ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় শিক্ষার্থী শূন্য সবুজ মতিহারে নীরবেই ৬৮ তে পা রাখলো রাবি

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ৬ জুলাই ২০২০

করোনায় শিক্ষার্থী শূন্য সবুজ মতিহারে নীরবেই ৬৮ তে পা রাখলো রাবি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বিভাগীয় শহর রাজশাহীর বড় কুঠিতে মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়েই যাত্রা শুরু করা উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ উচ্চ বিদ্যা পিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কালের পরিক্রমায় ৬৮ বছরে পা দিল সোমবার। ১৯৫৩ সালের ৬ জুন দর্শন, ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, গণিত ও আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও, বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি অনুষদের অধীনে এখন ৫৯টি বিভাগ। কালের পরিক্রমায় উচ্চতর গবেষণার জন্য রয়েছে ৬টি ইনস্টিটিউট। বড় কুঠির সেই বিদ্যাপিঠটির আয়তন বেড়ে এখন ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টর। ১২৬০ জন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজারে। অর্থাৎ সেই ১৬১ শিক্ষার্থীর বিদ্যাপিঠে পদচারণা এখন ৩৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর। প্রতিষ্ঠার পর মতিহারের চত্তরে ক্রমেই বেড়েছে অবকাঠামো। ১২টি একাডেমিক ভবনসহ বর্তমানে রাবির ছাত্রদের থাকার জন্য আবাসিক হল রয়েছে মোট ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৬টি। ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। একই বছরের ৬ জুলাই ড. ইৎরাত হোসেন জুবেরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সময় পদ্মাপাড়ের বড়কুঠি ও রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬১ সালে বড় কুঠি থেকে নয়নাভিরাম মতিহারের এ সবুজ চত্বরে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার প্রাণের বিনিময়ে স্বাধিকার সংগ্রামের ইতিহাসে যুক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনরত ড. জোহা ছাত্রদের মিছিলকে সংযত রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি চেষ্টা করছিলেন তার ছাত্ররা যাতে পশ্চিমা শাসক চক্রের লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণের শিকার না হয়। কিন্তু তাদের বর্বর আক্রোশ মুহূর্তে বিদীর্ণ করে তার বুক। ড. জোহার মৃত্যুতে সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। প্রতিবাদে টলে উঠেছিল আইয়ুব খানের গদি, পতন হয়েছিল সেই স্বৈরশাসকের। তারই ফলে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির পথের একটি ধাপ পেরিয়ে এসেছিল মুক্তিকামী বাঙালি। সুদীর্ঘ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে ভাষা বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ আব্দুল করিম, তাত্ত্বিক ও সমালোচক বদরুদ্দীন উমর, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমের মতো প্রতিভাধরদের। নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়টি ৬৮ বছরে পদার্পণ করলো মহামারী করোনা সংকটের কারণে অনেকটা নীরবেই। পেছনে রয়েছে সোনালী অতীত। শহীদ ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতি বিজড়িত এ বিদ্যাপীঠের রয়েছে গৌরব-ঐতিহ্যের সুদীর্ঘ ইতিহাস। অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। এ কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্ট গ্রাজুয়েশন শ্রেণি চালু করা হলেও কিছুদিন পরেই সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তখনই রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ১৯৪৭ সালের দিকে রাজশাহীতে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। এজন্য ১৯৫০ সালের ১৫ নবেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয় ৬৪ সদস্যের একটি কমিটি। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা। পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়। এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়। এ আন্দোলনে একাত্ম হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখ্শ। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস হয়। এরপর শুরু হয় রাবির পথচলা। ১৯৫৩ সালে রোপণ করা বীজটি বতর্মানে বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর। সুদীর্ঘ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন, রাখছেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর বড় পরিসরে কোনো কর্মসূচি হাতে নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার সীমিত পরিসরে কর্মসূচি পালন করা হয়। করোনার কারণে শিক্ষার্থী শূন্য প্রায় ক্যাম্পাসে নীরবেই ৬৮ তে পার রাখলো বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানান, প্রতিবছরই আমরা নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করে থাকি। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে তেমন কোনো আয়োজন হলো না। দিবসটি উপলক্ষে সকালে পতাকা উত্তোলন এবং এরপর ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মধ্যেই এবারের কর্মসূচি পালিত হলো নীরবেই।
×