ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোনা আমদানি

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ৫ জুলাই ২০২০

সোনা আমদানি

দেশে বেসরকারী উদ্যোগে প্রথমবারের মতো সোনা আমদানি শুরু হয়েছে। ঢাকার ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার দুবাই থেকে বৈধপথে আমদানি করে ১১ কেজি সোনা। গত ৪৯ বছরের ইতিহাসে বৈধপথে সোনা আমদানির বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। উল্লেখ্য, দেশে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার সোনার বাজার, যা প্রধানত ব্যবহার হয়ে থাকে গহনা বা জুয়েলারি শিল্পে। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে এবং বহির্বিশ্বেও বটে সোনা, রূপা, প্লাটিনাম ও ডায়মন্ড একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অলঙ্কার, যা বিয়ে শাদিতে উপহার তথা যৌতুক হিসেবে আদান-প্রদান হয়ে থাকে। তদুপরি মার্কিন ডলারসহ দেশী-বিদেশী মুদ্রার মান যেহেতু হামেশাই ওঠা-নামা করে থাকে, তখন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনা, রূপার মজুদ গড়ে তোলা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম একেবারে তলানিতে ঠেকায় বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সোনার দামও বাড়ছে হু-হু করে। এই প্রেক্ষাপটে এবং করোনা মহামারীর দুর্দিনেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সোনা আমদানির বিষয়টি শক্তিশালী ও মজবুত অর্থনীতির ইঙ্গিত বহন করে বৈকি। তদুপরি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা সোনা আমদানি করে প্রধানত বিদেশে সোনার গহনা তথা জুয়েলারি সামগ্রী রফতানির উদ্যোগ নেবে। উল্লেখ্য, অবৈধ পথে সোনার লেনদেন ও চোরাচালান ঠেকাতে এবং রাজস্ব আহরণের অভিপ্রায়ে সরকার ২০১৮ সালে প্রথম দেশে বৈধভাবে সোনা আমদানির সুযোগ দেয়। প্রণয়ন করে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বর্ণ নীতিমালা। আয়োজন পরে স্বর্ণকর মেলা। তবে ভ্যাট বেশি হওয়ার কারণে জুয়েলারি সমিতির মালিকরা তাতে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। এবারের জাতীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী সোনা আমদানির ওপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করায় আমদানিতে উৎসাহিত হয় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডসহ কয়েকটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান। অতঃপর সঙ্গত কারণেই আশা করা যায় যে, এতে বৈধভাবে দেশে সোনা আমদানি বাড়বে, চোরাচালানসহ ভেজালের দৌরাত্ম্য কমবে, জুয়েলারি শিল্পের বিকাশ ঘটবে, সর্বোপরি সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। দেশে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বর্ণের গহনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সামাজিক ব্যবস্থা ও প্রথার অঙ্গ হিসেবে। যে কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় স্বর্ণ তথা গহনার দোকান। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ক্রমেই স্ফীত হতে থাকায় দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে। আজকাল সোনা, রুপার গহনার পাশাপাশি হীরা ও প্লাটিনামের গহনাও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অথচ দেশে বৈধভাবে আদৌ কোন স্বর্ণ আমদানি হয় না, হীরা ও প্লাটিনাম তো দূরের কথা। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মতে দেশে প্রতিবছর স্বর্ণের চাহিদা ৩০ থেকে ৪০ টন। যার প্রায় পুরোটাই এসে থাকে অবৈধ পথে ও উপায়ে। সামান্য কিছু আসে প্রবাসী শ্রমজীবীদের মাধ্যমে। কিছু স্বর্ণ আবার বাংলাদেশের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশেও পাচার হয়ে যায়। এতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে শাহজালালসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে স্বর্ণ অবৈধ পথে দেশে প্রবেশ করে গহনা তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন জুয়েলারি ও স্বর্ণের কারখানার মাধ্যমে। মাঝে-মধ্যে বিমানবন্দরে এবং বিভিন্ন নামী-দামী জুয়েলারির দোকানে হানা দিয়ে কিছু পরিমাণ স্বর্ণ আটক ও জব্দ করা হচ্ছে বটে, তবে বেশিরভাগই থেকে যাচ্ছে অধরা ও রাজস্ব আহরণের বাইরে। জুয়েলারি সমিতির দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন করে সরকার। বৈধপথে সোনা আমদানি স্বর্ণ চোরাচালান একেবারে বন্ধ করতে না পারলেও কমাতে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি ঘটতে পারে দেশীয় জুয়েলারি শিল্পের বিকাশ, যা হবে সরকারের রাজস্ব আহরণের অন্যতম সহায়ক।
×