ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

ডলারের রেকর্ড রিজার্ভ

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ৫ জুলাই ২০২০

ডলারের রেকর্ড রিজার্ভ

করোনাভাইরাস শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেই নাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে। চাকরি হারাতে পারেন মানুষ এমন ধারণা অনেকের। করোনাভাইরাস আতঙ্কে একের পর এক নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্টেডিয়ামের খেলা থেকে শুরু করে বড় বড় সব বৈশ্বিক আয়োজন। স্কুল, কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমে আসছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার কারণে লোকসানে পড়ছে বিশ্বের এয়ারলাইন্সগুলো। ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিনই ধস নামছে প্রধান সব শেয়ারবাজারগুলোতে। তাছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই চালিকাশক্তি রফতানি ও রেমিটেন্স। রফতানি আয় কমে গেলে দেশের শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের আয় কমে যাওয়া বা কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। অন্যদিকে প্রবাসীরা টাকা পাঠানো কমিয়ে দিলে তাদের পরিবার দেশে আগের মতো খরচ করতে পারবেন না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা বাণিজ্যে। কমে যাবে বেচাকেনা। চাহিদা কমে গেলে ভোক্তা পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এতসব খারাপ খবরের মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য আছে সুখবর। করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) প্রথমবারের মতো ৩৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন বৈধপথে রেমিটেন্স আসছে। এ ছাড়া আমদানি ব্যয়ের চাপ কম, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকার বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও বিশ্ব সংস্থার অনুদানের কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। এর আগে, গত ৩ জুন পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ রেকর্ড ৩৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। অর্থাৎ এক মাসে দুইবার রিজার্ভের রেকর্ড হলো। এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলার) রিজার্ভ অতিক্রম করেছিল। এরপর দীর্ঘদিন ৩১ থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করেছে রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) এক হাজার ৬৩৬ কোটি ৪৬ লাখ (১৬.৩৬৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা। আগের বছরের একই সময় পর্যন্ত এসেছিল এক হাজার ৫০৫ কোটি ডলার। এ হিসাবে মে পর্যন্ত রেমিটেন্স বেশি আছে ১৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল এক হাজার ৫০৫ কোটি ১০ লাখ (১৫ দশমিক ০৫ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার বা ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার পাঠান প্রবাসীরা। করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বকে অর্থনৈতিক সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের রেমিটেন্সে এর প্রভাব পড়েছে। অনেকের আশঙ্কা ছিল, আমদানি ও রফতানি আয়ের মতো রেমিটেন্সও তলানিতে নেমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
×