ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিকায়নের নামে পাটকল বন্ধ করা পাটখাতকে ধ্বংস করার শামিল : ওয়ার্কার্স পার্টি

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ৬ জুলাই ২০২০

আধুনিকায়নের নামে পাটকল বন্ধ করা পাটখাতকে ধ্বংস করার শামিল : ওয়ার্কার্স পার্টি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাট শিল্পের ভরাডুবির জন্য দায়ি বিজেএমসি নামক মাথাভারী প্রশাসন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা যারা পাট ক্রয়ে দুর্নীতি, মৌসুমে পাট সরবরাহে অনিয়ম, অসময়ে বেশিদামে পাট ক্রয় এবং উৎপাদিত পাট পন্য বিপননে ব্যর্থতা দেখিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটি বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ব সম্পদ পিপিপি’র নামে লুটপাটকারিদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে, পাটকলের পুরোনো মেশিনের বদলে উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক যন্ত্রাংশ স্থাপন করে এই শিল্পকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের বিদায়ের জন্য কথিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার গোল্ডেন হ্যান্ডশেক-এর পরিবর্তে এক হাজার ২০০ কোটি টাকায় পাটকলে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি সংযোজনের বিকল্প প্রস্তাব গ্রহন করে পাটশিল্প, পাটকল ও শ্রমিক রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন দলটির নেতারা। সোমবার পার্টির এক বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। পলিটব্যুরোর সভার প্রস্তাবে বলা হয়, পাটকল বন্ধ করে নয় রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রেখেই; পাটকলের পুরোনো মেশিন সরিয়ে আধুনিক ও উন্নত টেকসই প্রযুক্তি স্থাপন করে এই শিল্পের ঐতিহ্য ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের ৫০ লাখ কৃষক পাট চাষের সাথে যুক্ত, পাট ও পাট শিল্পের সাথে ৪ কোটি মানুষের জীবন জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের আন্দোলনের সঙ্গে পাট ও পাট শিল্প অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পাটকল বন্ধ হলে পাট সংশ্লিষ্ট মানুষের জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের প্রস্তাবে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে পাটকল শ্রমিক, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ নয়, চালু রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান হয়। পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা সভায় পাটশিল্প পরিস্থিতির রিপোর্ট তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশ নেন, শুশান্ত দাস, মাহমুদুল হাসান মানিক, কামরূল আহসান, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, হাজি বশিরুল আলম, এনামুল হক এমরান, নজরুল ইসলাম হাক্কানী প্রমুখ। প্রস্তাবে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালে পাটের পুনর্জাগরণের লক্ষে পাটকমিশন গঠন করেছিলেন, যার উৎসাহে পাটের জিনোম আবিস্কৃত হয়েছে; এখন এমন কি ঘটলো যার কারনে পাটকল বন্ধ করে দেয়ার এবং পাট অর্থনীতিকে বাতিলের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিতে হলো? প্রস্তাবে বলাহয়, পাট লোটপাটের দুর্নীতিকে আড়াল করে লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাটকলকে চিহ্নিত করে, দায় শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে সরকার এর সমাপ্তি টানতে চাইছেন; এটা ‘উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর কৌশল’ যা পুর্ববর্তি বিএনপি-জামাত সরকারের বিরাষ্ট্রিয় করণ নীতি কৌশলের অনুসরণ এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রনীত উদারিকরণ নীতির বাস্তবায়ন মাত্র। সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করার দায় শ্রমিকের নয় বরং যারা এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তাদের; অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারের হিসাব মতে বিগত ৪৪ বছরে পাটশিল্পে লোকসানের পরিমান ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; সেই হিসেব টাকার অংকে প্রতি বছর লোকশান হয়েছে ২৩৮ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা মাত্র। অথচ বিমান, রেল ও বিদ্যুৎ সহ অন্যান্য খাতে প্রতি বছর যে পরিমাণ ভুর্তুকিদেয়া হয় তার জবাব কে দেবে। এই কারনে সে সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে? বিদ্যুতের কুইক রেন্টালকে অলস বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা দেয়া হচ্ছে কার স্বার্থে। এ সকল ক্ষেত্রে অর্থের যে পরিমান অপচয় হচ্ছে সেই অর্থে পাটশিল্পে ৫০ বছরে লোকসানের পরিমান অনেক কম।
×