ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ॥ মৃত্যু ৪

প্রকাশিত: ২১:০১, ৩ জুলাই ২০২০

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ॥ মৃত্যু ৪

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরে যমুনা নদীর পানি অনেকটা কমে এলেও বন্যাকবলিত জেলার সাতটি উপজেলায় সাড়ে ৩ লাখের অধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। শুক্রবার ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম, ঝিনাই নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় জামালপুর সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। একদিনে বন্যার পানিতে ডুবে ও বন্যার পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। ফলে যমুনা তীরবর্তী দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও মেলান্দহের আংশিক এলাকায় নতুন কোন এলাকা প্লাবিত হয়নি। জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে গত কয়েক দিনের বন্যার পানিতে এসব উপজেলার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবং পানিবন্দি হয়ে পড়ায় বন্যার্তরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এসব এলাকায় নলকূপগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে বন্যাদুর্গতদের মাঝে সরকারী বরাদ্দের চাল ও নগদ অর্থ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও চাহিদার তুলায় এসব ত্রাণ খুবই অপ্রতুল বলে বন্যার্তরা অভিযোগ করেছেন। এদিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম, ঝিনাই নদীর পানি বাড়তে থাকায় জামালপুর সদর উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সদর উপজেলার মেষ্টা, কেন্দুয়া, লক্ষ্মীরচর, তুলসীরচর, ইটাইল ও রানাগাছা ইউনিয়নের আংশিক এলাকায় ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় এসব ইউনিয়নের নিঁচু এলাকায় আমনধানের বীজতলা, আউশ ধান, পাট ও ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত সম্পূর্ণরূপে পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকের বাড়িঘরে পানি না উঠলেও আবাদের পাট ও অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা খুবই দু:শ্চিন্তায় রয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় এ পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলায় পাট, রোপা আমনরে বীতলা, আউশ ধান, ভুট্টা, বাদাম, তিল, মরিচ, কলাবাগানসহ ১৩ হাজার ৩৪৩ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে আজ শুক্রবার জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের বেড়া গ্রামে পাট কাটতে গিয়ে বন্যার পানিতে ডুবে কমল মিয়া (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। একই উপজেলার আমলিতলা গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া সেচপাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে এখলাছ (২৫) ও আরিফ (২৪) নামের দুই যুবক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে হাসপাতালে নেয়া হলে তারা মারা যান। অপরদিকে জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার কাগমারী গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে শিশু জিসান (৩) নিখোঁজ হলে পরে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানায়, বন্যায় এ পর্যন্ত জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলার ৩১৯টি গ্রামের তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪২ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২২০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং পাঁচ হাজার ৯৮৭টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোয় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে এ পর্যন্ত নগদ ১১ লাখ টাকা ও ৪৩৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের বন্যায় জেলার বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে শিশুসহ নয়জন এবং সাপের কামড়ে মারা গেছেন একজন নারী।
×