ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এন্টারপ্রাইজ হিসাবে নতুন ব্যবস্থাপনায় পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণের দাবি

প্রকাশিত: ২০:০২, ৪ জুলাই ২০২০

এন্টারপ্রাইজ হিসাবে নতুন ব্যবস্থাপনায় পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, পাটশিল্পকে লোকসানি খাতে পরিনত করার দায় শ্রমিকের না বরং যখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের। অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমুলকভাবে পাটশিল্পকে লোকসানি খাতে পরিনত করা হয়েছে। পাটকলগুলি বন্ধ করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে প্রতিটি পাটকারখানাকে একটি এন্টারপ্রাইজ হিসাবে পরিচালনার করার জন্য সরকার ও শ্রমিকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করার দাবি জানান নেতারা। শনিবার পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা কর্মসূচী ও বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, সিপিবি, কৃষক সমিতি সহ পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচী পালন করে। পাটশিল্পকে গলাটিপে মেরে সৎকারের পথ থেকে সরে আসুন : জাসদ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক বিবৃতিতে সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয়া এবং পিপিপির অধীনে পরিচালনার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে নিজ হাতে গলা টিপে পাটশিল্পকে মেরে ফেলা ও সৎকারের আয়োজন থেকে ফিরে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান। তারা বলেন, পাটশিল্পকে লোকসানি খাতে পরিনত করার দায় শ্রমিকের না বরং যখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের। অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমুলকভাবে পাটশিল্পকে লোকসানি খাতে পরিনত করা হয়েছে। পাটশিল্পের আধুনিকায়ন ও বহুমুখীকরণ না করে, পাট কেনায় যথাসময়ে টাকা বরাদ্দ না দিয়ে, পাটকেনায় দুর্নীতি ও চুরি বন্ধ না করে, কারখানাগুলি পরিচলনে দুর্নীতি ও চুরি বন্ধ না করে পাটশিল্পকে লোকসানি খাতে পরিনত করা হয়েছে। তারা বলেন, পাটশিল্পের লোকসানকে অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হিসাবে চিন্থিত করা হয়েছে। গত ৪৪ বছরে পাটশিল্পে পুঞ্জিভূত লোকসান ১০হাজার ৫০০ কোটি টাকাসহ ব্যাংক ঋণের পরিমান ৫০ হাজার কোট টাকা। কিন্ত বিমান বা বিদ্যুতের কুইক রেন্টালসহ বড় লোকসানি খাতে প্রতি বছর অর্থাৎ এক বছরে যে পরিমান লোকসান বা অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা পাটশিল্পের ৫০ বছরের পুঞ্জিভূত লোকসানের চাইতেও বেশি। ২৫ টি কারখানা মানে শুধুমাত্র ২৫হাজার শ্রমিকই পাটশিল্প মানে বিশাল পাট অর্থনীতি। এককোটি পাটচাষী থেকে শুরু করে চট উৎপাদনের মাঝখানে, অগ্র ও পশ্চাতে আরও এককোটি মানুষ পাটকেন্দ্রিক অর্থনীতি-জীবন-জীবিকার সাথে যুক্ত। তারা বলেন, আদমজী বন্ধ হবার পর সেখানে আধুনিক পাটকারখানা গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি, আদমজীর জমি শিল্পপ্লট করে আরে কারখানার সবকিছু স্ক্র্যাপ করে জমি আর স্ক্র্যাপের হরিলুট হয়েছে। তারা বলেন, সরকারের পিপিপির অধীনে পাটকলগুলি চালু করার সদিচ্ছাও আদমজীর মত হরিলুটের খেলায় হারিয়ে যাবে। তারা পাটকলগুলি বন্ধ করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে প্রতিটি পাটকারখানাকে একটি এন্টারপ্রাইজ হিসাবে পরিচালনার করার জন্য সরকার ও শ্রমিকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করার দাবি জানান। তারা বলেন, ২৫টি পাটকল বন্ধের জন্য যে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তা থেকে মাত্র ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ২৫টি পাটকল আধুনিকায়ন করে ২৫ হাজার শ্রমিককে মাসে ২৫ হাজার টাকা মজুরি দিয়ে লাভজনকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে যখন পাটের জেনম আবিস্কৃত হয়েছে, পাটের পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা চলছে তখন পাটকল বন্ধ করে দেয়া এবং পাট অর্থনীতিকে পরিত্যক্ত করার আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। পাটশিল্প ধ্বংসের সরকারি সিদ্ধান্ত মানি না : কৃষক সমিতি সামরিক শাসক জিয়া-এরশাদের বিরাষ্ট্রীয়করণের ধারায় ২৬টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল পিপিই’র নামে লুটেরাদের হাতে তুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি। শনিবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহীর চন্দনের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হোসেন খানের সঞ্চালনায় দুর-বন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন পাট, পাটশিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও অহংকার। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে পাটচাষী ও পাটকল শ্রমিকদের অবিস্মরণীয় অবদান দেশবাসীর অজানা নয়। সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে পাটকল শ্রমিকনেতা কমরেড তাজুলের আত্মদান গণতন্ত্রের সংগ্রামকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যায় এবং এর ধারাবাহিকতায় স্বৈরশাসকের পতন ঘটে এবং দেশে গণতন্ত্রের বিজয় হয়। পাটকল বন্ধ ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা : সিপিবি রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ পাটকলসমূহ বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে একে জাতি ও মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদদের প্রতি বিশ^াসঘাতকতা বলে আখ্যায়িত করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের প্রধান শিল্প পাটকলসমূহ রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা ছিল ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট্রের ২১-দফা ও ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সমাজের ১১-দফার অন্যতম অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। গত ৪০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকারসমূহ এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজীসহ সকল পাটকল বন্ধ বা বেসরকারিকরণ করে সে অঙ্গীকারকে পদদলিত করেছে। সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আহসান হাবীব লাবলু, রুহিন হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাদেকুর রহমান শামীম। সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি-জামাত সরকারের শিল্পমন্ত্রী রাজাকার নিজামীর হাত দিয়ে দেশের বৃহত্তম আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। আর আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বর্তমান আওয়ামী সরকার মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মন্ত্রীর হাত দিয়ে অবশিষ্ট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ বিশ^াসঘাতকতাপূর্ণ কাজের জন্য জাতি কখনও তাদের ক্ষমা করবে না। নেতৃবৃন্দ বলেন, পাটকল বন্ধ করে পাট চাষ ও পাট শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা না করে মাত্র এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আধুনিকায়ন করার মাধ্যমে দেশীয় পাট শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, সরকার যদি পাটকল বন্ধের মত গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে তাহলে জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থে এ সরকরকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোই হবে একমাত্র সমাধান। সভা শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। সিদ্ধান্ত পুঁজিপতিদের হাতে পাট শিল্পকে তুলে দেয়ার চক্রান্ত বাসদ (মার্কসবাদী) -এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, গত ৩ জুলাই বিনা নোটিসে অযৌক্তিকভাবে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে পাটকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান গুনে যাচ্ছিলো। সরকার আর লোকসান দিতে পারবে না। এবং এর দায় যথারীতি চাপানো হয় শ্রমিকদের ওপর। কিন্তু সত্য হলো, এর জন্য দায়ী সরকারের দুর্নীতি-ভুলনীতি, বিজেএমসি'র কর্মকর্তাদের অবাধ লুটপাট। সরকার পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের কথা বলে পাটকল বন্ধ ঘোষণা করলো। এর মূল কথা হলো জনগণের প্রতিষ্ঠান পাটশিল্পকে বেসরকারি পুঁজিপতিদের হাতে ছেড়ে দেয়া। এর মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পাটকলের সঙ্গে যুক্ত ৫২ হাজার শ্রমিক, তাদের পরিবার। এছাড়া উৎপাদন -বিপণনসহ পাট সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত ৪ কোটি মানুষ।
×