ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডঃ মিহির কুমার রায়

বিলুপ্তপ্রায় হাওড় সংস্কৃতি সংরক্ষণ জরুরী

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৬ জুলাই ২০২০

বিলুপ্তপ্রায় হাওড় সংস্কৃতি সংরক্ষণ জরুরী

বর্তমানে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়েছে এখন পর্যন্ত দেড় লাখেরও বেশি এবং মৃত্যুবরণ করেছে দেড় হাজারেরও বেশি, যা ক্রমাগতভাবেই বেড়ে চলছে। এই মহামারী রোগের কোন মেডিসিন এখন পর্যন্ত আবিষ্কার না হওয়ায় অনেক বিধিবিধান মেনে চলার কথা বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তার মধ্যে একটি হলো মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা, যার সঙ্গে সংস্কৃতির একটি যোগসূত্র রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, এই খাতটিতে খাতওয়ারী বাজেট বরাদ্দ অন্যের তুলনায় সর্বনিম্নে রয়েছে। অর্থাৎ, উন্নয়ন-অনুন্নয়ন মিলে এই খাতে বরাদ্দ (তিনটি খাত- মনোরঞ্জন, সংস্কৃতি ও ধর্ম) মোট বাজেটের মাত্র ০.৮ শতাংশ। সাম্প্রতিককালে হাওড় অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতি এখন বিলুপ্তপ্রায়। অথচ তা এক সময় ছিল প্রাণবন্ত, যার পরিচয় পাওয়া যায় গানে, নাটকে, চলচ্চিত্রে। বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ঘেটু পুত্র কমলা আমাদের আবার নতুন করে হাওড় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সেই ঘেটু গানের দল হাওড় অঞ্চলের একটি অতি পুরনো পালা গানের আসর ছিল। যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে একই সঙ্গে তলিয়ে যেতে বসেছে অন্যান্য পালা গান, যাত্রা পালা ইত্যাদি। এর একমাত্র কারণ অনাদর, অবহেলা ও আকাশ সংস্কৃতির ছোবল। এর মধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের বিলুপ্ত প্রায় সকল সংস্কৃতি স্থাপনা ও উপাদানগুলোকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। স্বল্প পরিসরে হলেও যা আমাদের ঐতিয্যকে বাঁচানোর আরও একটি প্রয়াস। বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানে হাওড় অঞ্চল এবং এর সংস্কৃতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এটি একটি বিচ্ছিন্ন দুর্গম অঞ্চল, যা দেশের সাতটি প্রশাসনিক জেলা ও ৫৭টি উপজেলার মধ্যে বিস্তৃত, যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ভাটি অঞ্চল। এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার বাহক হলো জমি আর পানি, যা তাদের জীবনের পথকে ভিন্নভাবে পরিচালিত করে। এই হাওড় অঞ্চল বছরের সাত থেকে আট মাস পানির নিচে থাকে বছরের বাকি চার মাস মোটামুটি আয়-রোজগারে সারাটি বছর চলতে হয় সে এলাকার বসতিদের। হাওড় মানুষের জীবন যাপন, পানির ঢেউয়ের সঙ্গে সংগ্রাম, হাওড়ের ঢেউয়ের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া জীবন শৈল্পিকতা, হাওড়ের সংস্কৃতি ও গান, বিচিত্র পেশা, মৎস্য সম্পদ, সোনার ফসল, জলে ভাসা দ্বীপ ছোট ছোট গ্রাম, ঢেউয়ের গর্জন, হিজল করচের বাগ, চাঁদনি উদযাপন প্রভৃতি বাঙালী জাতিসত্তার অংশ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাওড় সংস্কৃতির কালাকানন। আবার শত শত বছরের নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতির এক বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে হাওড় পাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প, আনন্দ-বেদনা ও জীবন যাপনের বর্ণিল উৎসব-আয়োজন। বছরের সিংহভাগ সময় যেহেতু জলবেষ্টিত এবং বিভিন্ন ধরনের নৌকা যেমন পানশি, বাজিতপুরি, ডিঙ্গি ইত্যাদি এই অঞ্চলের জনগণের যোগাযোগের বাহক, তাই নৌকায় পাল তুলে মাঝি ভাটিয়ালি সুরে গান গেয়ে যায় তার জীবন চলার পাথেয় হিসেবে। এখানে উল্লেখ্য বাউল, জারি-সারি, দেহতত্ত্ব, শরিয়তি, মারফতি, মরমী লোকগীতি, কবি গানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় গানের বিশাল সম্ভার এই হাওড় অঞ্চল। এই মাটিই জন্ম দিয়েছে মরমী গায়ক হাছন রাজা, দার্শনিক দেওয়ান আজরফ, বাউল স¤্রাট আবদুল করিম, রাধারমন, দুর্বিন শাহ, শেখ ভানু, রাম কানাই, উকিল মুন্সী মুনসুর বয়াতি, আব্দুল কুদ্দুস বয়াতি, সীতা লং, শাহ্ রশিদ উদ্দিন, জালাল খাঁ ও শাহ করীমসহ মনিষীগণ। উনিশ শতকের শেষ ও বিংশ শতকের প্রথমার্ধে এই সকল গানের ব্যাপক প্রচলন ছিল এবং প্রায় বাড়িতেই ছিল ঘেটু গানের দল, যেখানে ছেলেদের মেয়ে সাজিয়ে অভিনয়ে দাঁড় করানো হতো। আরও মজার ব্যাপার ছিল, যখন কোন দালানের ছাদে ঢালাই দেয়া হতো তখন ঘেটু গানের তালে তালে নৃত্য ও বাদ্য বাজিয়ে নির্মাণ কর্মীরা তাদের কাজ সম্পন্ন করত। অর্থাৎ নদীনালা, হাওড়-বাঁওড়, বিলঝিল বেষ্টিত হাওড় জনপদই ছিল এ সকল গানের মূল চারণ ভূমি। হাওড় অঞ্চলে অনেক উপজাতির বাস যেমনÑ মান্দি, হাজং, বানাই, কোচ, বর্মণ, খাসি, বিষ্ণুপ্রিয়া, মণিপুরী, লেঙ্গাম, চাবাগানী, ত্রিপুরী ইত্যাদি, যাদের প্রত্যেকের আলাদা একটি সত্তা ও সংস্কৃতিম-িত, যা ছিল খুবই সমৃদ্ধ। যা অনেকাংশে বিলীন হয়ে গেছে কেবল সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত লোকবিজ্ঞানী ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের ময়মনসিংহ গীতিকায় উত্তর-পূর্ব ময়মনসিংহ বিশেষত নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের অতি সমৃদ্ধ লোক সংস্কৃতির পরিচয় মেলে যার ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে অনেক নাটক, গান ও কবিতা। এই অঞ্চলের ধামাইল গীত কর্তাল বাজিয়ে নাচতে নাচতে মহিলারা হিন্দু বিবাহের অনুষ্ঠানে গেয়ে বেড়াত এবং ডক যাত্রার পালা নৌকা বিলাস, নিমাই সন্ন্যাস ইত্যাদি পালা গানগুলো নিত্যদিনের সাথী ছিল। ‘চাঁদনি রাতে যাইও তুমি ভাটির গাঙ্গে বাইয়া, বাটা ভরা পান দেব যাইও তুমি খাইয়া’-এই গানটি হাওড় অঞ্চলে একটি আদি গান হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের আবর্তে নৌকায় পালের পরিবর্তে এসেছে মেশিনচালিত জলযান। যার ফলে প্রাকৃতিক উপাদানে মহিমান্বিত বিষয়গুলো থেকে সমাজ দূরে চলে এসেছে অনেকখানি। হাওড় অঞ্চলের সমাজ জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাস অয়ময় ও পরিবর্তিতে এর সফল নাট্যরূপ আমাদের অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। বিশেষত ছোট মির্জার আবির্ভাবসহ সমাজ তথা সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিচ্ছবিতে। হাওড় অঞ্চলের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও অনেকটা গণমানুষের বাম ঘেঁষা চিন্তার বহির্প্রকাশ, যা সে অঞ্চলের মানুষের উদারতা, সরলতা, জ্ঞাননির্ভর, গান বাজনানির্ভর সংস্কৃতির পূর্বাভাস। ‘মাছ আর ধান হাওড়ের প্রাণ’ এই শ্লোকটি এক সময় হাওড়ের মানুষ গর্ব করে বলত। হাওড় যখন শুকিয়ে যায় তখন পানির সঙ্গে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ গিয়ে জমা হয় জলমহালে যা এক অপরূপ দৃশ্য। হাওড় পাখির জন্য অভয়ারণ্য এলাকা, যেখানে শীত মৌসুমে বিরল প্রজাতির অসংখ্য পাখির দেখা মেলে বন্ধ জলাশয়ে এবং বন কবচ হিজল বাগে। বর্ষায় হিজল তমাল করচ ও নলখাগড়া বুকে অবাধ হাওড়ের ঢেউয়ে জেগে ওঠে প্রেম খেলা, যা সাহিত্য-সংস্কৃতির এক অপার ভান্ডার। এগুলোর সংরক্ষণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নেই। হাওড় উন্নয়ন বোর্ড কেবল পানির ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে, কিন্তু মানবিক উন্নয়ন তথা সংস্কৃতির বিষয়গুলোর পুনরুদ্ধারে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান (অনেকটা বিরিশিরি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি-এর আদলে) প্রতিষ্ঠা করা এখন অনেকটা সময়ের দাবি। কারণ বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ও তার রচিত গান আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। এই গানগুলো প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার আওতায় আনা হলে হাওড়ের কৃষ্টি, সভ্যতা, জীবনচর্চা ও আদি বাঙালীর চিরায়ত সংস্কৃতির সংরক্ষণ চর্চায় বিকাশ ঘটাবে, যা দেশীয় সংস্কৃতির ভান্ডার পূরণে আরও একটি সংযোজন বলা যাবে। এতে করে এই পেশার সঙ্গে জড়িত শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীদের মর্যাদা বাড়বে এবং অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা হলে আয়ের পথ দেখবে। এই সম্ভাবনাগুলোর বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা সমীচীন হবে তা নিয়ে ভাবনার এটাই প্রকৃষ্ট সময়। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের বিগত চার দশকের পথ পরিক্রমায় বর্তমান রাষ্ট্রপতিসহ আরও দু’জন রাষ্ট্রপতি এই হাওড় অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন। তার অর্থ হলো দেশের জাতীয় রাজনীতিতে এই অঞ্চলের একটি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে, যা অনায়াসে কাজে লাগিয়ে হাওড় অঞ্চলের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। বর্তমান সরকার হাওড় উন্নয়নে বিশ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনার আওতায় সতেরোটি বিষয়ে একশ’ তেপ্পান্নটি প্রকল্পে মোট ২৭ হাজার ৯৬৩ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে, যা তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে, যার মধ্যে শিল্প-সংস্কৃতির খাতও রয়েছে। বর্ণিত অবস্থায় হাওড় সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য সরকারের বিবেচ্য বিষয় হতে পারে এক: হাওড় এলাকার হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য, জীবন, জীবিকার সংগ্রাম ইত্যাদির সংরক্ষণে একটি হাওড় মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা। এখনও হাওড় অঞ্চলে ঐতিহ্যের ধারক বাহক হিসেবে অনেক ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কালের সাক্ষী হয়ে আছে, যা মিডিয়ার বদৌলতে আমরা প্রায়ই অবলোকন করতে পারি। কিন্তু এগুলোর যে একটি প্রতœতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে যার সংরক্ষণ জরুরী, তা নিয়ে পরবর্তীতে আর কিছুই চোখে পড়ে না। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান হলেও পরবর্তীতে অনেক দিন যাবত আর দেখা যায় না। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর তাদের প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় হাওড় সংস্কৃতির রক্ষণাবেক্ষণে হাওড় কেন্দ্রিক মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে পারে। দ্বিতীয়ত: হাওড় অঞ্চল তুলনামূলক বিচারে সরকারের প্রাধিকারের তালিকায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো ইত্যাদির ক্ষেত্রে। সম্প্রতি বিগত তিন বছরের অধিক সময় ধরে হাওর এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তনগর ট্রেন এবং সম্প্রতি মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে আরও একটি আন্তনগর ট্রেন ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জ রুটে চালু করেছে, যাকে বলা যায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। মোহনগঞ্জকে বলা হয় হাওড় অঞ্চলের প্রবেশদ্বার, যার বৃহত্তর সিলেট জেলায় একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক রয়েছে, যার মধ্যে রেলওয়ে অন্যতম। পরে আসে জলপথ। একইভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রে অবহেলিত অঞ্চলে হাওড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একটি সময়ের দাবি, যার মাধ্যমে হাওড় শিল্প-সংস্কৃতির ওপর গবেষণা ও শিক্ষা জোরদার হবে, যা ঐতিহ্যগতভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ; তৃতীয়ত : ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে এক সেমিনারে মত প্রকাশ করা হয় যে, হাওড় এলাকার পিছিয়ে পড়া দরিদ্র ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সকল পর্যায়ে সমন্বয় প্রয়োজন, বিশেষত: বাস্তবায়নযোগ্য টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে। এরইমধ্যে পি.কে.এস.এফ হাওড় এলাকায় প্রায় চার হাজার খানা ‘সমৃদ্ধি’ কর্মসূচীর আওতায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও আয় উপার্জনের ওপর কার্যক্রম থাকলেও এলাকার সাংস্কৃতিক উপাদানের ওপর তেমন কিছু পাওয়া যায় না, যা এই কর্মসূচীগুলোর একটি দুর্বল দিক। বাংলাদেশে অঞ্চলভিত্তিক অনেক আঞ্চলিক গান যেমন গম্ভিরা, পট ইত্যাদি নিয়ে অনেক উন্নয়ন যোগাযোগের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশংসনীয়। এরই মধ্যে হাওড় অবকাঠামো ও জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং এসসিআরএমপি এর কার্যক্রম কয়েক ধাপে শেষ হয়েছে। এ সকল প্রকল্পের দলিলে আয় বর্ধনমূল ও জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক উপাদান থাকা বাঞ্ছনীয়, যা হাওড় অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় গান, পালা, ঘেটু ইত্যাদিসহ সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো আবার তাদের পুরনো হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পরে। এরই মধ্যে আবদুল কুদ্দুস বয়াতি নেত্রকোনা অঞ্চলের অনেক গান ও পালাকে মিডিয়ার মাধ্যমে সকলের কাছ নিয়ে আসতে পেরেছেন প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর বদৌলতে। এরকম আরও বয়াতি সঠিক পৃষ্টপোষকতা পেলে হাওর এলাকার সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো জনসম্মুখে নিয়ে আসতে পারে। চতুর্থত, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সিলেটে এক সপ্তাহব্যাপী সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, যা ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর। এই সম্মেলনে হাওড় এলাকার আঞ্চলিক গানগুলো আসর মাতিয়েছিল, যা সিলেটের মানুষের মনে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। এই ধরনের আয়োজন হাওড় সংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনে শুভবার্তা বয়ে এনেছে এবং এর গতিধারা ধরে রাখার জন্য সিলেটভিত্তিক সুশীল সমাজের ভূমিকা অগ্রগণ্য। লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি
×