ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারক চক্র সক্রিয়

করোনার ভুয়া পরীক্ষা ও জাল সনদের কারবার

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ৭ জুলাই ২০২০

করোনার ভুয়া পরীক্ষা ও জাল সনদের কারবার

শংকর কুমার দে ॥ করোনাভাইরাসের মহামারীকে পুঁজিকে করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। প্রতারক চক্রের সদস্যরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার ভুয়া পরীক্ষা ও জাল সনদের কারবার শুরু করেছে। সারাদেশে শতাধিক প্রতারক চক্রের সদস্য সক্রিয়-এমন তালিকা তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতারক চক্রের পুরো নাম, ঠিকানা, পরিচয় সংগ্রহ করে তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার আশকোনা থেকে প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করার পর তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে আদালতে। জবানবন্দীতে তারা প্রতারণার ফাঁদ পাতার বর্ণনা করেছে। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, প্রতিটি জাল সনদ দিয়ে ১০-১৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। করোনায় জাল সনদে দেয়া হচ্ছে করোনা নেগেটিভ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের প্যাডে দেয়া হচ্ছে নেগেটিভ রিপোর্টের ভুয়া সনদ। হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও ডাক্তারদের সম্পৃক্ততায় এসব অপকর্ম করছে জালিয়াতচক্র। এ চক্রের বেশি টার্গেট বিদেশ ফেরতরা। আবার অনেক শিক্ষিত লোকজনও তাদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এমন প্রতারণা বন্ধে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যা বের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতারকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ওই তালিকায় কিছু হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কতিপয় চিকিৎসকের নাম রয়েছে। কিছুদিন আগে চার প্রতারককে গ্রেফতার করার পর তারা জানিয়েছিল, সারা দেশেই তাদের লোকজন আছে। বিশেষ করে গ্রামের লোকজন ও বিদেশফেরতদের টার্গেট করা হয় বেশি। কিছু চিকিৎসক তাদের সহায়তা করছে। তারা হাসপাতাল থেকে দেয়া করোনা রোগীর রিপোর্টের কপি সংগ্রহ করে তা স্ক্যান করে সেখানে নাম বসিয়ে বিক্রি করে আসছিল। যাদের নেগেটিভ সনদ দরকার তাদের নেগেটিভ বা যাদের পজিটিভ সনদ দরকার তাদের তাই দিচ্ছিল টাকার বিনিময়ে। জালিয়াত চক্রটি দেড় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ১০-১৫ হাজার করে টাকা নিয়ে ভুয়া সনদ দিয়েছে। আরও শতাধিক লোককে ভুয়া সনদ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫ লাখের বেশি টাকা হাতিয়েছে চক্রটি এমন তথ্য পেয়েছে বলে র্যা ব কর্মকর্তার দাবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন মেডিক্যাল হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালের বহির্বিভাগের আশপাশে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তারা রোগীবেশে হাসপাতালগুলোতে গিয়ে দালালচক্র ও পেছনে থাকা হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছেন। সম্প্রতি একটি চক্রের চার সদস্য ফজল হক, শরিফ হোসেন, জামশেদ ও লিয়াকত আলী র্যা বের জালে আটকা পড়ে। তাদের কাছ থেকে করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ, দুটি কম্পিউটার, দুটি প্রিন্টার ও দুটি স্ক্যানার মেশিন উদ্ধার করা হয়। আটক হওয়া প্রতারক চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে নানা তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারকদের ধরতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতারক চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার আশকোনা থেকে বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুই প্রতিষ্ঠানের মালিক হুমায়ন কবীর, তানজিনা পাটোয়ারী, আরিফুল চৌধুরীসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গুলশান-২-এর কনফিডেন্স টাওয়ারে অভিযান চালানো হয়। এই চক্রের সদস্যরা জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নামের প্রতিষ্ঠানে বুথের মাধ্যমে করোনার নমুনা সংগ্রহের চাকরি করত। গত ১২ এপ্রিল তারা এ প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেয়। পরে তারা অনলাইনে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করে বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে নিজস্ব ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করে সনদ দেয়। তাদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের পর তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে।
×