছর অতিবাহিত হলেও সাক্ষ্যগ্রহণে আটকে আছে চূড়ান্ত বিচার কার্যক্রম। আজ মঙ্গলবার সকালে জঙ্গী হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলাম ও আনছারুল হক এবং স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিকের স্মৃতির প্রতি জেলা পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে। ঘটনাস্থল চরশোলাকিয়া সবুজবাগ মোড়ে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে ফুল দিয়ে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে পুলিশ সুপার জঙ্গী হামলায় নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদের খোঁজ খবর নেয়াসহ সহমর্মিতা প্রকাশ করে শুভেচ্ছা সামগ্রী প্রদান করেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) অনিবার্ণ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আনোয়ার (সদর সার্কেল), কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নিহতের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) সাংবাদিকদের বলেন, গুলশান এবং শোলাকিয়া হামলা একই সূত্রে গাঁথা। শোলাকিয়ায় লাখো মুসুল্লিদের স্থলে হামলা চালানো চেষ্টা করা হয়েছিল। এটি একটি ভয়াবহ ও জঘন্য হামলা। পুলিশ জীবন দিয়ে সে হামলা রুখে দিয়েছে। তিনি এ মামলায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানান। এ সময় তিনি আরও বলেন, এ হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত: ২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত ও জামাতের ইমাম মুফতি ফরিদ উদ্দিন মাসউদের ওপর হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জঙ্গীরা চাপাতি, বোমা এবং পিস্তল নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। জঙ্গীরা চাপাতি দিয়ে আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম নামে দু’জন কনস্টেবলকে কুপিয়ে হত্যা করে। খবর পেয়ে অন্য পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে তাদের প্রতিরোধ করলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কুমিল্লার সন্তান জঙ্গী আবির রহমান (২৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এছাড়া নিজ বাসায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঝর্ণা রাণী ভৌমিক (৪০) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়। এ সময় আহত হয় আরও আট পুলিশ সদস্য। বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অপর জঙ্গী দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকার শফিউল ইসলাম (২২) ধরা পড়ে। কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার জাহিদুল হক তানিম (২৬) নামে এক যুবকও আটক হয়। শফিউল পরবর্তী সময়ে এনকাউন্টারে মারা যায়। পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির অভিযোগপত্র ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে দাখিল করে। অভিযোগপত্রে মোট ২৪ জন আসামির নামাল্লেখ করা হলেও ১৯ জন আসামি দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। বর্তমানে মামলার বাকী ৫ জন আসামি কিশোরগঞ্জের জাহিদুল হক তানিম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, কুষ্টিয়ার আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, গাইবান্দার জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধি ও আনোয়ার হোসেন কারাগারে রয়েছে। অভিযোগপত্রে মামলার সাক্ষী হিসেবে ৭৩ জনের নামাল্লেখ করা হয়। আসামিদের মধ্যে কেউ কেউ শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলায় জড়িত থাকার ব্যাপারে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। এদিকে জঙ্গী হামলায় নিহত ঝর্ণা রানীর পরিবারের বিপর্যস্তভাব এখনও কাটেনি। ঝর্ণা রাণীর ছোট ছেলেটি এখনও মায়ের আদর স্নেহ খুঁজে ফেরে। নিহতের পরিবার ও স্বজনদের জোর দাবি দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এ হামলায় জড়িতদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার। নিহত ঝর্ণা রানীর স্বামী গৌরাঙ্গ নাথ ভৌমিক জানান, তিনি এখনো স্ত্রী হারানোর কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন। এমন যেনো আর কোনো স্বামীর ভাগ্যে না ঘটে। নিহত ঝর্ণা রানীর ছোট ছেলে শুভ নাথ ভৌমিক জানান, মায়ের কষ্ট তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কিশোরগঞ্জ জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক বলেন, করোনার কারণে মামলাটির কার্যক্রম আপাদত স্থগিত রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ মামলার আসামিদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।
×