ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেনা সদস্যদের শরীরে প্রয়োগ করা হচ্ছে

করোনা মোকাবেলায় এখন নজর চীনা ভ্যাকসিনে

প্রকাশিত: ২২:১১, ৪ জুলাই ২০২০

করোনা মোকাবেলায় এখন নজর চীনা ভ্যাকসিনে

রশিদ মামুন ॥ চীনের আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ এর প্রথম অনুমোদিত ভ্যাকসিন (৬১৮৫.এইচকে) সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। তবে চীন এক্ষেত্রে এখনও খুব বেশি তথ্য জানায়নি। শুধুমাত্র ভ্যাকসিনটি চীনা সেনা সদস্যদের শরীরে প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। গত চার দিন ধরে বিশ্বের প্রথম অনুমোদিত ভ্যাকসিন হিসেবে (৬১৮৫.এইচকের) নাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। যদিও খুব বেশি নজর কাড়তে পারেনি এই খবর। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের যত ট্রাকার রয়েছে এরমধ্যে নিউইয়র্ক টাইমসকে সব চাইতে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ট্রাকারের ভ্যাকসিন অনুমোদনের ঘর এত দিন ফাঁকাই ছিল। তবে সেই ঘরে এখন একটি ভ্যাকসিন মানব শরীরে প্রয়োগের জন্য অনুমোদন পেয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে। সঙ্গত কারণে মনে করা হচ্ছে সভ্যতা রক্ষার প্রথম অনুমোদিত টিকা চলে এসেছে মানুষের হাতে। চীনের সেনাবাহিনীর গবেষণা ইউনিট এবং ক্যানসিনো বায়োলজিকস যৌথভাবে টিকাটি আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। এতদিন খুব জোর আলোচনা ছিল অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনই হবে করোনার প্রথম ভ্যাকসিন। এরপর ধারণা করা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানা বাজারে টিকা আনতে পারবে। ভ্যাকসিন দৌড়ে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের ভ্যাকসিনও আলোচনায় ছিল। বলা হচ্ছিল মর্ডানার কিছুটা আগে নয়তো এসই সঙ্গে সিনোভ্যাকের টিকা আসবে বাজারে। তবে অনেকটা আকস্মিকই ৬১৮৫.এইচকে এর অনুমোদন দেয়াতে চীনের সেনাবাহিনীর গবেষণা ইউনিট এবং ক্যানসিনো বায়োলজিকস চলে এসেছে আলোচনায়। ধারণা করা হচ্ছে চমক সৃষ্টি করার জন্যই চীন এই খবর চেপে রেখেছিল। আর এখন বাণিজ্যিক কারণে ভ্যাকসিনটির উৎপাদন এবং সরবরাহ নিয়ে কোন কথা বলছে না দেশটি। ইতোমধ্যে এ্যাস্ট্রাজেনেকা এর টিকা কেনার জন্য পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশগুলো চুক্তি পর্যন্ত করেছে। টিকা কেনার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলো। এর বাইরে মর্ডানার সঙ্গে ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করেছে ইসরাইল। তবে এর বাইরে আর কোন দেশ এখনও কোভিড-১৯ এর টিকা কেনার জন্য চুক্তির প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র তার মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান ভ্যাকসিন কিনছে এ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটি তৈরি এবং বাজারজাত করবে তারা। এ্যাস্ট্রাজেনেকা যৌথ অংশীদারিত্বে প্রতিষ্ঠিত এইটি বিশ্ব খ্যাত টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রথম চালানের এক বিলিয়ন টিকার এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩৩ কোটি কিনে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যাও ৩৩ কোটি ১০ লাখের কিছু বেশি। এর বাইরে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য সংখ্যা ৪৭ কোটি মানুষ প্রথমে এই টিকা পাবে। সব মিলিয়ে ইউরোপ এবং আমেরিকায় এক শ’ কোটি মানুষের বসবাস। এর বাইরে পৃথিবীতে আরও ৫৫০ কোটি মানুষ রয়েছে। যাদের দ্রুত টিকা পাওয়ার আকাক্সক্ষা রয়েছে। সেজন্য টিকার যে বাণিজ্যিক একটি দিক রয়েছে তা কেউ অস্বীকার করছে না। বিশ্বব্যাপী ক্রমান্বয়ে আরও জোরেশোরে সংক্রমিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধের এখনও একমাত্র উপায় চিন্তা করা হচ্ছে ভ্যাকসিনকেই। মনে করা হচ্ছে চীন টিকা আবিষ্কার এবং প্রয়োগের অনুমোদন দিয়ে সারা বিশ্বেই এক ধরনের চমক সৃষ্টি করেছে। এতে করে যে দেশগুলো এখনও টিকা পাওয়ার বিষয়ে খুব একটা কার্যকর কিছু করতে পারেনি তারা চীনের দিকে ঝুঁকবে। কারণ সারা বিশ্বের ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে বিশ্ব। সেখানে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে মানুষ কাজে বের হতে নিরাপদ বোধ করবে। ক্যানসিনো বায়োলজিকসের চেয়ারম্যান ইউ জিউফেং সম্প্রতি বলেছেন, তাদের আবিষ্কৃত (৬১৮৫.এইচকে) ভ্যাকসিনটি প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে রোগীদের মধ্যে উচ্চমাত্রার প্রতিরোধের ক্ষমতা দেখা যায়। তবে এটি বিস্তৃতভাবে বাজারে আনার এখনও অনুমোদন দেয়া হয়নি। অন্যদিকে চীন ৬১৮৫.এইচকে ভ্যাকসিনটির বাণিজ্যিক দিকটি স্পষ্ট করেনি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ভ্যাকসিনটির উৎপাদন এবং বাজারজাত করণের কোন ঘোষণা এখনও আসেনি। ফলে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। এছাড়া ভ্যাকসিনটি সফল হওয়ার যে দাবি করা হচ্ছে সেই দাবির স্বপক্ষে কোন তথ্য উপাত্তও প্রকাশ করা হয়নি। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিন অবশ্য বলছেন ভ্যাকসিন আবিষ্কার করলে চীন তা গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবে। তবে চীনের এই অনুমোদনের বিষয়ে এখনও তেমনভাবে মুখ খোলেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নিউইয়ার্ক টাইমস বলছে সারা বিশ্বে এখন ১২৫টি ভ্যাকসিন প্রিক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া ফেজ-(১) এ ১৪টি ফেজ-(২) এ ১১টি এবং ফেজ-(৩) এ রয়েছে তিনটি ভ্যাকসিন। এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের বা চূড়ান্ত পরীক্ষায় রয়েছে তিনটি ভ্যাকসিন। এর কার্যকারিতার রিপোর্ট হাতে এলে আরও তিনটি ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। তবে চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে ছাড়া এসব ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে এর মধ্যে গত ২৫ জুন চীন তাদের ভ্যাকসিন মানব শরীরে ব্যাপকভাবে প্রয়োগের অনুমোদন দিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
×