ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের আগে বেতন-বোনাস

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ৭ জুলাই ২০২০

ঈদের আগে বেতন-বোনাস

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আজহা দুটোই বাঙালী মুসলমান, এমনকি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মীয় অন্যতম বড় উৎসব। তদুপরি বিশ্বায়নের যুগে ঈদ এমনকি ধর্ম-বর্ণ-ধনী-গরিব নির্বিশেষে পরিণত হয়েছে সর্বজনীন উৎসব। এ দুটো ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকা-ও চলে বিপুল ও বিশাল পরিমাণে। তবে ঈদ-উল-ফিতরের তুলনায় ঈদ-উল-আজহায় আর্থিক সম্পৃক্ততা ও অর্থনৈতিক কর্মকা- চলে আরও অনেক বেশি পরিমাণে। কেননা এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ও ওতপ্রোত জড়িত হজব্রত পালন ও পশু কোরবানি। এ দুটো ক্ষেত্রে বিপুল আর্থিক সংশ্লেষ জড়িত। তবে করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে সৌদি আরব সরকারের হজনীতি এবার সঙ্কুচিত হয়েছে সঙ্গত কারণেই। এবার কোন বিদেশী হজে যেতে পারবেন না। সে দেশে অবস্থানরত বড় জোর হাজারখানেক অধিবাসী হজ করতে পারবেন নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব ও সুরক্ষা বজায় রেখে। সে কারণে পশু কোরবানিও হবে সীমিত পরিমাণে। বাংলাদেশ সরকার কোরবানি নিয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কয়েকটি পশুর হাট বসার অনুমতি দিয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে দেশে গবাদিপশু তথা গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণসহ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিশাল একটি খামার শিল্প গড়ে উঠেছে। সরকার প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার থেকে পশু আমদানিও নিষিদ্ধ করেছে। তবু শেষ পর্যন্ত পশুর হাটগুলো কতটা জমে উঠবে এবং বেচাকেনা হবে সে বিষয়ে বিস্তর সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। দেশ লকডাউনে থাকা এবং মানুষের আয় কমে যাওয়ায় এবার ঈদ-উল-ফিতর তেমন জাঁকজমকভাবে অন্তত সর্বজনীন উৎসব হিসেবে পালিত হতে পারেনি। আসন্ন ঈদ-উল-আজহায়ও এর প্রভাব পড়বে কিনা তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি নির্ভর করবে করোনা সংক্রমণ ও নিয়ন্ত্রণের ওপর। তবু বাস্তবতা এই যে, ঈদের ছুটির আগে-পরে পোশাক শ্রমিকসহ প্রায় সব শিল্প-কারখানার শ্রমিক, চাকরিজীবী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি সচ্ছল মধ্যবিত্তসহ ধনীরাও যাবে গ্রামের বাড়িতে। এসব মানুষের যাতায়াতসহ সবরকম যানবাহন চলাচলে প্রবল যানজটসহ সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়বে। সে অবস্থায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে চলতে হবে অবশ্যই। এর পাশাপাশি শিল্প-কারখানার মালিকদেরও উচিত হবে ঈদের আগেই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস মিটিয়ে দেয়া, যাতে আদৌ কোথাও কোন শ্রমিক অসন্তোষ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা না দেয়। তা না হলে জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়বে, যা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। এর বাইরেও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে যানবাহন চলাচল ও জনস্রোতের ধারা কমাতে পোশাক খাত এবং অন্যান্য শিল্প খাতের ছুটি প্রদান আগে-পরে বাস্তবায়ন করার বিষয়টি মাথায় রাখা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মনে রাখতে হবে যে, ধর্মীয় অনুভূতির পাশাপাশি কোরবানি ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে অনেক মানুষের জীবন ও জীবিকা সংযুক্ত। আসন্ন ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে সর্বস্তরের মানুষের চাহিদা বেড়ে যাবে বহুগুণ। লাখ লাখ পোশাক শ্রমিকসহ কোটি কোটি শ্রমজীবীর বেতন-বোনাসের বিষয়টিও জড়িত ওতপ্রোতভাবে। এর জন্য সরকারী প্রণোদনার পাশাপাশি আবশ্যক বেসরকারী উদ্যোগও। সরকার পোশাক খাত, কৃষি, শিল্প সেক্টরসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তা সহায়ক হবে নিশ্চয়ই। তবে বহির্বিশ্বে পোশাক রফতানির চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। পোশাক শিল্প মালিকরা তা দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন নিশ্চয়ই। সেক্ষেত্রে শিল্প মালিকরা যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস মিটিয়ে দিলে সেটি হবে সবার জন্যই ইতিবাচক ও স্বস্তিদায়ক।
×