ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২৯০ জনকে দায়ী করেছে টাস্কফোর্স

মিটার না দেখে আর বিল করবে না বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি

প্রকাশিত: ২১:৫০, ৬ জুলাই ২০২০

মিটার না দেখে আর বিল করবে না বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রাহক হয়রানি রোধে মিটার না দেখে আর বিল করবে না বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি। যে কোন পরিস্থিতিতে মিটার দেখেই বিল করা হবে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত অতিরিক্ত বিল আসায় সমালোচনার মুখে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রবিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারাদেশে ৬১ হাজার ২৮৩ গ্রাহক অতিরিক্ত বিলের শিকার হয়েছে। এজন্য ২৯০ জনকে দায়ী করেছে বিদ্যুত বিভাগ গঠিত টাস্কফোর্স। যাদের মধ্যে কারো কারো বিরুদ্ধে এরই মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কোন কোন কর্মচারী-কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাও নোটিস দেয়া হয়েছে। উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে না পারলে এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বিতরণ কোম্পানির বিলের ওপর বিলম্ব মাসুল মওকুফের যে ঘোষণা ছিল তা আরও বেশি সময় বাড়ানো যায় কিনা, চিন্তা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বিদ্যুত সচিব ড. সুলতান আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত বিদ্যুত বিলের জন্য গ্রাহকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা সব সময়ই গ্রাহকবান্ধব। আমরা যে আস্থা হারিয়েছি আশা করছি তা শীঘ্রই পুনরুদ্ধার করতে পারব। ভাবষ্যতে বিতরণ কোম্পানিগুলো এ ধরনের সঙ্কট সমাধানে শতভাগ মিটার রিডিং নিয়ে বিল করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। সচিব বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করতে পারেনি। এজন্য এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে ৬০১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ বিদ্যুত কর্মী মারা গেছেন। এর পরও এখন যাতে আর কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয় এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে রিডিং নেয়া হচ্ছে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানাতে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলি এবং নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলামকে অনুরোধ করেন। দুই বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকই বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং নিয়েই তারা বিল করছেন। ভবিষ্যতেও যে কোন পরিস্থিতিতে মিটার দেখেই বিল করা হবে। বিদ্যুত সচিব বলেন, কোভিড-১৯’র জন্য আমাদের মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রিডিং নিতে না পারাতে এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। করোনার জন্য এখনও গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি যেতে সমস্যা হচ্ছে। তার পরও আমাদের মিটার রিডাররা এখন বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। ছয়টি বিতরণ সংস্থা এবং কোম্পানির যে ৬১ হাজার ২৮৩ গ্রাহকের অতিরিক্ত বিল এসেছে এদের মধ্যে- বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মোট গ্রাহক ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫ শ’ ১৫ জনের মধ্যে দুই হাজার ৫৮২ টি, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) মোট গ্রাহক দুই কোটি ৯০ লাখের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬৮১ টি, ডিপিডিসির ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬ শ’ ৮৯ গ্রাহকের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ টি, ডেসকোর ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৫৬৫৭ টি, নেসকোর ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩ শ’ ৭৮ জনের মধ্যে দুই হাজার ৫২৪টি, ওজোপাডিকো ১২ লাখ ১৩ হাজারের মধ্যে ৫৫৫ গ্রাহকের অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আরইবি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে তারা খুঁজে বের করছে কারা এর জন্য দায়ী। চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করার কাজ চলছে। আরইবি তাদের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। ডিপিডিসি অতিরিক্ত বিলের অভিযোগে ৩৬টি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে। চারজনকে সাময়িকভাবে বরখস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ১৩ মিটার রিডার এবং ডাটা এ্যান্ট্রি অপারেটরকে চুক্তিভিত্তিক কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নেসকো ২ মিটার রিডারকে বরখস্ত করেছে। একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করেছে। ওজোপাডিকো ২২৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে। যাদের কারণ দর্শানোর নেটিস দেয়া হয়েছে তাদের সকলের বিষয়ে তদন্ত হবে। কোন গাফিলতি পাওয়া গেলে চাকরিবিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, আমাদের কাছে ৪ হাজার ৩৩০টি বিলের অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু আমরা নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখেছি ১৫ হাজার গ্রাহকের অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। তাদের সকলের বিল সমন্বয় করা হয়েছে।
×