ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধানচাষীর স্বার্থরক্ষায়-

প্রকাশিত: ২১:০৪, ৬ জুলাই ২০২০

ধানচাষীর স্বার্থরক্ষায়-

কৃষক-শ্রমিক-খেটে খাওয়া মানুষের কল্যাণে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখে চলেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার। জনকল্যাণকামী সরকারের অন্যতম বড় মানবিক কাজ ১০ টাকা কেজি দরে গরিবের বাড়িতে চাল পৌঁছে দেয়া। করোনা সঙ্কটের ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য একদিকে যেমন এক ইঞ্চি আবাদি জমি চাষশূন্য রাখার কোন সুযোগ নেই, তেমনি দেশের প্রধান খাদ্য উৎপাদক কৃষকদেরও ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা চাই। সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন। বিশেষ করে গত বছর ধান উৎপাদনকারী কৃষকদের বঞ্চনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার আন্তরিকভাবেই সচেষ্ট। খাদ্যনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএফপিআরআই-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর মিল মালিকরা কৃষকের কাছে থেকে প্রতি কেজি ১৪ টাকা দরে হাইব্রিড ধান ক্রয় করে ৩৬ টাকা কেজি দরে সেই ধানের চাল সরকারী গুদামে সরবরাহ করে সবচেয়ে বেশি লাভবান হন। আর কৃষক লাভ তো দূরের কথা, ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচও তুলতে পারেননি। মণপ্রতি লোকসান দেন ১০০ থেকে ২০০ টাকা। বাস্তবতা হলো অটোমিল মালিকেরা কৃষকের কাছ থেকে সাধারণত ধান ক্রয় করেন না। ফড়িয়া ও পাইকাররা কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। আর আড়তদাররা সেই ধান বিক্রি করেন মিল মালিকদের কাছে। অধিকাংশ সময় ট্যানারি মালিকদের মতো চালকল মালিকরা ধানের মূল্য নির্ধারণ করে আড়তদারদের জানিয়ে দেন। আড়তদাররা সেই মোতাবেক পাইকার ও ফড়িয়াদের নিকট থেকে ধান কেনেন। সরকার ধানের মূল্য যাই নির্ধারণ করুক না কেন, ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন ওই প্রভাবশালী মিল মালিকরা। সেই পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে। তারই ফলস্বরূপ কৃষি মন্ত্রণালয় খাদ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইফপ্রিকে বাংলাদেশ সরকারের বোরো ধান সংগ্রহের বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করে। সেই গবেষণার ফল সরকারের হাতে এসেছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন শনিবার প্রকাশিত হয় জনকণ্ঠে। প্রস্তাব অনুযায়ী সরকার যদি বেশি ধান ক্রয় করে তবে বাজারে ধানের দাম নিশ্চিতরূপেই বৃদ্ধি পাবে। সরকার ২০১৯ সালে যদি ধান-চাল সংগ্রহের পুরোটাই ‘ধান আকারে’ সংগ্রহ করত তাহলে ধানের বাজারমূল্য প্রায় ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেত। গবেষণাপত্র বলছে, বাজারে ধানের দাম প্রতিকেজি ২৬ টাকায় উন্নীত করতে হলে সরকারকে ৩০ লাখ টন ধান ক্রয় করতে হবে। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করলে কৃষকরা সেই ক্রয়মূল্য পাবেন। অন্যদিকে বিপুল পরিমাণে চাল সংগ্রহ করলে বাজারে চালের খুচরা দাম বেড়ে যেতে পারে। এতে যারা নিয়মিত চাল কিনে খান, বিশেষত শহরের দরিদ্র লোকজন, তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সুতরাং কৃষকদের মূল্য সহায়তা প্রদান করা এবং স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের জন্য খুচরা বাজারে সাশ্রয়ী মূল্য বজায় রাখা সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ। সরকারের এই ধান সংগ্রহ অভিযানে চালকল মালিকদের ভূমিকা হবে পুনরায় স্থানীয় সরবরাহ ডিপো (এলএসডি) থেকে ধান নিয়ে ওই ধান ভাঙ্গিয়ে চাল তৈরি করে পুনরায় এলএসডিতে সরবরাহ করা। এক্ষেত্রে চালকল মালিকরা পরিবহনের জন্য প্রতিটন হিসেবে ভাড়া ও মিলিং চার্জ হিসেবে নগদ অর্থ পাবেন। ধানচাষীদের স্বার্থরক্ষা করতে হলে প্রথমেই সরকারের ক্রয় ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর আবশ্যকতা রয়েছে। একই সঙ্গে বলা প্রয়োজন, সরকারের খাদ্য গুদামে খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। আর ৩০ লাখ টন ধান সংগ্রহ করলে, যা চাল আকারে দাঁড়াবে ২১ লাখ টন, তা বিদ্যমান গুদামে রাখা সম্ভব হবে না। তাই খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা বাড়ানো এবং নতুন খাদ্যগুদাম তৈরির কোন বিকল্প নেই।
×