ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সন্তানদের অপেক্ষায় রামেকের হিমঘরে এন্ড্রু কিশোর, সর্বত্র শোকের ছায়া

প্রকাশিত: ১৪:১০, ৭ জুলাই ২০২০

সন্তানদের অপেক্ষায় রামেকের হিমঘরে এন্ড্রু কিশোর, সর্বত্র শোকের ছায়া

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ দেশের প্লেব্যাক সম্রাট খ্যাত জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে আগামী ১৫ জুলাই রাজশাহীর শ্রীরামপুরে সমাধিস্ত করা হবে। এন্ড্রু কিশোরের ভগ্নিপতি ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলে সপ্তক আগামী ৯ জুলাই ও মেয়ে সঙ্গা আগামী ১৩ জুলাই দেশে ফিরবেন। তারা ফিরলেই ১৫ তারিখ সকাল ৯টায় চার্চে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বেলা ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার জন্য দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রাখা হবে। এরপর তাকে সেখান থেকে নিয়ে দুপুর দেড়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত রাজশাহী কলেজে সর্বস্তরের শ্রদ্ধার জন্য রাখা হবে। এরপর সেখান থেকে নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে তাকে রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুরে কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। এদিকে সুরের যাদুকর এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে রাজশাহীর সংস্কৃতি অঙ্গন ছাড়াও রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই সুর স্রষ্টার মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এছাড়াও রাজশাহীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রথিতযশা ব্যক্তিরা গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। বিশিষ্ট নাট্যকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর মলয় ভৌমিক বলেন, এন্ড্রু কিশোর আমার বন্ধু ছিলেন। ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে আমরা একসঙ্গে ১৯৭৮ সালে মাস্টার্স পাস করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে আমরা একইসঙ্গে অনুষ্ঠান করতে যেতাম। সে কোনো অনুষ্ঠানে গান গাইতে গেলে আমি সেখানে উপস্থাপনা করতাম। আমাদের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। অনেক সময় কোনো অনুষ্ঠানে গেলে উপস্থাপনা কে করছে সে জানতে চাইতেন। তখন উপস্থাপনার জন্য তিনি আমার নাম বলতেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বলেন, পৃথিবীতে যারা এসেছে সবাই একদিন চলে যাবে। এই সত্যটা আমাদের মানতে হয়। কিন্তু এই একজন মানুষ, যে চলে গেল সত্যিকার অর্থেই অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কারণ আমাদের দেশের গণমানুষের জন্য সঙ্গীতের যে চর্চাটা ছিল সেটা তার হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল। তার যা কণ্ঠ, তার যে ত্যাগ-তিতীক্ষা, সংগীতের সেটি কারো সঙ্গে তুলনা চলে না আমি মনে করি। তাই তার বিদায়ে আমাদের অতুলনীয় ও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এন্ড্রু কিশোর সংগীতের মধ্য দিয়ে লাখো-কোটি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছেন। তার মৃত্যুতে জাতি একজন মেধাবী সঙ্গীত ব্যক্তিত্বকে হারাল। এ শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। রাজশাহী থিয়েটারের সভাপতি কামারুল্লাহ সরকার বলেন, বছর তিনেক ধরে রাজশাহীতে এন্ড্রু কিশোর নিয়মিত সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করতেন এবং মাসে একটি করে অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতেন। এটা সবাইকে একত্রিত করার চমৎকার একটা উদ্যোগ ছিল। এই উদ্যোগটা আরও আগে হলে হয়ত রাজশাহীর মানুষ আরও বেশি উপকৃত হতো। রাজশাহীর নিক্বণ নৃত্যশিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক হাসিব পান্না বলেন, কিশোরদার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। তিনি আমার অনেক সিনিয়র। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ১৯৮০ সালে রাজশাহী মোটেল যখন উদ্বোধন হয় সে অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন কিশোরদা। তখন সামনে আমার এইচএসসি পরীক্ষা ছিলো। মজার ব্যাপার হলো কিশোরদা জানালেন যে নাচের ব্যবস্থা করতে হবে। এতো বড় অনুষ্ঠান। আমার বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ ছিলো। কিশোরদাকে বলেছিলোম গাড়ি নিয়ে বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। তারপর আমি বাড়ির দেয়াল টপকে বের হয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে তখন সরকারের একজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমার পারফর্মমেন্স দেখে পুরস্কার ঘোষণা করেন। সঙ্গীতশিল্পী আলমগীর হোসেন বলেন, তার মৃত্যু আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে হতাশ করেছে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোনের বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরে রাতে তার মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়।
×