ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে রিট ॥ যশোরে ৮টি বাওড় ইজারা স্থগিত

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ৫ জুলাই ২০২০

আদালতে রিট ॥ যশোরে ৮টি বাওড় ইজারা স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের আটটি বাওড়ের ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছে জেলা প্রশাসন। উচ্চ আদালত ইজারার আদেশ ত্রিশ দিনের জন্য স্থগিত ও স্থিতাবস্থা জারি করেছে। বাওড়গুলোর ইজারাদার মৎসজীবীরা উচ্চ আদালতে ভার্চুয়াল রিট আবেদন করলে বিচারক এ আদেশ দেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। এ আদেশের কপি যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করা হয়েছে। সূত্র জানায়, যশোরে ইফাদ প্রকল্পভুক্ত জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি বাওড় রয়েছে। এসব বাওড়ের লিজসহ দেখভাল করে জেলা প্রশাসকের দফতর। এমনই আটটি বাওড় হচ্ছে যশোর সদর উপজেলার হামিদপুর বাওড়, ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুর বাওড়, উজ্জলপুর বাওড়, মণিরামপুর উপজেলার খাটুরা বাওড়, খেদাপাড়া বাওড়, শার্শা উপজেলার রাজগঞ্জ বাওড়, বাহাদুরপুর বাওড় ও অভয়নগর উপজেলার পুড়াখালী বাওড়। এসব বাওড় মৎস্যজীবী সমিতির মাধ্যমে লিজ নিয়ে চাষাবাদ করছেন মৎস্যজীবী তপন বিশ্বাস, আদম আলী, নওশের আলী, আব্দুস সাত্তার, সদর আলী, নিমাই সরদার, ইদ্রিস আলী ও আব্দুর রহমান। লিজ গ্রহীতা মৎস্যজীবীরা জানান, ইফাদ প্রকল্পের অন্তর্গত এসব বাওড় তারা পঞ্চাশ বছরের চুক্তির আলোকে লিজ নিয়ে গত ৩০ বছর যাবৎ মৎস্য চাষ করে যাচ্ছেন। এরপর তাদের আরো দশ বছরের জন্য চুক্তি নবায়নের কথা থাকলেও তা করে দেয়া হয়নি। এরপর অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রশাসন নতুন করে ইজারা প্রদানের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। যা দেখে মৎস্যজীবীরা রীতিমত হতবাক হয়েছেন। তারা বার বার চুক্তি নবায়নের জন্য প্রশাসনের দফতরে গেলেও এ বিষয়ে কর্ণপাত করা হচ্ছে না। এ ঘটনায় মৎস্যজীবী পরিবারগুলো উপায়ান্ত না পেয়ে উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। যশোরের আটটি বাওড়ের সভাপতি ও সম্পাদকরা নতুন করে ইজারা বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ভার্চুয়াল রিট পিটিশন দাখিল করেছেন। যার নম্বর ০১/২০২০। এরই প্রেক্ষিতে গত ১ জুন উচ্চ আদালতের বিচারপতি এম ইনায়তুর রহিম আবেদনের শুনানি শেষে ওইসব বাওড় ইজারাদানের কার্যক্রম ৩০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। একইসাথে বাওড়ের দখল ও মালিকানা স্বত্বে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য নিদের্শনা প্রদান করেন। এ আদেশ গত ৩ জুন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ অফিসার ই-মেইলের মাধ্যমে যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠিয়ে দেন বলে ঝিকরগাছার কৃষ্ণচন্দ্রপুর বাওড়ের সভাপতি মৎস্যজীবী আদম আলী জানিয়েছেন। তিনি জানান, এ আদেশের পরও গত ১৮ জুন বাওড়গুলো ইজারার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বিষয়টি আবারও উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ২৯ জুন শুনানির তারিখ নির্ধারণ হয়। এদিনও শুনানিতে ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এছাড়া উচ্চ আদালতের রিটের নির্দেশনা বিষয়ে তারা একটি আবেদন গত ২৮ জুন জেলা প্রশাসকের দফতরে দাখিল করেছেন। যাতে উচ্চ আদালতের সকল সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। একইসাথে তারা বাওড়গুলো ফের তাদের নামে নবায়ন করে দিয়ে মাছ চাষাবাদের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিকরগাছার কৃষ্ণচন্দ্রপুর বাওড়ের সভাপতি আদম আলী বলেন, ইফাদ প্রকল্পের এ বাওড় তারা ৫০ বছরের লিজ নিয়ে গত ৩০ বছর যাবৎ ভোগ দখল ও মৎস্য চাষ করছেন। প্রতি ১০ বছর পরপর বাওড়ের এ লিজ নবায়ন করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এবারই তাদের লিজ নবায়ন করতে দেয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে এসব বাওড় খাস তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে গত ১ জুলাই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। এতে সার্বিক বিষয় শুনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানান, মৎস্যজীবীরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হন সে বিষয়টি তারা দেখবেন। কিন্তু তারা জানতে পেরেছেন ইজারা প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মৎস্যজীবী পরিবারগুলোর দিকে তাকিয়ে তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যকরী পদক্ষেপ দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব আসিফ মাহমুদ বলেন, বিগত দিনে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইফাদের সাথে ভূমি ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হয় প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে এসব বাওড় ৫০ বছরের লিজ দিতে হবে ও ১০ বছর পর পর নবায়ন হবে। কিন্তু ২০১১ সালে ইফাদ তার কার্যক্রম গুটিয়ে দেশ থেকে চলে যায়। এরপর একই বছরে জলমহালের নীতিমালা অনুযায়ী বিল বাওড়গুলো জেলা প্রশাসনের আওতায় চলে যায়। জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যশোরের আটটি বাওড়ের নতুন করে ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু মৎস্যজীবীরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করলে একমাসের জন্য ইজারার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ইজারা টেন্ডার প্রক্রিয়া একমাস স্থগিত করেছেন বলে তিনি জানান।
×